নার্সের সংকট ও পেশাগত মান
২৬ মে, ২০১৮ ইং
বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় নার্সের সংখ্যা এখনো কম। দেশের চিকিত্সা ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করিবার ক্ষেত্রে ইহা একটি বড় বাধা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরই স্বীকার করিতেছে যে, দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে আরো অন্তত ২ লক্ষ ৮০ হাজার নার্স প্রয়োজন। গত বত্সরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের নিবন্ধিত বিএসসি ও ডিপ্লোমা নার্সের সংখ্যা ৫৪ হাজার ২৩৪ জন। সেই হিসাবে বাংলাদেশে নার্সের ঘাটতি রহিয়াছে প্রয়োজনের তুলনায় ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী চিকিত্সক ও নার্সের সংখ্যার দিক হইতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অনুপাত ১:৩ হিসাবেই এই ঘাটতি নির্ণয় করা হইয়াছে। বাংলাদেশে এই অনুপাত ১:০.৫৬। চিকিত্সকরা বলিতেছেন যে, ডাক্তারের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি নার্স প্রয়োজন। সেই হিসাবে আসলে আমাদের এখনও তিন লক্ষ চিকিত্সক ও ১৫ লক্ষ নার্স প্রয়োজন।
সমপ্রতি ভারতে চিকিত্সা লইতে যাওয়া এক হাজার ২৮২ জন রোগীর ওপর এক গবেষণা চালানো হয়। তাহাতে দেখা যায়, রোগীরা বাংলাদেশের নার্সদের দক্ষতার অভাব রহিয়াছে বলিয়া অভিমত দিয়াছেন। থাইল্যান্ডগামী বাংলাদেশি রোগীদের ওপর চালানো আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, রোগীরা নার্সদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দিবার অভিযোগ করিয়াছেন। অর্থাত্ নার্সদের সেবার মান নিয়া সন্দেহ ও প্রশ্ন থাকায় অনেকে বিদেশে চিকিত্সা গ্রহণ করিতে যাইতেছেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ‘বেসরকারি চিকিত্সা ব্যবস্থা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনেও বলা হইয়াছে যে, নার্সরা ভালো ব্যবহার করেন না—এমন অভিযোগ করিয়াছেন ৩৩ শতাংশ রোগী। ইহার মূল কারণও একই অর্থাত্ নার্স সংকট। কেননা জনবল সংকট থাকিবার কারণে একজন নার্সকে তুলনামূলক অনেক রোগী সামলাইতে হয়। অনেক সময় রোগীর তুলনায় আয়া বা অ্যাটেনডেন্টদের সঙ্গেই নার্সদের বেশি কথা বলিতে হয়। ফলে সব মিলাইয়া অনেক সময় নার্সদের মেজাজ থাকে খিটমিটে।
আমরা যদি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলির সহিত তুলনা করি, তাহলেও আমাদের দেশে নার্সের ঘাটতির কথা স্বীকার না করিয়া কোনো উপায় থাকে না। প্রতি ১০ হাজার মানুষের বিপরীতে চিকিত্সক, নার্স ও মিডওয়াইফের সংখ্যা ভারতে ২৪ দশমিক ১ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৩০ দশমিক ৫, পাকিস্তান ও ভুটানে ১৪ দশমিক ৬, নেপালে ৬ দশমিক ৭ আর বাংলাদেশে ৬ দশমিক শূন্য ৬ (সূত্র : ডব্লিউএইচও)। সুতরাং নার্সের এই ঘাটতি যথাসম্ভব কমাইয়া আনা অতীব প্রয়োজন। সরকার গত বত্সর ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়াছে এবং আরো চার হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। উপর্যুক্ত ঘাটতি কমাইয়া আনিতে হইলে এই নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া অবশ্যই অব্যাহত রাখিতে হইবে। নার্সের সহিত রোগীর সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা, সম্মান ও বন্ধুত্বের। রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে তাহাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অতএব, প্রয়োজনীয় নার্স নিয়োগে আমাদের আরো আন্তরিক ও সচেষ্ট হইতে হইবে।