২০২২ সালের শেষ দিকে ওপেনএআই তাদের নিজস্ব এআই মডেলের ভিত্তিতে প্রথম চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি উন্মোচন করে, যা জনসাধারণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির এক নতুন যুগের সূচনা করে। এরপর থেকে চ্যাটজিপিটি ও অন্যান্য এআই মডেল দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ক্লান্তিকর ও পুনরাবৃত্তিমূলক কাজের ক্ষেত্রে। শিক্ষার্থীদের গবেষণাপত্র লেখা থেকে শুরু করে কোম্পানির অফিসিয়াল ডকুমেন্ট তৈরির কাজ পর্যন্ত, অনেক ক্ষেত্রেই এআই এখন একটি কার্যকর সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

তবে এই সুবিধার আড়ালে দেখা দিয়েছে এক নতুন আশঙ্কা। এআই-এর উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা মানব লেখার দক্ষতার অবক্ষয় ঘটাতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল থিওরি ল্যাবের পরিচালক লেইফ ওয়েদারবাই দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, লেখার দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকির চেয়ে অধিকতর উদ্বেগের বিষয় হলো গাণিতিক বিশ্লেষণ ও কোডিংয়ের মতো জটিল কাজেও মানুষ এআই-এর উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

ওয়েদারবাই জানান, তার একজন ছাত্র, যিনি একসময় নিজে কোড লিখে বৈজ্ঞানিক তথ্য বিশ্লেষণ করতেন, তিনিও এখন চ্যাটজিপিটি-এর মাধ্যমে কোড তৈরি ও ডেটা বিশ্লেষণ করছেন, নিজে না বুঝেই ফলাফল ব্যবহার করছেন। এই প্রবণতা ব্যক্তিগত দক্ষতা হ্রাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

এআই প্রকৌশলী আন্দ্রেজ কার্পাথি ‘ভাইব কোডিং’ নামক একটি পদ্ধতির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে কোড লেখার পরীক্ষা চালান। তবে দেখা গেছে, এই পদ্ধতিতে লেখা কোডে ত্রুটি থাকে এবং প্রোগ্রামাররা স্বাভাবিকভাবে কোড লেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন। এমনকি কার্পাথি নিজেও স্বীকার করেছেন যে তিনি আগের মতো স্বাভাবিকভাবে কোড লিখতে পারছেন না।

বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও এ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। গুগল এবং মাইক্রোসফ্ট জানিয়েছে, তাদের কোডের ২৫ শতাংশের বেশি এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে লেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে, এই কোম্পানিগুলো এবং অ্যামাজন ও ওপেনএআই হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। ওপেনএআই তো ৩ বিলিয়ন ডলারে উইন্ডসার্ভ নামক একটি এআই-কোড লেখার সংস্থাকে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে, যার উদ্দেশ্য হলো মানব প্রোগ্রামারদের উপর নির্ভরতা কমানো।

শ্রম বাজার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এখন এন্ট্রি-লেভেল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। নিয়োগের হার পূর্বের দৈনিক হাজার থেকে নেমে এসেছে শূন্যে। এ প্রবণতা একদিকে যেমন মানব শ্রমের অবমূল্যায়ন ঘটাচ্ছে, অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও এই ক্ষেত্রে সঙ্কটে পড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরক্ষরতার সংজ্ঞা এখন পরিবর্তনের পথে। অতীতে যাকে বলা হতো পড়তে-লিখতে না পারা, এখন সেই সংজ্ঞা বিস্তৃত হয়ে দাঁড়াচ্ছে সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতার অভাবে। অতিরিক্ত এআই নির্ভরতার ফলে অনেকেই গাণিতিক ধারণা প্রয়োগ, বিশ্লেষণ ও তথ্য লেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। গবেষণাগুলোর ভাষ্য, এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ভবিষ্যতের সমাজ একটি ‘গাণিতিকভাবে নিরক্ষর’ সমাজে পরিণত হতে পারে।

সূত্র : আল জাজিরা



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews