বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বিতর্কিত চরিত্রের নাম নায়লা নাঈম। দুটি বিজ্ঞাপন নিয়ে বেশ সমালোচনা শুরু হয়েছে তাকে নিয়ে। সর্বশেষ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের হস্তক্ষেপে ক্রিকেটার সাব্বির রহমানের সঙ্গে করা তার বিজ্ঞাপনটির প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে স্তন ক্যান্সার নিয়ে একটি প্রচারমূলক ভিডিও নিয়ে শোরগোল পড়েছিল। তবে বিতর্ক, সমালোচনা যা-ই থাকুক না কেন, সাহসিকতা দিয়েই মিডিয়ায় টিকে রয়েছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। সব প্রতিবন্ধকতা জয় করেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তার পথচলা নিয়ে কথা বলেছেন।
সাক্ষাৎকারে মিডিয়ায় নিজের সাহসিকতা প্রসঙ্গে বলেন, না, আমি কোনো সাহসিকতা দিয়ে টিকে নেই, এটা ভুল ধারণা। আমি যা করছি, অন্য অনেকেই তা করছে। এমনকি আমার চেয়েও বেশি কিছু করছে। তারা হয়তো চোখে পড়ে না, আমি পড়ি। বাংলাদেশে ন্যুড ফটোগ্রাফি হাজার হাজার হচ্ছে, কে কার খোঁজ রাখে।
মিডিয়ায় কাজ করতে গিয়ে ‘নারী’ শব্দটি দ্বারা কতটা প্রভাবিত হয়েছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নারী-পুরুষ এমন কোনো শব্দেই আমি বিশ্বাসী নই। নারী-পুরুষ হিসেবে কাউকে আলাদা করামাত্রই তো সমস্যার শুরু। আমাদের তো আর আলাদা করার দরকার নেই। মানুষ পরিচয়ে কাজ করলেই হয়।
তিনি আরও বলেন, সংস্কৃতি, সমাজ দ্বারা ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রভাবিত হয়, এটা সবখানে সবসময়ই হয়। সেক্ষেত্রে যতটা সম্ভব নিজেদের সঙ্গে যায়, সেটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই কাজ করি। তবে এটাও ঠিক, আমাদের মতো দেশে কাজের পরিসরটাই কম, স্বাধীনতা তো পরের ব্যাপার।
পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুনিয়ার সবখানেই এমনটা আছে। সেটা পুরুষালি দৃষ্টিভঙ্গি, বর্ণবাদী আচরণ, যেটাই বলি না কেন। এসব চিন্তা বন্ধ করলেই তো সব ঠিক হয়ে যায়।
একটা ভিডিও ক্লিপে আপনাকে খুবই রাগান্বিত অবস্থায় দেখা গেছে, কারো দিকে হয়তো তেড়ে গিয়েছিলেন, ঘটনাটা বলবেন কি?
উত্তরে তিনি বলেন, ওটা আসলে স্তন ক্যানসার নিয়ে আমাদের যে ক্যাম্পেইন, সেটারই অংশ। ওটা ছিল পরিকল্পিত।
বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে এগুলোকে বলে গেরিলা অ্যাড। পান্ডা সিকিউরিটি অ্যান্টিভাইরাস, এলজি টিভির একটা বিজ্ঞাপন, যেটা এ বছর কমিউনিকেশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে, সেগুলোসহ আরো কিছু গেরিলা অ্যাড এর আগে করেছি। এগুলো আসলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য তৈরি করা। টিভিসির সঙ্গে এই মেকিংয়ের তুলনা চলে না।
পুরনো অভিযোগ, বিজ্ঞাপনে নারীর শরীরকেই বেশি ফোকাসে রাখা হয়—
আমার প্রশ্ন, যখন কেউ বিজ্ঞাপন দেখে তখন নারীর শরীর দেখে নাকি বিজ্ঞাপন দেখে? এটা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার, দর্শক কী অথবা কাকে দেখবে। অনেক দর্শক আছেন, যারা আবেদনময়ী কিছু একটা দেখতে চান। মূলত তার ওই দুর্বল জায়গাটিকে ব্যবহার করেই তাকে বার্তাটি দেয়া হয়।
স্তন ক্যান্সারে সচেতনতায় আপনার যে বিজ্ঞাপন, সেটির উপস্থাপনশৈলী নিয়ে বিতর্ক উঠেছে, এখানে আপনার কী অবস্থান?
উপস্থাপনার ঢঙয়ে কখনো সমস্যা হতেই পারে। সব তো আর আমার হাতে না। আমার কাছে মনে হয়েছে, হ্যাঁ এটিকে আরেকটু রিজার্ভ ওয়েতে উপস্থাপন করা যেত।
নায়লা নাঈম নামটি নিয়ে নানা কথা শোনা যায়, বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?
একটা কথা সবসময় বলি, নিন্দুকেরাই প্রকৃত বন্ধু। নিন্দুকেরা আমাকে গালি দিতেই পারে। এখন কথা হচ্ছে তারা আমার ছবি দেখছে বলেই কিন্তু কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। আমার প্রতি সবার আগ্রহ আছে বলেই তো আমাকে সবাই গুগল টপ ১০ বানিয়েছে। বলিউডের অভিনেত্রী সানি লিওনও একটা কথা বলেছে, ‘তুমি আমাকে ঘৃণা, প্রত্যাখ্যান করতে পারো, কিন্তু দিন শেষে তো আমাকেই দেখছো।’ এজন্যই হয়তো সানি লিওন তার দেশ থেকে গুগল সার্চে আর আমি আমার দেশ থেকে সেরা হয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা, কাউকে বাধ্য করি না, আমাকে দেখো।
এমন কোনো বিষয় আছে, যেখানে সানি লিওন ও আপনার মধ্যে মিল আছে?
সানি লিওনের অন্য একটি পরিচয় ছিল। সেখান থেকে তিনি বলিউডের নায়িকা হয়েছেন। তারপরও ভারতে সানি লিওন বিতর্কের মুখোমুখি হন। তার সঙ্গে আমার কোনো মিল নেই। তবে হ্যাঁ, সব মিলিয়ে সানি লিওন তার মতো কন্ট্রোভার্সি ফেস করছে আর আমি আমার মতো। হয়তো এ কারণেই বিতর্ক আমার পিছু ছাড়ে না।
অভিনয়, মডেলিংয়ে আরো অনেক ব্যাপার জড়িত থাকা সত্ত্বেও আপনাকে আবেদনময়ী চরিত্রেই বেশি দেখা যায়—
এ প্রশ্নের উত্তর শুরুতেই দিয়েছি, তা হলো আমি কিন্তু একা আবেদনময়ীরূপে হাজির হচ্ছি না। আমার সঙ্গে কিংবা আমার আগেও অনেক টপ মডেলও এমন করেছেন। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, মানুষ হয়তো কোনো কারণে আমাকে গ্রহণ করেছে।
আপনার সঙ্গে করা ক্রিকেটার সাব্বিরের বিজ্ঞাপনের প্রচার বন্ধ করে দেয়া হলো, কী বলবেন?
বিসিবির কোনো খেলোয়াড়কে নিয়ে যখন কাজ করা হয়, তখন আগে থেকেই সবকিছু খোলাসা করা হয়, তাদের পারমিশন নিতে হয়। সবকিছু মেইনটেইন করেই বিজ্ঞাপনটি বানানো হয়েছিল। সবাই ভালোও বলেছে। কিন্তু এর পর কেন এটিকে নিয়ে কথা উঠল, কিছুই বুঝলাম না।
বাংলাদেশ সময় ১৬৪২ ঘণ্টা ২৮ অক্টোবর, ২০১৬
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস