বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম (বিআইজেএফ) এমপাওয়ারিং ইয়ুথ ফর স্মার্ট বাংলাদেশের আয়োজনে শুক্র-শনিবার সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম ২০২২ অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য লাগসই ডিজিটাল সংযোগ ও ডিজিটাল ডিভাইস অপরিহার্য। ইন্টারনেট ও স্মার্ট ফোন শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিকতায় ইন্টারনেট এখন মানুষের জীবনধারায় অনিবার্য একটি বিষয় হিসাবে জড়িয়ে আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি হচ্ছে ইন্টারনেট। কাউকে এ থেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। ইন্টারনেট ব্যবহারের খারাপ দিকও আছে, আবার এ থেকে রক্ষার উপায়ও আছে। সেটা থেকে ছেলেমেয়েদের সুরক্ষায় অভিভাবকদেরই ভূমিকা নিতে হবে। প্যারেন্টাইল গাইডেন্স ব্যবহার করে ইন্টারনেট শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত ইন্টারনেট নিরাপদ রাখতে সরকার গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ২৬ হাজার পর্নো সাইট ও ৬ হাজার জুয়ার সাইট আমরা বন্ধ করেছি। এটি চলমান প্রক্রিয়া। ছেলেমেয়েদের ডিজিটাল দক্ষতা সম্পন্ন মানবসম্পদ হিসাবে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যেই প্রাথমিক স্তরে বই ছাড়াও ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে আমি লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছি। দেশের ৮০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তা চালু করা হচ্ছে। আমি পথ দেখলাম, অন্যরা তা অনুসরণ করবেন। সন্তানদের ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের সুযোগ না দিলে আগামী পৃথিবীতে তারা টিকে থাকার জন্য অযোগ্য হয়ে পড়বে।
ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলাভাষার উদ্ভাবক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি মানুষ ইন্টারনেটের উচ্চগতিও এখন প্রত্যাশা করেন। এই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। সাড়ে সাত জিবিপিএস ব্যান্ডউদথ ব্যবহৃত হতো তা বেড়ে বর্তমানে ৩৮ শত জিবিপিএস-এ উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করেছে। সামনের যুগের প্রযুক্তি হবে ফাইভ-জি। ২ জি কিছু দিন চলবে, থ্রি জি মোবাইল আমদানি ও উৎপাদন জানুয়ারি থেকে বন্ধ হয়ে যাবে। ফোর-জি হবে কমন প্ল্যাটফরম। মোবাইল কলড্রপের টাকা গ্রাহকরা ফেরত পাবেন।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের চেয়ারপার্সন হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে ইন্টারনেট প্রযুক্তির প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। ইন্টারনেট প্রযুক্তি দেশে নতুন অর্থনীতির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কৃষক-শ্রমিক, প্রবাসী এবং গার্মেন্টেসের নারী কর্মীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আইটি তরুণ-তরুণী।
বিএনএনআরসি‘র সিইও এএইচএম বজলুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মিত্র, অ্যামটবের সাবেক মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির, আইজিএফ‘র সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আবদুল হক অনু, ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের চেয়ারপার্সন সৈয়দা কামরুন জাহান রিপা এবং কিডস ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের চেয়ারপার্সন আয়শা লাবিবা প্রমুখ।
এমপাওয়ারিং ইয়ুথ ফর স্মার্ট বাংলাদেশ সেশনে তরুণদের ডিজিটাল সচেতনতায় সরকারি সহায়তা বিষয়ে আলোচনা করেন এটুআই, আইসিটি ডিভিশনের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট শাহারিয়ার হাসান জিসান, স্টার্টআপ খুলনার প্রকল্প সমন্বয়কারী টিম লিডার শরীফা আলম। বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের সদস্য-সচিব ফয়সাল আহমেদ ভুবন, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হাসান জাকির, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের মহাসচিব তৌহিদ হোসেন।
বাংলাদেশ স্কুল অফ ইন্টারনেট গভর্নেন্স আশরাফুর রহমান পিয়াস, উইমেন ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের পক্ষে সংহতিমূলক বক্তব্য দেন কনভেনার ফারহা মাহমুদ তৃণা, গ্রামীণ যুবকদের জন্য কার্নিভাল ইন্টারনেট নিয়ে আলোচনা করেন কার্নিভাল ইন্টারনেটের সিওও নজরুল ইসলাম, অড্রা, ডিজিটাল ওয়েলনেস নিয়ে আলোচনা করেন বিক্রয় পরিচালক মো. তারেক মঈন উদ্দিন।
গ্লোবাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের সদস্য, সাইবার পিস একাডেমি, অ্যাম্বাসেডর-ইন্ডাস্ট্রি ৫.০ টিআইএম নুরুল কবির, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট মো. এমদাদুল হক।
শনিবার দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি সকাল ৯টা শুরু হয়। বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন প্রযুক্তিবিদরা। প্রধান অতিথি ছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া।
এটি বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের আওতায় জাতিসংঘের ইন্টারনেট গভর্নেন্সের একটি উদ্যোগ। এটি একটি মাল্টি-স্টেকহোল্ডার, যুব এবং যুব নারীদের- নেতৃত্বাধীন প্ল্যাটফরম।