১০ এপ্রিলকে প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণার দাবি

১০ এপ্রিলকে প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজন। পাশাপাশি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করতেও সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। তারা বলেন, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়। এদিনই ঘোষণা হয়েছিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী মুজিবনগর সরকার গঠনের সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ একটি রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে এ দিনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র: স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের সৃষ্টিতত্ত্ব’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রের ৫৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্ব সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি। 

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সাব-সেক্টর কমান্ডার ও মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের গার্ড অব অনার প্রদানকারী সাবেক এসপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এবং নির্মূল কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক শহীদসন্তান অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী। সভা সঞ্চালনা করেন শহীদসন্তান নাট্যজন আসিফ মুনীর তন্ময়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অনুষ্ঠানিক শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি বহু নামি সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষী হিসেবে ছিলেন হাজারও স্থানীয় মানুষ। সনাতন ধর্মাবলম্বী একজনের বাড়ি থেকে আনা হারমোনিয়ামে জাতীয় সংগীত পরিবেশন  করেন  ভবেরপাড়ার ছেলেরাই। গার্ড অব অনার  প্রদান করেন স্থানীয় আনসার ও পুলিশের সদস্যরা। আর এর নেতৃত্বে ছিলেন ঝিনাইদহের এসডিপিও মাহবুবউদ্দিন আহমেদ। এভাবেই সব ধর্মের মানুষের একত্রিত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে বঙ্গন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।

সাবেক এসপি মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে প্রবাসী বাঙালিদের নেতৃত্বে যতগুলো সাহসী পদক্ষেপ মুক্তিযুদ্ধের গতি সঞ্চারিত করেছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছিল, তার মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারের আত্মপ্রকাশ ছিল অন্যতম।

বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের জন্য বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন। যে চারটি চেতনা, যথা বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল কথা, তার সূত্রও ঘোষণাপত্রের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায়। যারা বলে এখানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা ছিল না, তারা ইচ্ছা করেই এর অপব্যাখ্যা করছেন। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ছাড়া অচিন্তনীয়।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, মুজিবনগর ঘোষণায় বাঙালি জাতির যে আত্মমর্যাদার কথা বলা হয়েছিল তৃপ্তিভরে তা আজ অপসৃত। একটি জাতির উন্নয়নের জন্য যে দিকনির্দেশনার প্রয়োজন তার সবই ছিল আমাদের শাসনতন্ত্রে। আজ ৫৩ বছর পর তা যুগোপযোগী নয় এমন কথা এখনও বলা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, মুজিবনগর ঘোষণা দিয়েছিল জাতির পক্ষে আওয়ামী লীগ। ১৯৭২ সালের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করেছিল জাতির পক্ষে আওয়ামী লীগ। এখন জাতির মর্যাদা জ্ঞাপক ১৯৭২ সালের শাসনতন্ত্রে আবার ফিরে যাব কিনা তাও নির্ধারণ করতে পারে আওয়ামী লীগ।

অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অবিলম্বে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান। 

সভাপতির বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মূল সংবিধান কার্যকর হওয়ার আগে পর্যন্ত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ই ছিল কার্যত বাংলাদেশের সংবিধান। যে কারণে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এই ঘোষণাপত্রকে বলা হয়েছে সংবিধানের ‘জেনেসিস’ বা সৃষ্টিতত্ত্ব।

তিনি ১০ এপ্রিলকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালনের পাশাপাশি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews