স্বাস্থ্য ডেস্ক, সময়ের কণ্ঠস্বর- সাম্প্রতিক সময়ে চিকুনগুনিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোয় প্রতিদিনই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন। খুব দ্রুত এই জ্বরের বিস্তার জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এই চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাস, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়।

চিকুনগুনিয়া জ্বর হলে পরবর্তীতে হাত পায়ের জয়েন্টে ব্যথা হয় এবং ফুলে যায়। কিন্তু অনেকে আবার ভুলভাবেও চিকিৎসা করার চেষ্টা করি, যেটা কাম্য নয়। তাই আসুন চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে সঠিকভাবে জানি। নিচে রেফারেন্স আছে , প্রয়োজনে যাচাই করি ।

চিকুনগুনিয়া জ্বর হলে পরবর্তীতে হাত পায়ের জয়েন্টে ব্যথা হয় এবং ফুলে যায়। কিন্তু অনেকে আবার ভুলভাবেও চিকিৎসা করার চেষ্টা করি, যেটা কাম্য নয়। তাই আসুন চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে সঠিকভাবে জানি। নিচে রেফারেন্স আছে , প্রয়োজনে যাচাই করি ।

চিকুনগুনিয়া কি?

চিকনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ, আরবোভাইরাস নামক ভাইরাস দ্বারা এটা হয়ে থাকে। তবে সব নষ্টের মুল এডিস মশা, এই মশাই আরবোভাইরাসকে একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে দেয়। এটা প্রথম সনাক্তকরন করা হয় তানজিনিয়ায় ১৯৫২-৫৩ সালে এবং এই সময় ডেঙ্গু থেকে এটাকে পৃথক করা হয়।

কিভাবে বুঝবেন চিকুনগুনিয়া হয়েছে?

আরবোভাইরাস বাহিত এডিশ মশা কামড় দেওয়ার থেকে ২-৪ দিনের মধ্যে এই রোগ আমাদের শরীরে দেখা যায়। আমাদের শরীরে এই সমস্যা দেখা দেওয়ার পর থেকে ৫ দিন পর্যন্ত এই ভাইরাস শরীরে থাকে। সাধারণত জ্বরের (৯২%) সাথে আর্থালজিয়া বা জয়েন্ট পেইন (৮৭%), কোমর ব্যথা (৬৭%) , মাথা ব্যথা (৬২% ) থাকে। এছাড়া র্যা শ, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া প্রভুতি হতে পারে । জ্বর সাধারনত সাধারনত ১০২-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট হতে পারে ।

পুরোপুরি সনাক্তকরনের জন্য কিছু ল্যাব টেস্ট করা যেতে পারে যেমন, ভাইরাস পৃথককরণ (Isolation of virus), পিসিআর (PCR), ডিটেকশন অব আইজিএম এন্টিবডি (Detection of IgM antibody) প্রভুতি ।

চিকনগুনিয়ায় ভাইরাস জ্বরে কেন ব্যথা হয়?

আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার জন্য এন্টিবডি বা ইমিনো সিস্টেম থাকে। ফলে শরীরে কোন ভাইরাস প্রবেশের ফলে এই ইমিনো সিস্টেম ভাইরাসকে শক্র হিসেবে আক্রমন করে। ইমিনোসিস্টেম শক্তিশালী হলে ভাইরাসকে পরাজিত করে আমরার সুস্থ হয়ে থাকি। এই সময় কিছু ব্যথা হতে পারে। কিন্তু চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে ইমিনো সিস্টেম আমাদের সুস্থ টিস্যুগুলোকেও শক্র ভেবে আক্রমন করে বসে। সেই জন্য বিভিন্ন জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হয়ে থাকে ।

চিকিৎসা কি?

১। এখন পর্যন্ত কোন ওষুধ আবিষ্কৃত হয় নাই এই রোগের ভাইরাসকে দমন করার জন্য ।
২। চিকিৎসা সম্পূর্নভাবে উপসর্গ অনুযায়ী ( Treatments are entirely symptomatic) । যেমন, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সাথে অন্যান্য এনা্লজেসিকও থাকতে পারে, ব্যথার জন্য ফিজিওথেরাপি ।

৩। এসপিরিন এবং স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ পরিহার করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । তবে অবশ্যই এই ব্যাপারে আপনার ফিজিশিয়ান কিংবা বিশেষজ্ঞ ফিজিশিয়ান
সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ।

৪! তবে কোনভাবেই গরম সেক বা গরম পানি ব্যবহার করবেন না।
৫! বরফ ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভাল । বরফকুচিকে কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে ব্যথার জায়গায় ১০-১৫ মিনিট ধরে রাখবেন। দিনে কয়েকবার করবেন ।
৬। আপনার ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় হালকা ব্যায়াম করবেন ।

বাড়িতে কিভাবে চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা নেবেন?

চিকুনগুনিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা বাড়িতে নেওয়াই উত্তম । আপনি যখন বুঝতে পারবেন আপনার জ্বর, খুব বেশি জয়েন্ট ব্যথা তখন ধরে নিতে পারেন আপনার চিকুনগুনিয়া, তবে উপরের লক্ষনের সাথে মিলিয়ে নিতে পারেন । যেহেতু এই রোগের নির্ধারিত কোন ওষুধ নেই সেহেতু বড় কোন সমস্যা দেখা না দিলে বাসায় বিশ্রাম নিতে পারেন । জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল এবং ব্যথার জন্য ফিজিওথেরাপি (বরফ এবং হালকা এক্সারসাইজ) করতে পারেন । তবে সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই একজন ফিজিশিয়ান এবং ফিজিওথেরাপিস্ট দেখাবেন ।

চিকুনগুনিয়া জনিত জয়েন্ট ব্যথায় কেন ফিজিওথেরাপি নিবেন ?

এই সমস্যাটা যেহেতু সাম্প্রতিক ইস্যু, সেহেতু এর জন্য খুব বেশি রিসার্চ এখনও হয় নাই । তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্যই চিকুনগুনিয়া জনিত জয়েন্ট ব্যথার অবশ্যই ফিজিওথেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন । বিশ্ব স্বাস্থ্যস্বংস্থার এক লিফলেটে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার কথা অনেবারই উঠে আসছে । জয়েন্ট ব্যথার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি অত্যান্ত কার্যকরী চিকিৎসা
এবং প্রমানিত।

মুলত চিকুনগুনিয়ার রোগী ব্যথার জন্য হাটাচলা করতে পারে না, দৈনিন্দিন কাজকর্ম ঠিকমত করতে পারে না। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে আবার একটিভ করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের এক্সারসাইজ (strengthening and targeting specific muscle exercise ) এর মাধ্যমে ব্যথার জয়েন্টে চাপ কম পড়ে। ফলে রোগী তার কাজে ফিরতে পারে।

সম্প্রতি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বাসায় গিয়ে চিকুনগুনিয়া জনিত ব্যথার রোগীদের বিনামুল্যে ফিজিওথেরাপি সেবা দেওয়া শুরু করছে। ব্যথার রোগীদের অনুরোধ করব আপনারা নির্ভয়ে তাদের কাছ থেকে ফিজিওথেরাপি নিতে পারেন। আশা করি ব্যথা থেকে দ্রুতই আরোগ্য পাবেন।

লেখক- ডাঃ সাইফুল ইসলাম,

পিটি কো-অর্ডিনেটর, ফিজিওথেরাপি সেন্টার, উত্তরা, ঢাকা।

শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি এসোসিয়েশন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews