রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহ আজমের বিরুদ্ধে খেয়ালখুশিমতো শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, প্রাপ্যতার অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহার ও ব্যক্তিগত ভ্রমণে টিএ/ডিএ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো অভিযোগে দেখা যায়, তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি বা বক্তা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানী উত্তোলনও করেন এবং গুচ্ছভর্তি (জিএসটি) পরীক্ষার ফি বাবদ আদায় হওয়া তিন কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলের পরিবর্তে ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে রেখে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। তবে এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন উপাচার্য শাহ আজম।

উপাচার্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অনুযায়ী, গত বছরের ১৮ মে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক পদে একটি শূন্য পদ উল্লেখ থাকলেও নিয়োগ দেওয়া হয় তিনজনকে। তারা হলেন শামসুদ্দিন সরকার, মোছা. ইসরাত জাহান ও এস এম আসরাফ হোসেন। তিনজনই রাজশাহীর বাসিন্দা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একইভাবে গত বছরের ১৮ জুলাই সংগীত বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রভাষক পদে একটি শূন্য পদের কথা উল্লেখ থাকলেও নিয়োগ দেওয়া হয় দু’জনকে। নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন বুলবুল আহমেদ ও তন্ময় কুমার পাল। তারাও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বাংলা বিভাগেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইবিএসের শিক্ষার্থী নূর-ই-নুসরাতকে। প্রতিটি নিয়োগেই আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে উপাচার্য সমকালকে বলেন, ‘কোনো পদে বাড়তি নিয়োগ হলে সেটি দেখবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। নিয়োগ বোর্ডগুলোতে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকের নিয়োগ ছিল। সেখানে সহকারী অধ্যাপক পদে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক। ফলে প্রভাষক পদ খালি হওয়ার পর সেখানে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাড়তি নিয়োগ হয়নি।’ শুধু রাজশাহীর লোকদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, ‘যারা যোগ্য, তারাই নিয়োগ পেয়েছেন। এলাকা বা বিশ্ববিদ্যালয়প্রীতির কোনো সুযোগ নেই। অন্য বিভাগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রার্থী নিয়োগ পেয়েছেন। সে বিষয়ে তো কেউ কথা বলছেন না?’

এদিকে, রেজিস্ট্রার মো. সোহরাব আলী তাঁর শেষ কর্মদিবসে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াই অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেন মো. রফিকুল ইসলামকে। একইভাবে বাবুর্চি পদে নিয়োগ দেওয়া হয় মো. রাজু আহমেদকে। তাদের বাড়িও রাজশাহী। উপাচার্যের নির্দেশেই রেজিস্ট্রার এই নিয়োগ দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রের অভিযোগ, পছন্দের প্রার্থীকে উপরেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দিতে উপাচার্য সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন; যা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৬-এর লঙ্ঘন। ওই আইনের ২৩(২)(১)(ঝ) ধারায় বলা আছে, ‘শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ ও তাহাদের দায়িত্ব ও চাকরির শর্তাবলি সিন্ডিকেট নির্ধারণ করবে।’

অভিযোগ রয়েছে, উপাচার্য হিসেবে যোগদানের সময় অধ্যাপক শাহ আজমের মোটা অঙ্কের ব্যক্তিগত ব্যাংক ঋণ ছিল। উপাচার্য হওয়ার পর স্বল্পসময়ে তিনি তা পরিশোধ করেন। এ ছাড়া গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার ফি বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে জমা না করে ব্যক্তিগত হিসাব নম্বরে জমা করেন। এ বিষয়ে উপাচার্য সমকালকে বলেন, ‘আমার নামে কোনো ব্যাংক ঋণ ছিল না।’
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি বছরের সংশোধিত বাজেট ও আগামী বছরের মূল বাজেট পর্যালোচনায় ইউজিসির একটি টিম গত ২২-২৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে কাগজপত্র পর্যালোচনা করে। টিমের নেতৃত্বে ছিলেন ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপপরিচালক (বাজেট) এমদাদুল হক। এই টিম বিল ভাউচার পরীক্ষা করে উপাচার্যের গাড়িতে সীমার অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহারের তথ্য পেয়েছে বলে অভিযোগে জানা যায়। সূত্রের অভিযোগ, গাড়িতে মাসে সর্বোচ্চ ২০০ লিটার জ্বালানি ব্যবহারের কথা থাকলেও উপাচার্য ৪০০ থেকে ৫০০ লিটার জ্বালানি ব্যবহার করেছেন। এ বিষয়ে ইউজিসি টিমের প্রধান মন্তব্য করতে রাজি হননি। ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্ধারিত সিলিংয়ের অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ নেই।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘নির্ধারিত সিলিংয়ের বেশি জ্বালানি ব্যবহার বিধিসম্মত নয়।’ বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি। উপাচার্য বলেছেন, তিনি এত বেশি জ্বালানি ব্যবহার করেননি।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে উপাচার্য পদে চার বছরের জন্য নিয়োগ পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহ আজম। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিক তাঁর ক্যাম্পাসে অবস্থান করার কথা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, তিনি মাসে অল্প কয়েক দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন। বাকি সময় দাপ্তরিক কাজের কথা বলে বাইরে থাকেন। অথবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যান। এসব ভ্রমণের জন্য তিনি টিএ/ডিএ নেন। তবে টিএ/ডিএসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান, সেমিনার ও কর্মশালায় অতিথি বা আলোচক হয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে সম্মানী গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করেন উপাচার্য।

তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদের জন্য বরাদ্দ গাড়িটি উপাচার্যের স্ত্রী ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। এর প্রতিবাদে আচার্যের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন কোষাধ্যক্ষ, যা গ্রহণ হয়নি। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে ‘মিটিংয়ে আছি’ বলে ফোন রেখে দেন কোষাধ্যক্ষ। তবে উপাচার্য সমকালকে বলেন, ‘কোষাধ্যক্ষ ব্যক্তিগত কারণেই পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন।’ উপাচার্য আরও বলেন, ‘একটি নবীন বিশ্ববিদ্যালয় ন্যায্যতার ভিত্তিতে পরিচালনা করতে একজন মানুষ হিসেবে যতটুকু করা সম্ভব, আমি সর্বোচ্চ দিয়ে সেটা করার চেষ্টা করছি।’

এদিকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত সচিব গত বুধবার সমকালকে বলেন, ‘নিয়োগ ও অন্যান্য বিষয়ে অনিয়ম হয়ে থাকলে ইউজিসি তা অবশ্যই দেখবে।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews