মোহাম্মদ হাসান শরীফ

নাম দিয়াগো গার্সিয়া। প্রবাল দ্বীপ। দেখতে পায়ের পাতার মতো। মনে হবে সাগরের ওপর দিয়ে কেউ হেঁটে যাওয়ায় ছাপ লেগে গেছে। অবস্থান ভারত মহাসাগরের মাঝখানে, পূর্ব আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার নাক বরাবর।

এ দ্বীপটিকেই বলা হয় ‘প্রাচ্যের গুয়ান্তানামো’। কিউবার সেই কুখ্যাত গুয়ান্তামো বে কারাগারের সাথে তুলনা করা হয় একে। গুয়ান্তানামোর মতোই এখানেও একটি কারাগার আছে। এ কারাগারও নিয়ন্ত্রণ করে মার্কিনিরা। সেই ১৯৬৬ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে দ্বীপটি ইজারা নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তখনই তারা সেটিকে বিশাল সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করে। তারপর থেকে ৪৮ বছর চলে গেছে। বলা হয়, সারা দুনিয়াই সাংবাদিকদের জন্য খোলা। কিন্তু এই একটি স্থান আছে, যেখানে প্রায় অর্ধশতক ধরে সাংবাদিকদের যাওয়া নিষিদ্ধ। দিয়াগো গার্সিয়া এমন গোপনীয়তায় মোড়া যে টাইম ম্যাগাজিনের এক নির্বাহী একবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন দ্বীপটি থেকে যে প্রথম প্রতিবেদনটি পাঠাতে পারবে, তাকে ‘এক বাক্স উৎকৃষ্টতম বর্দু (মদ)’ উপহার দেয়া হবে।


একজন অবশ্য সেখানে নেমেছিলেন। খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। জর্জ ডব্লিউ বুশকে বহনকারী প্রেসিডেন্টের বিমানটিতে তেল ভরার জন্য সেখানে থেমেছিল। কিন্তু তিনিও ওই মহামূল্যবান উপহারটি দাবি করেননি।


এমনকি স্থানীয় জনগোষ্ঠীরও সেখানে যাওয়ার অনুমতি নেই। আমেরিকানদের কাছে হস্তান্তরের পথ পরিষ্কার করার জন্য ৬০ ও ৭০-এর দশকে তাদের সেখান থেকে বিতাড়িত করা হয়। সেটাও একটা মানব ইতিহাসের একটা লজ্জাজনক ঘটনা। না, ততটা নৃশংস নয় পাশ্চাত্যের ‘সভ্য লোকেরা’। তারা বছরে একবার সেখানকার আদি বাসিন্দাদের ‘ঐতিহ্য পরিদর্শন’ করার সুযোগ দেয়, যদিও তাতে থাকে কঠোর বিধিনিষেধ।


ছাগোস আইল্যান্ডসেরই একটি দ্বীপ দিয়াগো গার্সিয়া। তার প্রবাসী প্রেসিডেন্ট অ্যালেন ভিনক্যাটাসিন কিন্তু এখনো স্বপ্ন দেখেন। তিনি এবং সেখান থেকে বিতাড়িত আরো অনেকে এখন ওয়েস্ট সাসেক্সের ক্রাউলি শহরে থাকেন।


তিনিও দিয়াগো গার্সিয়াকে নির্যাতনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার বিরোধী। তিনি ডেইলি মেইল প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের আবাসভূমিকে কেবল ভালো কাজের জন্য ব্যবহার করা উচিত, দ্বিতীয় গুয়ান্তানামো বে হিসেবে নয়।’


অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র সংবিধানে বর্ণিত উন্মুক্ততা এবং কথা বলার স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে যথেষ্ট কঠোরতার মধ্যে হলেও গুয়ান্তানামোতে সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফারদের প্রবেশের সুযোগ দেয়। কিন্তু দিয়াগো গার্সিয়ার কোনো প্রকাশ্য ফটো নেই, কেবল অনেক উঁচু দিয়ে যাওয়া বিমানের ছবি ছাড়া।


সাড়ে ৬০০-এর বেশি কংক্রিটের ভবনে পূর্ণ দিয়াগো গার্র্সিয়াকে আমেরিকানরা গোলকধাঁধায় ভরা একটা ছোট নগরীতে পরিণত করে ফেলেছে। এর কাঠামো অনেকটাই গুয়ান্তানামো বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।


এই ভয়াবহ সুন্দর ভুখণ্ডের কোন জিনিসটি তারা লুকাতে চায়? অথচ নির্মম পরিহাসের বিষয় হলো, মার্কিন নৌবাহিনী স্থানটির নতুন নামকরণ করেছে ‘ফুটপ্রিন্ট টু ফ্রিডম’। এই প্রশ্নের জবাব খোঁজা খুবই জরুরি। বিশেষ করে সিআইএর নির্যাতন নিয়ে মার্কিন সিনেটে একটি বিশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপিত হওয়ায় এই দ্বীপটির প্রসঙ্গও এসে যায়। অবশ্য ৫০০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে দ্বীপের কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু তবুও মনে হচ্ছে, এখানকার কথা গোপন করা হচ্ছে।


এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ প্রথম দিককার কথা এসে যায়। ওই সময়ে ব্রিটেনে ক্ষমতায় ছিল টনি ব্লেয়ার সরকার। ব্রিটিশ সরকার বেশ কৌশলের সাথে ওই সময়ে ব্রিটিশ ভূখণ্ড ব্যবহার করে বন্দীদের পারাপার এবং দিয়াগো গার্সিয়া এবং অন্যান্য প্রত্যন্ত এলাকায় বন্দী হস্তান্তর ও জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ করে দিয়েছিল।


দিয়াগো গার্সিয়াকে যে অন্যায় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সে সন্দেহ সেই ২০০৫ সালে উঠেছিল। ওই সময়ের ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্র দিয়াগো গার্সিয়াকে বন্দী স্থানান্তর বা নির্যাতনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, এটা স্রেফ ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বের’ অংশবিশেষ। এখন প্রমাণিত হচ্ছে, তিনি এবং তার মার্কিন প্রতিপক্ষ কন্ডালিৎসা রাইস মিথ্যা বলেছিলেন।


ওই ঘটনার দুই বছর পর প্রধানমন্ত্রিত্বের শেষ দিকে টনি ব্লেয়ার ঘোষণা করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনো কোনো বন্দী হস্তান্তরে ব্রিটিশ ভূখণ্ড ব্যবহার না করায় তিনি ‘সন্তুষ্ট’। তার বিদায়ের দুই বছর পর মানবাধিকার গ্র“পগুলো সন্দেহাতীত প্রমাণ উপস্থাপন করে যে, দিয়াগো গার্সিয়ায় কথিত সন্ত্রাসে জড়িত বন্দী হস্তান্তর হয়েছিল। ফলে ওই সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড মিলিব্যান্ড স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তার পূর্বসূরি জাতিকে বিভ্রান্ত করেছিল।


মিলিব্যান্ডের ভাষ্যমতে, ২০০২ সালে একজন করে বন্দী নিয়ে দু’টি বিমান সেখানে থেমেছিল। স্ট্র সেটাকে ‘প্রশাসনিক ভ্রান্তি’ হিসেবে যে উল্লেখ করেছিলেন, তা ছিল ভুল। আর ব্লেয়ার? তার ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি। অন্য দিকে আরো অনেক বিমানের সেখানে যাতায়াতের খবর এখন পাওয়া গেছে।


নির্যাতনবিষয়ক সাবেক জাতিসঙ্ঘ বিশেষজ্ঞ ম্যানফ্রেড নওয়াকও দাবি করেছেন, দ্বীপটিতে বন্দীদের আটক রাখার ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ আছে তার কাছে। আর সুইস সিনেটর ডিক মার্টি বলেছেন, সিআইএর এক সূত্র তাকে ব্রিটিশ দ্বীপটি তাদের ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন। ডিক মার্টি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকালে ইউরোপিয়ান ভূখণ্ড ও আকাশ সিআইএর নির্যাতনের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে কি না তা তদন্তকারী ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন।


আর যাদের সেখানে আটক রাখা হয়েছিল, তাদের কথাও শুনতে হয়। এটা ঠিক যে, তাদের পক্ষে স্থানটি নির্ধারণ করা কষ্টকর। যেসব ‘অন্ধ কুঠুরীতে’ তাদের নির্মম সব পন্থায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো, তারা যাতে সেখানকার কথা বলতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের নিয়ে যাওয়ার সময় এক দিকে তাদের চোখ বাঁধা থাকত, সেই সাথে কানে পরানো হতো সাউন্ডপ্র“ফ সরঞ্জাম।
কিন্তু তারপরও কোনো কোনো বন্দী ভুতুড়ে কারা-জাহাজের পাটাতনের নিচে অবস্থানকালে দিয়াগো গার্সিয়ার কোনো স্থানে নোঙর করার বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন।


তথাকথিত ‘আমেরিকান তালেবান’ জন ওয়াকার লিন্ধের কাছ থেকেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইসলামে ধর্মান্তরিত জনকে ২০০১ সালে আফগানিস্তান থেকে আটক করা হয়। তাকে দিয়াগো গার্সিয়ার নৌঘাঁটিতে থাকা ইউএসএস বাতানে আটক রাখা হয়েছিল। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু হওয়ার সামান্য আগে ওই দ্বীপে মোতায়েন এবং ২০০৪ সালে ব্যাপকভাবে সংস্কার করা ইউএসএস স্টকহোমেও তাকে আটক রাখা হয়েছিল। তাহলে কি ধরা যায়, এই দু’টি জাহাজও মার্কিন অন্ধ প্রকোষ্ঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল?


তারপর আসে আবদেল হাকিম বেলহাজির উদ্বেগ সৃষ্টিকারী ঘটনাটি। টনি ব্লেয়ারের সাথে লিবিয়ার সাবেক শাসক কর্নেল মোয়াম্মার গাদ্দাফির কুখ্যাত ‘ডিল ইন দ্য ডেজার্ট’-এর পর তাকে লিবিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।


এই বেলহাজিকেও দিয়াগো গার্সিয়ায় নির্যাতন করা হয়েছিল। তিনি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ যে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, সেটা ইংরেজদের জন্য শোচনীয় লজ্জা বয়ে আনতে পারে।


দিয়াগো গার্সিয়াকে নির্যাতনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে সেখানে বিমান ওঠা-নামার লগবুক।
তবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে খোঁড়া অজুহাত দাঁড় করিয়েছে, তাতে সন্দেহ বরং আরো বেড়েছে। যে সময়টাতে বন্দীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল, ওই সময়কার নথিপত্র নষ্ট হয়ে গেছে বলে দাবি করছে তারা। তাদের ভাষ্য, চলতি বছরের জুনে যে ভবনে নথিপত্র রাখা ছিল, তাতে ফাটল ধরে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছিল।


পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন দাবির পেছনে নোংরা কিছুর গন্ধ টের পেয়ে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা রিপ্রাইভ আবহাওয়ার রিপোর্ট সংগ্রহ করে দেখে যে, এবার ওই সময়টা অস্বাভাবিক শুষ্ক ছিল। সংস্থাটির আইনবিষয়ক পরিচালক করি গ্রিডার এটাকে ‘কুকুর আমার হোমওয়ার্ক খেয়ে ফেলেছে’ মর্মে প্রচলিত কাহিনীর নতুন সংস্করণ হিসেবে অভিহিত করেছেন।


এসব ঘটনা যখন ফাঁস হচ্ছে, তা ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের কাছেই গোদের ওপর বিষফোঁড়া বিবেচিত হচ্ছে। ব্রিটেনের কাছ থেকে দ্বীপটি ৫০ বছরের জন্য লিজ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রকে এ জন্য ব্রিটেনের কাছে পলারিস পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা বিক্রি থেকে পাওয়া ১৩ মিলিয়ন ডলার দিতে হয়েছিল। ২০১৬ সালে ওই লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।


তবে চুক্তিতে দু’টি ফাঁক রাখা হয়েছে। তা হলো দুই দেশ লিজের মেয়াদ আরো ২০ বছর বাড়ানো নিয়ে আলোচনা করবে, কিংবা ফিরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার একটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বর্তমান ব্রিটিশ সরকার সম্ভবত চায়, আমেরিকানরা সেখানে থেকে যাক।
বিরোধী লেবার পার্টি এখনো তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি। তবে তাদের নেতা ডেভিড মিলিব্যান্ড যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখন কোনোভাবেই চাইতেন না যে দ্বীপটির আদিবাসী জনগোষ্ঠী যাতে পূর্বপুরুষদের ভিটায় ফিরতে পারে। আর এ কারণেই তিনি আয়তনে ফ্রান্সের সমান দ্বীপটিকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছেন। সেই সাথে তিনি দ্বীপটির আশপাশে বাণিজ্যিক মাছ ধরাও নিষিদ্ধ করেছেন। এর ফলে দ্বীপবাসী ফিরে এলেও তাদের মূল জীবিকা থেকে বঞ্চিত হবে।


তবে ছাগোস আইল্যান্ডসের অধিবাসীরা কিন্তু বাপ-দাদার ভিটায় ফিরতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা তাদের অর্ধশতাব্দীকালের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটাতে চায়।


তাদেরকে যে নৃশংস পন্থায় সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা সাধারণ মানুষের দৃষ্টির আড়ালে থাকায় তেমন হইচই হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, সেটা সাম্প্রতিক ব্রিটিশ ইতিহাসের আরেকটি লজ্জাজনক ঘটনা হতে পারে। এসব লোকের একটি অংশকে নেয়া হয়েছিল আফ্রিকা থেকে ক্রীতদাস হিসেবে, ১৯ শতকের শেষ দিকে। তাদেরকে নারকেল বাগানে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। আরেকটি গ্র“প এসেছিল ভারতবর্ষ থেকে। তারা বাগান মালিকদের চাকর-বাকর হিসেবে কাজ করত। তারা ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে এলেও দ্বীপের প্রতি তাদের আনুগত্যের কোনো ঘাটতি নেই, এটাকেই তারা তাদের দেশ হিসেবে জানে। তাদের নাড়ি এখানেই পোঁতা রয়েছে।


তবে দ্বীপটি হস্তান্তর করার আগে সেখানে বাস করতে থাকা ওই দুই হাজার লোককে উচ্ছেদ করতে যুক্তরাষ্ট্র কেন পীড়াপীড়ি করেছিল, তা এখনো জানা যায়নি। সম্ভবত সামরিক ঘাঁটি বানানোর জন্য সেখানকার অধিবাসীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, সেটা বিশ্ব টের পেলে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র আগেভাগেই তাদের সরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিল।


এসব লোক যে এই দ্বীপেই জন্মেছে, তাদের বাড়িঘরগুলো দীর্ঘ দিনের এবং তাদের অনেকে জীবনে একবারের জন্যও এই দ্বীপ ত্যাগ করেনিÑ এই সত্য বেমালুম চেপে ব্রিটিশ ও আমেরিকানরা তাদেরকে স্রেফ ‘ট্রানজিট শ্রমিক’ হিসেবে ঘোষণা করে। তাদের এই পরিচিতি দেয়ার বলে আইনগতভাবে ধরে নেয়া হয় যে, তারা সত্যিকার অর্থে কোনোকালেই সেখানে বাস করেনি। উচ্ছেদের ঘটনাটি শুরু ১৯৬৮ সালে। তারপর দ্বীপটিকে ‘বন্ধ’ ঘোষণা করা হয়, তাদের ফেরার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়।


১৯৭১ সাল নাগাদ নৃশংসভাবে বাকি অধিবাসীদের নৌকায় করে শত শত মাইল দূরে মরিশাস বা সিসেলেস দ্বীপে পাঠানো হয়। তাদের পোষা কুকুরগুলোকে আমেরিকানরা গ্যাস দিয়ে মেরে ফেলে।


অ্যালেন ভিনকেটাসিনের বয়স এখন ৪৪ বছর। তাকে তাদের কংক্রিটের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের সময় তার বয়স ছিল মাত্র এক বছর। আরো অনেক পরিবারের মতো তারটিও ওই অভিযানে গুঁড়িয়ে যায়। তার মা ও বাবা তখনো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি, তারা তখনো ছিলেন কিশোর-কিশোরী (দিয়াগো গার্সিয়া দ্বীপে খুব অল্প বয়সে সন্তান লাভ ছিল অতি সাধারণ ঘটনা)। উচ্ছেদের সময় তাদেরকে আলাদা আলাদা দ্বীপে নির্বাসিত করা হয়।


অ্যালেন ছিলেন তার দাদা-দাদীর সাথে মরিশাসে। সেখানে তাদেরকে কর্দপশূন্য অবস্থায় ছুড়ে ফেলা হয়েছিল। দেহে যে পোশাকটা ছিল সেটাই ছিল সম্বল। অ্যালেন তার মাকে আবার দেখতে পেয়েছিলেন ১৭ বছর পর।


অ্যালেন দীর্ঘ আইনি যুদ্ধের পর কোনো একটি স্থানে দলবদ্ধভাবে বাস করার অধিকার লাভ করেন। ২০০২ সালে প্রথম গ্র“পটি গ্যাটউইকে অবতরণ করে। সেখান থেকে নিকটতম শহর ক্রাউলি হওয়ায় তারা বিমানবন্দরে কয়েকটা দিন কাটিয়ে সেখানেই বাড়ি নির্মাণ করেন। তারপর আরো কয়েক শ’ লোক তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সেখানে তাদের সাথে যোগ দেয়। ওই শহরে তাদের মোট জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার।


তারা এখনো নারকেল বাগানঘেরা তাদের বাড়িঘরে ফিরতে আগ্রহী। এমনকি তাদের নেতা হিসেবে অ্যালেন জানিয়েছেন, আমেরিকান ঘাঁটিতে কাজ করার জন্য ফিলিপাইন থেকে আনা লোকদের বাদ দিয়ে তাদের নিয়োগ করা হলে তারা খুশিমনেই তা মেনে নেবেন।
কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলে আসছে, দিয়াগো গার্সিয়ায় যাদের আটক করা হয়েছে, তারা আসলে ৯/১১-এর কোনো বন্দী নয়, তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকারি। এই দাবি সত্য হতেও পারে, না-ও হতে পারে।


এই দাবি গ্রহণযোগ্য হতে পারে, যদি দিয়াগো গার্সিয়াকে যে গোপনীয়তার আবরণে ঢেকে রাখা হয়েছে, তা ছিঁড়ে ফেলা হয়। যতদিন অন্ধকার থাকবে, যতদিন নিষেধাজ্ঞার বেড়া থাকবে, ততদিন প্রত্যন্ত এই স্বর্গটিকে ঘিরে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক থেকেই থাকবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews