জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র, সংস্কার, নির্বাচন ও হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ নানান ইস্যুতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের বিভাজন দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি, বিনিয়োগে মন্দা, মবতন্ত্র, জননিরাপত্তা, মানবিক করিডোর, চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেওয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। বিভাজন দূর করে ঐকমত্যে আনতে দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিজ্ঞাপনএদিকে, বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে নতুন ভোটার তিন থেকে সাড়ে ৩ কোটি। তরুণ এই ভোটারদের যারাই আকৃষ্ট করতে পারবে, তারাই এ নির্বাচনে এগিয়ে থাকবে। এমন এক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি কী ভাবছে, তা নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন মুখোমুখি হয়েছিলেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির।
মঙ্গলবার (৩ জুন) টেলিভিশনটির নিয়মিত আয়োজন ‘গণতন্ত্রের সংলাপ’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সমসাময়িক নানান বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তরুণ এই রাজনীতিক।
বিজ্ঞাপনআরটিভি: বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন- যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল। যৌথভাবে মে মাসে তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ভাবনা, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ এবং তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ করেছে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য এবং আপনারা আসলে কী এচিভ (অর্জন) করলেন এই কর্মসূচি থেকে, একটু শুনতে চাই।
ড. মাহদী আমিন: আমাদের এই কর্মসূচিটা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের নির্দেশে করেছি। তিনি বিশ্বাস করেন যে, বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়ে এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমরা তারুণ্যের যে অপরিসীম ভূমিকা দেখেছি, যে অসীম সাহস দেখেছি, সামনে বাংলাদেশকে যদি বদলে দিতে হয়, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে যদি আমরা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উন্নয়ন ঘটাতে চাই, ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে চাই, তাহলে তারুণ্যের সে শক্তিকে আমাদের ধারণ করতে হবে। তারুণ্য কী ভাবছে, তারুণ্য কীভাবে বাংলাদেশকে বিনির্মাণ করতে চাচ্ছে, সেগুলো আমাদের শুনতে হবে। এ কারণেই কিন্তু আমরা দেশজুড়ে চারটি প্রোগ্রাম করেছি। চারটি ডিফেন্ট ডিভিশন সিটিতে এবং দুদিন করেছিল। প্রথম দিন একটা সেমিনার ছিল এবং দ্বিতীয় দিন সমাবেশ ছিল। যে সেমিনারটা ছিল সেখানে কিন্তু সমাজের বিভিন্ন অঙ্গন থেকে প্রতিনিধিরা এসেছিলেন বহু অডিয়েন্সের ক্ষেত্রে এবং স্পিকারের ক্ষেত্রে। এটা বাংলাদেশের কনটেক্সটে অনেকটা ইউনিক যে একটা পলিটিক্যাল পার্টি অর্গানাইজ করছে। যারা এর আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সবাই মূলধার রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির। কিন্তু যারা সেখানে কথা বলছেন, যারা সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন শ্রোতা হিসেবে, তারা একটি বিশাল অংশ বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না। এর মাধ্যমে আমরা চেয়েছি যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার যারা অরাজনৈতিক মানুষ রয়েছেন যারা তারুণ্যের আইকন রয়েছেন, তাদেরকে সম্পৃক্ত করতে তারা বাংলাদেশকে কীভাবে বদলে দিতে চান। তাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো সামনে নিয়ে আসতে এবং তার পরদিন ছিল তারুণ্যের সমাবেশ। আমরা দেখেছি আমাদের প্রত্যেকটা জায়গায় লাখ লাখ মানুষ মিলে সে সমাবেশকে মহাসমাবেশে রূপান্তরিত করেছিল। তারুণ্যের এক মহাপ্লাবন যেখানে প্রায় সব তরুণের কণ্ঠে কিন্তু সেটি এসেছিল যে ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা চাই যেখানে, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আবার রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মালিকানা পুনরুদ্ধার করতে চাই। সব তরুণের সমন্বিত কণ্ঠে লাখো মানুষ একত্রিত হয়ে কিন্তু গণতান্ত্রিক সে আকাঙ্ক্ষা গণতন্ত্রের প্রতি সে অভিযাত্রাকেই প্রস্ফূটিত করেছিল।
আরটিভি: এই সেমিনারগুলোতে বা কর্মসূচিগুলোতে আমরা দেখলাম, রিসোর্স পারসন বা আলোচক হিসেবে যাদেরকে আনা হয়েছে মঞ্চে, অনেকেই আসলে ভিন্ন ভিন্ন পলিটিক্যাল আদর্শের। তো প্রশ্নটি হচ্ছে, এই ভিন্ন মত বা ভিন্ন পথের মানুষদের নিয়ে বিএনপির মূল ভাবনাটা কী রকম?
বিজ্ঞাপন
ড. মাহদী আমিন: আপনি ঠিকই বলেছেন এ ধরনের জিনিসটা আসলে আগে দেখিনি। অনেকেই না, আসলে যারা আলোচক হয়ে ছিলেন সবাই ভিন্নমত ভিন্ন পথের। এটা একটা ক্রাইটেরিয়া ছিল। আপনি যদি প্রোগ্রামগুলো দেখেন, আমাদের চারটা প্রোগ্রামেই প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন আমাদের দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারক জাতীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। এবং আলোচক হিসেবে যারা ছিলেন, তাদের প্রত্যেকেই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, ভূমিকা রেখেছিলেন। দেশ এবং মানুষের জন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণঅভ্যুত্থানে সবসময় জনগণের পাশে ছিলেন। এর পাশাপাশি তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সবাই এমন একটি বাংলাদেশ চান যেখানে জনগণের ক্ষমতায়ন হবে। কিন্তু এর পাশাপাশি তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য এই যে ভিন্ন মত, ভিন্ন পথ, ভিন্ন আদর্শ সেটিকে ধারণ করে কিন্তু তাদের মাঝে একজনও বিএনপির রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত না। অনেকে হয়তো ভাবছেন যারা এখানে আলোচক হিসেবে এসেছেন ওনারা কি বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছেন কি না, বিষয়টি কিন্তু তা না। বিষয়টি হচ্ছে তাদের কাউকে এমনকি দলের সাধারণ সদস্যপদ দেওয়া হচ্ছে না। তাদেরকে আনাই হয়েছে এই ক্রাইটেরিয়াতে, বর্তমানে ইনক্লুসিভ পলিটিক্যাল পার্টি হিসেবে। যারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের অনুশাসন বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এই ছাত্র-জনতা, সব রাজনৈতিক দল যে গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থান করেছে সেখানে রাইট সাইডে ছিল। তাদের সবাইকে একটা প্লাটফর্ম দেওয়া। একটা রাজনৈতিক দলের আয়োজনে যেখানে তারা তাদের তারুণ্যের ভাবনাটুকু শেয়ার করবেন, কী ধরনের বাংলাদেশ তারা দেখতে চান। এখানে কিন্তু পলিটিক্যাল ক্রাইটেরিয়া একটাই ছিল, তারা কেউ বিএনপির সদস্য না। ভিন্ন মত, ভিন্ন পথ কিছু ক্ষেত্রে হয়তো সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্ম, আদর্শের মানুষকে আমরা এনেছি। সেটাই শোনার জন্য যে, বাংলাদেশকে যদি আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই তাহলে কিভাবে এটা আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে পারে। কিন্তু সে অন্তর্ভুক্তির একটা বড় ক্রাইটেরিয়া আবারও বলছি গণতন্ত্রের পক্ষে তাকে থাকতে হবে। কখনোই বাংলাদেশে আমরা ফ্যাসিবাদ স্বৈরশাসন চাই না। এর পাশাপাশি বক্তাদের দিকে যেমন আমরা দেখেছি সবাই নন পলিটিক্যাল ছিলেন, বিএনপির বাইরে থেকে যারা পলিটিক্যাল পার্টি থেকে স্টেকহোল্ডার ছিলেন তারাও কি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত, না সামনে যারা অডিয়েন্সে ছিলেন সেখানেও কিন্তু একটা বিশাল অংশ ছিল যারা বিএনপির রাজনীতির সাথে কখনোই সম্পৃক্ত হন নাই। অনেকে বিভিন্ন বিভিন্ন শ্রেণি পেশা থেকে এসেছেন। সেখানে তরুণ-তরুণী ছিল, যুবক-যুবতী ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ছিল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ছিল, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবীর পাশাপাশি যারা মানবাধিকারকর্মী, এনভারনমেন্টাল সবাই ছিলেন এখানে। অনেক সাংবাদিক ছিলেন। সেখানে কিন্তু আমরা একবারও দেখি নাই কে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত। আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের এই ধরনের একটা ইনোভেটিভ ইউনিক প্রোগ্রাম আমাদেরকে করানোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে একটা নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করা। দেখুন এই প্রোগ্রামগুলো সফল করার জন্য যারা মূল আয়োজক জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল। উনারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও এমন হয়েছে যে, যাদের প্রোগ্রাম স্টেজে একটা বারের জন্য বক্তব্য দেন নাই। এটাই তো বাংলাদেশের একটা নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি। প্রত্যেকটা প্রোগ্রাম আমাদের যারা লোকাল সিনিয়র নেতা ছিলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির সিনিয়র নেতা ছিলেন, জাতীয় নেতৃবৃন্দ ছিলেন উনারা গিয়েছেন। উনারা কিন্তু নরমালি দেখা যায় বক্তা হিসেবে গেলে অনেক মানুষ ওনাদের বক্তব্য শুনতে দূর-দূরান্ত থেকে আসে। আমাদের এই প্রোগ্রামগুলোতে উনারা শ্রোতা হিসেবে গিয়েছেন। উনারা শুনেছেন যারা তরুণ রয়েছেন, তারা কি চান? তারা কিভাবে নতুন বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চান? আরও একটা টেকনিক্যাল ডিফারেন্স অন্যান্য প্রোগ্রামের চাইতে সেখানে কিন্তু অডিয়েন্সে যারা ছিলেন আমরা তাদের কাছ থেকে প্রচুর প্রশ্ন নিয়েছি। তাদের জন্য ওপেন ফ্লোরের মাধ্যমে আমরা পার্সপেক্টিভস ধারণ করেছি। অর্থাৎ প্রত্যেকটা প্রোগ্রামে ১০-১৫ জন করে ফ্লোর থেকে রেনডমলি কথা বলেছেন অডিয়েন্সের ভেতর থেকে এসে। তাদের কি প্রশ্ন আছে, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চায়।
বিজ্ঞাপনআরটিভি: ভবিষ্যতে বিএনপি যদি সরকার গঠন করে, এই ধরনের ভিন্ন পথের, ভিন্ন মতের মানুষগুলোর জন্য প্ল্যাটফর্ম বিএনপি দেবে কি না?
ড. মাহদী আমিন: বিএনপি তো বাংলাদেশে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রতীক। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া রহমানের আদর্শ মানে কি? আমাদের ভিন্ন মত, ভিন্ন পথ, ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন বর্ণ থাকতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বার্থে আমরা সবাই এক। আমরা সবার জন্য সাম্য মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। একটা দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আমাদের অধিকার এবং স্বাধীনতা সবার জন্য একই রকম। সেটা ধারণ করেই কিন্তু আমরা বলছি যে, আমাদের এই যে সেমিনারটা হলো এই প্লাটফর্মটা প্রত্যেকে কথা বলার জন্য একটা সুযোগ, ভাবনা প্রকাশের জন্য একটা সুযোগ। এটা কিন্তু বিএনপির মূলধারার রাজনীতিতে আসার সুযোগ না, এটা হচ্ছে কেমন বাংলাদেশ আমরা সবাই চাই, সেটি গড়ে তোলার জন্য।
আরটিভি: সেই সেমিনারের তরুণদের ভাবনাগুলো আপনারা তো নিশ্চয় শুনেছেন, সেগুলো আসলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আসলে কিভাবে আপনারা বাস্তবায়ন করবেন, তারা যে বাংলাদেশটা দেখতে চান?
ড. মাহদী আমিন: এ কারণে প্রত্যেকটা প্রোগ্রামে একজন নীতিনির্ধারক ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির মেম্বার। তিনি সেগুলো নোট করেছেন। আমাদের ডেডিকেটেড টিম ছিল, যারা যে যেটা বলেছে সেটা নোট করেছি এবং এখানে অনেক ভালো ভালো পয়েন্টও আমরা পেয়েছি।
আরটিভি: কোন ইনোভেটিভ একটা আইডিয়া পেয়েছেন সেই সেমিনার থেকে। যেটা বিএনপি বাস্তবায়ন করার চিন্তা করছে...
ড. মাহদী আমিন: আমরা যেমন চিন্তা করছি ওখানে এসএমই এর ক্ষেত্রে অনেক বড় ধরনের কথা এসেছে। আমরা কিভাবে টেকনোলজির সাথে এডুকেশন সিস্টেম ইন্টিগ্রেট করতে পারি। ভার্চুয়াল এডুকেশনটাকে আমরা কিভাবে আরও বেশি প্রমোট করতে পারি। ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে নতুন বেশ কিছু জিনিস এসেছে। এগ্রিকালচারটাকে আরও বেশি আমরা আইটি ইন্ডাস্ট্রি প্রয়োগের মাধ্যমে কিভাবে ডিজিটাইজ করতে পারি? প্রাইস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কিভাবে আমরা টেকনোলজি ইউজ করতে পারি। নতুন নতুন ইনিভেটিভ আইডিয়া সেখানে এসেছে। আপনারা যদি দেখেন, যারা বক্তা হিসেবে এসেছেন উনারা কেউ বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত না। তারা হয়তো ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে যার যার রেসপেক্টিভ জায়গা থেকে আমরা কিভাবে পলিসি ইন্টিগ্রেশন করতে পারি সে সাজেশন দিয়েছেন।
আরটিভি: শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠনের পর তার দলে প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি তরুণ ছিল এবং তিনি তরুণদের যেভাবে গুরুত্ব দিয়েছিলেন বর্তমান বিএনপি তরুণদের নিয়ে সেই ভাবনায় আসলে কি রকম?
ড. মাহদী আমিন: প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কিন্তু খুব তরুণ বয়সে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। উনি বাংলাদেশের সেনাপ্রধান, উনি বাংলাদেশের প্রথম সত্যিকার অর্থে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, খুব তরুণ বয়সে সুতরাং সেই তারুণ্য বিএনপির শক্তি তখনও ছিল আজও আছে। আমাদের বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ১৯৮৮ সালে যখন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন। তখন কিন্তু অনেক তরুণ ছিলেন। সুতরাং সেই তারুণ্যকে আমরা আগেও যেমন ধারণ করতাম আজও সেভাবে সাংগঠনিকভাবে রাজনৈতিকভাবে ধারণ করছি। বর্তমান বাংলাদেশের সবচাইতে বেশি তরুণ যে সংগঠনগুলোর সাথে যুক্ত রাজনৈতিকভাবে সেগুলোই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল। সবচাইতে বেশি তরুণ নেতাকর্মী সমর্থক তো তাদের সাথে জড়িত। আমরা যদি দেখি গত ১৬ বছরে সবচাইতে বেশি তরুণ যারা জীবন দিয়েছেন শহীদ হয়েছেন, গুমের শিকার হয়েছেন, হামলা মামলার শিকার হয়েছেন, তারা তো এই অঙ্গ সংগঠনগুলোর সাথেই জড়িত। সুতরাং সেই তারুণ্যের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করি বলেই কিন্তু আমরা যে প্রোগ্রামগুলো করছি, যেটা আজকে আপনার প্রথম প্রশ্ন ছিল সেটা কিন্তু সে তারুণ্যকে কেন্দ্র করেই আমরা বিশ্বাস করি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে যদি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই তাহলে সে তারুণ্যের ভয়েস মাস্টবি হার্ড ইন পলিসি মেকিং ইন পলিটিক্স। সে কারণেই আমরা আমাদের পলিটিক্যাল যে ভাবনা আছে সেটা ব্রেক করে সবার কাছে ছুটে যাচ্ছি।
আরটিভি: সামনে যে নির্বাচনটি আমরা প্রত্যাশা করছি, সেই নির্বাচনে প্রায় তিন কোটি থেকে সাড়ে তিন কোটি নতুন ভোটার প্রথমবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। সেই তরুণদের কন্ঠস্বরগুলোকে আপনারা শোনার চেষ্টা করছেন। তাদের আসলে কি চাওয়া?
ড. মাহদী আমিন: চাওয়া হচ্ছে আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই যেখানে বৈষম্য থাকবে না। মেধার মূল্যায়ন থাকবে। বিএনপি কিন্তু সেটাই ধারণ করছে। আজকে দেখুন অনেক তরুণ হয়তো সংস্কারের কথা বলছেন। সবার আগে বিএনপি সংস্কারের কথা বলেছিল। সেই ২০১৬ সালে ভিশন ২০৩০ মাধ্যমে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ২০২২ সালে যে ২৭ দফা বা ২০২৩ সালে যে ৩১ দফা দিয়েছিলেন সেখানে সংস্কারের যে পরিপূর্ণ রূপরেখার কথা বলেছিলেন সেটিই কিন্তু আজকে তরুণরা বলছেন। এই যে গণঅভ্যুত্থানের একটা মৌলিক অনুসঙ্গ ছিল কোটাবিরোধী আন্দোলন। সে কোটার বিরুদ্ধে সবার আগে কিন্তু জনাব তারেক রহমান ২০১৩ সালে বলেছিলেন যে, বাংলাদেশে কোটা কখনও ৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত না। তরুণদের একটা বড় আকাঙ্ক্ষার জায়গা কর্মসংস্থান নিয়ে। কর্মসংস্থান বিষয়ে বিএনপির সুনির্দিষ্ট পলিসি রয়েছে। কিভাবে আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে নিউ জব ক্রিয়েট করব।
আরটিভি: এই মুহূর্তে অর্থনীতির যে একটা স্থবিরতা চলছে এবং সামনে যে দিনগুলো আসবে নির্বাচনের পরবর্তী সময়গুলোতে। সেখানে তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য খুব কমপ্যাক্ট বিএনপির ভাবনাটা কি?
ড. মাহদী আমিন: বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়। আজকের বাংলাদেশে দেখবেন প্রতি বছরে মাত্র ১০ লাখের মতন আমরা বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করতে পারছি। তারও এরাউন্ড ৬৫% শুধুমাত্র সৌদি আরবের। আমরা যদি এটাকে ডাইভার্সিফাই করতে পারি। আমাদের বিশ্বের অন্যান্য সব দেশে বাংলাদেশ থেকে আমাদের জনশক্তি রপ্তানি করতে পারি। আমাদের টোটাল যারা যাচ্ছেন তাদের লেস দেন ৫% উইমেন। আমরা যদি নারীর ক্ষমতা মাধ্যমে সেটি করতে পারি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের উইমেন এমপ্লয়িকে পাঠাতে পারি এবং শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু সেক্টরে না, আনট্রেনড অবস্থায় না, আমরা তাদেরকে ট্রেনিং এর মাধ্যমে দক্ষতা যোগ্যতা তাদের ভিতর পেনিট্রেট করে ট্রেনিং এর মাধ্যমে ভোকেশনাল এবং টেকনিক্যাল এডুকেশনের মাধ্যমে করতে পারি। তাহলে কিন্তু এখানে অনেক বড় একটা অবহিত ক্ষেত্র রয়েছে। আইটির ক্ষেত্রে আমরা দেখি যে ফ্রিল্যান্সিং এর অনেক বড় সুযোগ রয়েছে। যেটা আমরা ইউজ করতে পারছি না আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে। আমরা যদি তাদেরকে ট্রেন করি আমাদের ইন্ডাস্ট্রি একাডেমি কোলাবরেশন যদি বাড়াই তিন মাস, ছয় মাস বা এক বছরের যদি আমরা তাদের জন্য বিভিন্ন সার্টিফিকেশন স্কিম তৈরি করতে পারি তাহলে তাদের কিন্তু এক্ষেত্রে অনেক বড় সুযোগ রয়েছে। আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমান অলরেডি একটা ভিশন বলেছেন যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন প্লটফর্ম রয়েছে আলিবাবা রয়েছে, আমরা কিন্তু বাংলাদেশে সেটা যেন সাপ্লাই চেইন তৈরি করতে পারি। এখান থেকে উনারা আমাদের পণ্যগুলো কিনে নিয়ে যেতে পারেন এর মাধ্যমে আমরা এসএম গ্রোথ করতে পারি। একদিকে যেমন চাকরির ব্যবস্থা হবে আন্টারপ্রেশিপ তৈরি হবে ব্যাপক অর্থে। সুতরাং অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা আমাদের রয়েছে সেগুলো আমরা কাজ করছি। আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই যেখানে সত্যি বৈষম্য থাকবে না, যেখানে সত্যি মেধার ভিত্তিতে প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবে রাষ্ট্রের কাছ থেকে। এটা যদি আমরা না করতে পারি তাহলে তো গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করব না।
আরটিভি: আমাদের অর্থনীতির যদি মূল জায়গাটা দেখেন মোস্টলি হচ্ছে পোশাক রপ্তানি এবং আপনার ম্যানপাওয়ার যেটা জনশক্তি রপ্তানি এবং যে উদ্যোগগুলো শুরু হয়েছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। আমরা দেখতে পাচ্ছি ৪০ বছর পরও নতুন কোন খাতকে আমরা শক্ত অবস্থানে নিতে পারি নাই। তো সেইটা আসলে কিভাবে আপনারা ভাবছেন যে, আপনারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে নতুন কোন খাতের ব্যাপারে জোর দিবেন?
ড. মাহদী আমিন: শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেওয়া সেই দুটো ইন্ডাস্ট্রি আজও বাংলাদেশের অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তি। বিদেশে গার্মেন্টস রপ্তানি বিদেশে আমাদের জনশক্তি রপ্তানি। আপনি যদি দেখেন গত প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান বলে আসছেন যে আমরা এগ্রো বেসড এক্সপোর্ট ইন্ডাস্ট্রি করতে চাই। আমাদের এটাকে প্রমোট করতে হবে। কৃষি, কৃষক নির্ভর বাংলাদেশ আমাদের একটা কৃষি বিপ্লব আওয়ার করতে হবে। শহীদ জিয়া সেটা শুরু করেছিলেন বাট সময়স্বল্পতার কারণে সেটাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পারেন নাই। বাংলাদেশে একটা বড় সমস্যা হচ্ছে বাজারজাত করণের ক্ষেত্রে। আমাদের দেখুন সেইম প্রোডাক্টের ডিফারেন্ট প্রবলেম থেকে যায়। হয়তো তৃণমূল পর্যায়ে প্রান্তিক পর্যায়ে একজন কৃষক সেটা টমেটো বা গাজর উৎপাদন করছেন। উনি বাধ্য হয়ে এমন প্রাইজে সেল করছেন লস করে। সেটাই ঢাকায় আসতে আসতে অনেকগুলো হাত ঘুরে ঘুরে ঘুরে এত ইনফ্লেটেড প্রাইসে চলে আসে যে আমাদের যারা মধ্যবিত্ত আছে তারা কিনতে পারছেন না। তার মানে কি? প্রোডাক্ট সেইম। সেইম প্রোডাক্টের ডিফেন্ট প্রবলেম। সাপ্লাই চেইন ইকোসিস্টেমের মধ্যে একটা প্রবলেম আছে। এটাকে আমাদের এড্রেস করতে হবে। আমাদের অলরেডি পলিসিতে রয়েছে যে বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে আমরা ক্রয়কেন্দ্র তৈরি করব যার মাধ্যমে কৃষক যারা বা উৎপাদনকারী যারা রয়েছেন উনাদের কাছ থেকে আমরা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কিনে নেয়ার ব্যবস্থা নিব। ইউনিয়ন পর্যায়ে কোল্ড স্টোরেজের একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। যেন যেসব ফল, ফসল, সবজি বা খামারিতে যে উৎপাদিত জিনিসগুলো রয়েছে সেগুলোকে আমরা প্রপারলি প্রিজার্ভ করতে পারি। সেটা যদি আমরা করতে পারি এবং আমরা যদি প্রপারলি কিছু টুলস এবং ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে দিতে পারি। গ্লোবাল ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে আমরা কিন্তু এগ্রিকালচারকে এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড করতে পারি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দেখবেন মাছ মাংসও কিন্তু বিদেশে উৎপাদন হচ্ছে, রপ্তানি হচ্ছে। সে ধরনের অবারিত সুযোগ আমাদের রয়েছে। আমাদের যে উদ্ধৃত ফসল সবজি রয়েছে যেগুলো অনেক ক্ষেত্রে লোকালি নষ্ট হচ্ছে। সেগুলোকে যদি আমরা প্রপারলি কোল্ড স্টোরেজ এবং সাপ্লাই চেইনের রিকনফিগারেশন করতে পারি। এগুলোকে কিন্তু আমরা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্যাকেজিং এর মাধ্যমে বিদেশে এক্সপোর্ট করতে পারি।
আরটিভি: কর্মসংস্থান নিয়ে আসলে আপনারা কোন উদ্ভাবনী চিন্তা করছেন, যেটা আসলে তরুণ ভোটাররা আকৃষ্ট হবে...
ড. মাহদী আমিন: জবের ক্ষেত্রে আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। আমরা মূলত চারটা ডিফারেন্ট সাইড দিয়ে এমপ্লয়মেন্ট তৈরি করতে যাচ্ছি পাবলিক সেক্টরে, প্রাইভেট সেক্টরে, আন্টারপ্রে হিসেবে এবং বিদেশে জনশিক্ত রপ্তানির ক্ষেত্রে। এই চারটা হ্যান্ড অন হ্যান্ড কাজ করতে হবে। এবং সেজন্যই কিন্তু ফার্স্ট বিষয় হচ্ছে আমাদের এডুকেশন সিস্টেমটাকে অনেক বেশি প্র্যাক্টিক্যাল অরিয়েন্টেড হতে হবে, রিয়াল ওয়ার্ল্ড ট্রেনিং এর প্রয়োজন আছে, যার কারণে সেটাকে দক্ষতা এবং যোগ্যতা যেটা রিয়েল লাইফ ট্রেনিং এর জন্য প্রয়োজন, এমপ্লয়মেন্টের জন্য প্রয়োজন, সে এনসমেন্টের প্রয়োজন ইন্ডাস্ট্রি একাডেমি কোলাবোরেশনের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা ভোকেশনাল এবং টেকনিক্যাল এডুকেশন সিস্টেমটা আরও স্ট্রেন্দেন করব। জনাব তারেক রহমান ইতিমধ্যে বলেছেন যে, বাংলাদেশে একটা এডুকেশন সিস্টেম রিভলিউশন অংশ হিসেবে আমরা চাই, বাংলা এবং ইংরেজির বাইরে তৃতীয় এবং সম্ভব হলো চতুর্থ একটা ভাষা যেখানে ম্যান্ডেটরি করা এবং সেই ভাষাগুলো কি হবে ফ্রেঞ্চ, জার্মান বা এরাবিক, ম্যান্ডারিন এই জাপানিজ টাইপের ভাষা, যেগুলোর রিয়েল ওয়ার্ল্ড অ্যাপ্লিকেশন অনেক বেশি, এমন একটি ভাষা যার মাধ্যমে বিদেশে কর্মসংস্থান যেমন ইজি হবে, আবার অনলাইন ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ এখানে বসে করা সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি আমাদের মূল উদ্দেশ্য আমাদের যারা ব্রেইন ড্রেন হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে উনাদেরকে ব্রেন সার্কুলেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আমরা ইন্টিগ্রেট করতে চাই। সে ধরনের টারগেটেড পলিসি নেব কিভাবে উনাদেরকে আমরা বাংলাদেশে ইনোভেটিভ প্লটফর্ম দিতে পারি অনেক রিসার্চার বিদেশে রয়েছেন কিভাবে আমরা বাংলাদেশে তাদেরকে আরএনডিতে ইনক্লুড করতে পারি। আমাদের বাংলাদেশে এফডিআই বাড়াতে হবে জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রজেক্ট বাড়াতে হবে, পিপিপি বাড়াতে হবে। তার জন্য আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসিগুলো সেভাবে নিতে হবে। যে গণতন্ত্রের কথা আমরা বলছি সে গণতন্ত্র শুধু ভোটের অধিকারে সীমাবদ্ধ না, সেটি যারা ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা এসএমই রয়েছেন, যারা যারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছে, সবাইকে আমাদের সেই গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে হবে। অর্থনৈতিক খাতেও।
আরটিভি: অনেক আগে থেকেই বিএনপি সংস্কারের কথা বলছে প্রথমে ২৭ দফা তারপরে ৩১ দফা আপনারা রাষ্ট্র কাঠামোর যে মেরামত বা সংস্কারের নামে দিয়েছেন। কিন্তু তারপরে এরকম একটা বার্তা কেন আসছে যে বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে বরং নির্বাচন দ্রুত চাই...
ড. মাহদী আমিন: এটা অনেকটাই অনাকাঙ্ক্ষিত আপনি অপপ্রচারও বলতে পারেন। কারণ বর্তমান বাংলাদেশে আজকে অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন, যারা ৫ আগস্টের বহু পরে প্রথমবার এই শব্দটা উচ্চারণ করেছে। সবার আগে সংস্কারের কথা বলেছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি যখন ভিশন ২০৩০ প্রণয়ন করেছিলেন। আজকের বাংলাদেশের সবচাইতে আলোচিত যে বিষয়গুলো যেমন আমাদের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা তার রূপরেখা কি হবে? বর্তমান বাংলাদেশে কিন্তু সেটা সবার আগে সেই ভিশন ২০৩০ তে আমাদের ম্যাডাম বলেছিলেন আমরা পরপর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী কি কেউ থাকবেন কি থাকবেন না, রাষ্ট্রপতির সাথে প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদের ক্ষমতার ভারসাম্য কি হবে, আমরা বিচার বিভাগ আইনসভা এবং নির্বাহী বিভাগের ভিতর ক্ষমতার ভারসাম্য কি হবে, এ প্রত্যেকটা জিনিস কিন্তু সেই ভিশন ২০৩০ পরবর্তীতে ২০২২ এবং ২৩ সালের ২৭ দফা এবং ৩১ দফাতে ছিল, যে জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে, সে জাতীয় ঐক্যমতের উপর ভিত্তি করে কিন্তু গণতন্ত্রের পক্ষের যে রাজনৈতিক দল ছিল, যারা যুগপথ আন্দোলনের শরীক ছিল, সবাই একটা প্লাটফর্মে এসে ৩১ দফা প্রণয়ন করা হয়েছিল। সুতরাং আজকে নতুন কোন কিছুর কিন্তু নেই, যা কিছু যৌক্তিক যা কিছু বাস্তব, তা প্রত্যেকটা ভিত্তি আমাদের দেওয়া ৩১ দফা। ডিফারেন্সটা কোথায়? ডিফারেন্সটা হচ্ছে যে মেথডোলজিক্যাল ইমপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে হ্যাঁ আমরা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের কথা সবার আগে বলেছি। কিন্তু সেটা কোন প্রেক্ষাপটে হবে, এখানে কি প্রপোশনাল রিপ্রেজেন্টেশন হবে নাকি এখানে সিস্ট বেসডঅলোকেশন হবে সেটা নিয়ে কিছু ডিবেট থাকতে পারে এবং কিছু ডিবেট থাকবে সেটাই তো স্বাভাবিক। গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কি? গণতন্ত্রের সংজ্ঞা আমরা সবাই থাকব, ভিন্ন মত ভিন্ন পথ থাকবে, অনেকগুলো বিষয় আমরা একমত হব। অনেকগুলো বিষয়তে আমরা একমত হবো না। যেখানে একমত হব, সবাই এক হয়ে সেগুলো কার্যকর করব। যেখানে একমত হব না, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেটি আমাদের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে যাবে। জনগণের কাছে আমরা যাব। জনগণ যেটাকে এনডোর্স করবে নির্বাচিত হয়ে তারা সেটা বাস্তবায়ন করবে। ইজি ফর্মুলা যার কারণে আমরা বলছি সংস্কারের যেসব বিষয়ে এটি জাতীয় ঐক্যমত গঠন হবে, সবাই একমত হবেন। সেগুলো আমরা কার্যকর করতে যাব খুব দ্রুত। যেখানে ভিন্ন মত থাকবে লেটস ফেস ইলেকশন। আমরা সবাই জনগণের কাছে যাই। এন্ড লেট পিপল ডিসাইড।
আরটিভি: অন্তর্বর্তী সরকার অনেকগুলো খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, সরকার তার সংস্কারের যে পরিধি অনেক বেশি বড় করে ফেলেছে। আপনি বিষয়টাকে আসলে কিভাবে দেখছেন এবং কোন কোন সংস্কার আসলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি?
ড. মাহদী আমিন: দেখেন বিএনপি এবং অন্যগুলো রাজনৈতিক দল বোঝাচ্ছে বর্তমান সরকারের প্রথম প্রায়োরিটি হওয়া উচিত ছিল- একটা ইলেক্টর রোড ম্যাপ দেওয়া। সুনির্দিষ্ট একটা ডেট দেওয়া, কখন ইলেকশন হবে। তারপর ব্যাকট্র্যাক করে আমাদের টার্গেটওয়াইজ বা টাইম বাউন্ড কিছু এচিভমেন্ট থাকা উচিত ছিল। ডেলিভারেবল তার ভিতরে সংস্কার পড়ে যাওয়ার কথা, সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া, যে অন্তর্বর্তী সরকার রয়েছেন, তারা সব সংস্কার থিওরিটিক্যাল স্পিকিং শেষ করে দিলেন, তারপরে নির্বাচন দিলেন এবং পরবর্তীতে যে নির্বাচিত সরকার আসবে, তারা আর কখনো সংস্কারে হাত দেবে না। এটাতো প্র্যাক্টিক্যাল না। সংস্কার এমন একটা বিষয় যেটা সময়ের প্রয়োজনে, সমাজের প্রয়োজনে যখনই দরকার তখনই করতে হবে। যেমন ধরেন- সংবিধানের মূলনীতির বিষয় যদি হাত দিতে হয় সেক্ষেত্রে তো অবশ্যই এটা জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের প্রয়োজন সংস্কার বলতে কিন্তু ছোট থেকে বড় অনেক কিছু করা যায়, দিনশেষে ছোট বড় মাঝারি ম্যাটার করে না, সংস্কার বলতে আমরা তাই বুঝি যাতে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে, জনগণের সমস্যার সমাধান হবে।
আরটিভি: একটি প্রশ্ন আসে বিচার আগে তারপর নির্বাচন, আবার সংস্কার আগে তারপর নির্বাচন এগুলো আসলে মুখোমুখি দাঁড়ালো কেন?
ড. মাহদী আমিন: এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা একটা সময় দেখেছি উন্নয়ন এবং নির্বাচন মুখোমুখি হয়ে গিয়েছে। এখন নির্বাচন এবং সংস্কার মুখোমুখি হয়ে গিয়েছে। এটা কি জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ছিল? আমার তো মনে হয় না। জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ছিল- আমরা সেই বাংলাদেশ চাই, যেখানে একটা প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার থাকবে, যাদের স্বচ্ছতা থাকবে, জবাবদিহিতা থাকবে, দায়বদ্ধতা থাকবে। জুলাই অভ্যুত্থান হলো কেন? কারণ এমন একটি ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে ছিল, যারা দুর্নীতি, দুঃশাসন ও দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে, যেখানে মেধার মূল্যায়ন হয় নাই, বৈষম্য হয়েছে, এখানে একটি নির্দিষ্ট দলের নেতা-সমর্থকেরা ফার্স্ট ক্লাস সিটিজেন ছিল, বাকি সবাই প্রতিনিয়ত বঞ্চিত ছিল। প্রত্যেক মূহূর্ত বৈষম্য ছিল। তার মানে কি? আমরা এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা চেয়েছি, সেখানে এসব হবে না, কখন হবে না? যখন এমন একটি সরকার আসবে যারা অনির্বাচিত না। যারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে সরকার পরিচালনা করবে। আমরা দেখেছি ২০১৪ সালে একটি বিনাভোটের নির্বাচন হয়েছে, ২০১৮ সালে নিশিরাতের নির্বাচন হয়েছে, আবার ২০২৪ সালে ডামি একটি নির্বাচন হয়েছে। এই পরপর তিনিটা নির্বাচনের মাধ্যমে এমন একটি সরকার ক্ষমতায় ছিল, তার ক্ষমতার উৎস জনগণ ছিল না, তার ক্ষমতার উৎস ছিল রাষ্ট্রযন্ত্র, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ। তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হলো- এই ধরনের সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন তার ক্ষামতার উৎস জনগণ না হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের একাংশ হয়, তখন তারা জনগণকে পাশে ফেলে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে, দুর্নীতি, দুঃশাসন ও দুর্বৃত্তায়ন করে। তার মানে প্রধান ব্যাপার হচ্ছে- আমাদের যদি সেই বিষয়টা শেষ করতে হয়, তাহলে এমন একটা সরকার প্রয়োজন, যার ক্ষমতার উৎস জনগণ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তার একমাত্র উপায় নির্বাচন। নির্বাচনই জনগণের ক্ষমতায়নের মাধ্যম, যার মাধ্যমে তিনি ভোট দেবেন, ভোটের মাধ্যমে তিনি পছন্দের প্রতিনিধিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেবেন। এই প্রতিনিধি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, স্বচ্ছতার মাধ্যমে জবাবদিহিতার মধ্যে থাকবে। সুতরাং যখন এটি বাস্তবায়ন হবে তখন আমাদের মূল আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে।
আরটিভি: ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর থেকে বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে আসছে, এখন প্রশ্ন হচ্ছে বর্তমানে যে অন্তর্বর্তী সরকার রয়েছে, তা কতটুুকু নিরপেক্ষ বলে বিএনপি মনে করে? আপনাদের এমন মনে হয় কিনা অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা হারাচ্ছে?
ড. মাহদী আমিন: অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত না, তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনে তৈরি হয়েছে। এটা প্রত্যাশিত ছিল সরকার নিরপেক্ষ থেকে কাজ করবে। বিএনপির দীর্ঘদিনের আন্দোলন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, যার কারণে জাতীয় সরকারের কথা উঠলেও অনির্বাচিত সরকারের অংশীদার হতে বিএনপি কিন্তু রাজি হয়নি। আপনি যদি ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সেই ডিস্কাশনগুলো দেখেন, কারা সরকারে যাবে, তখন বিভাজন হয়েছিল। যারাই সরকারে গিয়েছে, যাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা ছিল না। তারাই সরকারের বাহিরে ছিল যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। সুতরাং সেখান থেকে বের হয়ে এসে একজন উপদেষ্টা...।
আরটিভি: আপনাদের দলের প্রধান-ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, এখন আপনাদের কি মনে হচ্ছে এই সরকার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে?
ড. মাহদী আমিন: শুরু থেকেই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান বারবার বলে আসছেন- অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা মানে বাংলাদেশের সফলতা, অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা মানে বাংলাদেশের ব্যর্থতা। অসীম মানবাধিকার লংগনের পরও আমাদের যে আন্দোলন ছিল, তা কিন্তু এই ধরনের অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য। সুতরাং আমাদের আকুণ্ঠ সমর্থন ছিল, তবে সেই সমর্থনের মৌলিক উদ্দেশ্য ছিল নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। কিন্তু আমরা দুঃখজনকভাবে দেখেছি, একজন উপদেষ্টা দল গঠনের জন্য কাজ করেছেন, দল পরিচালনার জন্য কাজ করেছেন এবং তিনি রিজাইন করার পরপরই একটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করেছেন।
আরটিভি: এমন কি ঘটনা ঘটলো যে, প্রথম থেকে আপনারা যে অবস্থানে ছিলেন, সেখান থেকে সরকারের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটলো নাকি বিএনপির অবস্থানের পরিবর্তনের ঘটনা ঘটলো? আপনারা কিন্তু সরাসরি তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছেন।
ড. মাহদী আমিন: বিএনপির অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে নাই, কারণ আমরা এই সরকারের কাছে নিরপেক্ষতা চেয়েছিলাম। আমরা প্রথম থেকেই চেয়েছি- এমন একটি সরকার যেটি কোনো দলের নয়, বরং নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করবে। সেই প্রত্যাশা আমাদের এখনও রয়েছে, সেই কারণেই আমরা বলছি- অন্তর্বর্তী সরকারে যারা এখনও ছাত্রপ্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন, ওনারা যদি নিরপেক্ষতার উর্ধ্বে যদি উঠতে না পারেন, তাহলে তো সার্ভ করার সুযোগ নাই। এখন মনে হচ্ছে- ওনারা নিজেরাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন, এটা তো অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব না যে এখানে থাকা অবস্থায় কোনো উপদেষ্টা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত থাকবেন। কেউ যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান, তাহলে তাকে জনগণের কাতারে-জনতার কাতারে এসে রাজনীতি করতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গণতান্ত্রিক দেশে-গণতান্ত্রিক পরিক্রমায় কোনো সরকারের কাছে এটা কাম্য নয়।
আরটিভি: এখন তো একটি প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে, গত পনের বছর আপনারা বা বিএনপি কোথায় ছিল? এই প্রশ্ন শুনে আপনাদের রিএ্যাকশন কি?
ড. মাহদী আমিন: পনের বছর বিএনপি রাজপথে ছিল, শুধু গণঅভ্যুত্থান নয়, বরং পনের নয় ষোল বছর ধরে ফ্যাসীবাদবিরোধী আন্দোলেনের নেতৃত্বে ছিল। বাংলাদেশে সবচাইতে বেশি গুম-খুন হামলা-মামলার সংখ্যার হিসেবে যে দলটি সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছে- সেটা বিএনপি। আমাদের ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, সাড়ে চার হাজারের বেশি নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। গণঅভ্যুত্থনে পাঁচশতের বেশি নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য জনাব সালাউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে গুম হয়েছেন। আমরাই বাংলাদেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল যেটার সাথে এমন অনেক কিছু ঘটেছে, যা ভাষায় প্রকাশের মতো না। ভাইকে না পেয়ে অপর ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, বাবাকে না পেয়ে ছেলেকে গুলি করেছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন, যাদেরকে ডান্ডাবেরি-হাতকড়া পরে বাবা-মার জানাজায় অংশগ্রহণ করতে হয়েছে অথবা হাসপাতোলে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ধানের শীষে ভোট দেয়ার কারণে গৃহবধূকে গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। এগুলো তো বাংলাদেশে খুব বেশি আমরা দেখি নাই। এরআগে অন্য কোন রাজনৈতিক দলের সাথে এই মাত্রায় ঘটে নাই। তারপরও বিএনপি বরাবরের মতো রাজপথে ছিল।
আরটিভি: সরকার গঠন করলে বিএনপি কোন বিষয়গুলোতে বেশি গুরুত্ব দেবে?
ড. মাহদী আমিন: সরকার গঠন করলে বিএনপি কোন দিকগুলোতে আসলে বেশি গুরুত্ব দেবে- যেটা ইতিমধ্যে মধ্যে আলোচনা করেছি। এমন বিষয়গুলোতে বিএনপি সবচাইতে বেশি অগ্রাধিকার দেবে যেখানে মানুষের সমস্যার সমাধান হয়। ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। কিভাবে আমরা কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবো, শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও বেশি কর্মমুখী করতে পারব, যেখানে যোগ্যতা এবং দক্ষতার সন্নিবেশ হয়। দ্রব্যমূল্য আমরা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করব, ক্লাইমেট চেঞ্জটাকে আমরা কিভাবে এড্রেস করব, কিভাবে খাল খনন, পুনঃখননের মাধ্যমে আমরা নদী সমস্যার সমাধান করব, কিভাবে আমরা বর্তমানে যে নগরভিত্তিক সমস্যা রয়েছে, ট্রাফিক সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধান করব। আমরা ডিসেন্ট্রালাইজেশনের মাধ্যমে আমাদের আরবান পপুলেশনটাকে কিভাবে কিছুটা হলেও রুরালের দিকে নিয়ে যেতে পারব, কিভাবে আমরা বিভিন্ন শ্রমিক-মজুর, যারা কৃষিজীবী রয়েছেন, উনাদের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারব, আমরা দুর্নীতি কিভাবে কমিয়ে আনবো, কিভাবে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সরকার কাঠামো গড়ে তুলবো, যেখানে রাষ্ট্রের নাগরিকরা সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রভুত্ব নয় সেবা পায়, সেই জিনিসগুলো আমরা সামগ্রিকভাবে নিশ্চিত করতে চাই। অর্থাৎ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের যেন একটা পলিটিক্যাল ইকোনোমিক এম্পাওয়ারমেন্ট হয়। একটা সাশ্রয় এবং স্বাবলম্বীতার মাধ্যমে যেন প্রত্যেকটা মানুষকে তার ফ্যামিলি নিয়ে ভালো মতো নিরাপদে বাঁচতে পারেন সেটা আমাদের মূল প্রত্যাশা।
আরটিভি: ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই তো একটা জাতীয় সরকার গঠনের সুযোগ তৈরি করা হয়েছিল, কেন সেই সুযোগটি বিএনপি নেয়নি?
ড. মাহদী আমিন: বিএনপি দীর্ঘদিন আন্দোলনে ছিল এ জন্য যে, আমরা চেয়েছি একটি অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা, যেটি মৌলিক ভিত্তি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও সর্বদলীয় সরকারের জন্য। বিএনপি আন্দোলন করে নাই সর্বদলীয় সরকারের জন্য বা কোন রাজনৈতিক দলও সর্বদলীয় সরকারের জন্য আন্দোলন করে নাই।
আরটিভি: বিএনপির এই স্ট্যান্ডটাও তো ছিল যে সরকারে-রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে সমস্ত দল এবং সবার রিপ্রেজেন্টেশন নিয়েই একটা জাতীয় সরকারের ফরমেট আসবে, সেই সুযোগ তো ৫ আগস্টের পরে যখন তৈরি হলো, সেই সুযোগ নিল না কেন?
ড. মাহদী আমিন: বিএনপি আগে থেকেই বলে আসছে, যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যায়, তখন এই ফর্মেই সরকার করার একটা ভাবনা চিন্তা আছে, তবে ৫ আগস্ট অবশ্যই পারতো বিএনপি, কিন্তু বিএনপি তো অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল না, তাই করেনি। বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, তাই জনগণের ভোট ছাড়া সবাই মিলেমিশে সরকার গঠন করবে না, এটা গণতন্ত্রের স্পিরিটও নয়। গণতন্ত্র হচ্ছে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, তবে যে জাতীয় সরকারের কথা বিএনপি বলেছে, সেটাই কার্যকর করা হবে। তবে জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে। সুতরাং নির্বাচিত হয়ে আসলে বিএনপির পাশাপাশি অন্য যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে অসীম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে, যেই রাজনৈতিক দল গুম-খুন হামলা-মামলার শিকার হয়েছে, বিএনপি নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের নিয়ে যে সরকার গঠন হতে পারে সেটি জাতীয় সরকারের আদলের কিছু অবশ্যই হবে। তবে তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হবে। এটা তো আমাদের ৩১ দফার অন্যতম একটা অঙ্গীকার যে আমরা একটা জাতীয় ঐক্যমতের সরকার গঠন করতে চাই। যেখানে সব স্টেক হোল্ডারের রিপ্রেজেন্টেশন থাকবে।
আরটিভি: মানবিক করিডর-বন্দর লিজ দেওয়ার মত কতগুলো প্রসঙ্গ সাম্প্রতিক সময় আপনি গণমাধ্যমে দেখেছেন। এই কাজগুলো আসলে অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডার মধ্যে কতখানি পড়ে বলে আপনি মনে করেন?
ড. মাহদী আমিন: মানবিক করিডর-বন্দর লিজের মত সংবেদনশীল ইস্যুগুলো আসলে নির্বাচিত সরকারের করা উচিত, আমরা মনে করি জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া অত্যন্ত স্পর্শকতর একটা বিষয়ে অনির্বাচিত সরকার কখনোই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
আরটিভি: জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি সরকার ৫ আগস্টের পর গঠিত হলো, সেই সরকারেরই উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বলেন যে শুধু নির্বাচন এই সরকারের ম্যান্ডেট না, এ ব্যাপারে আপনার মত কি?
ড. মাহদী আমিন: আমার মনে হয়- তাদের ম্যান্ডেটের ভিতর পড়ে নির্বাচন ম্যান্ডেটরি, তবে একটা সরকারে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, উনারা শুধু নির্বাচন কমিশন নিয়ে কাজ করবেন তা তো না, তাদের ডে টু ডে ওয়ার্কগুলো তো করতেই হবে, ওনাদের যেগুলো রেগুলার কাজ আছে, সেগুলো তো মেনটেন করতেই হবে, রেগুলার কাজগুলোর ভিতরেই তো বিচার। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই অন্তর্বর্তী সরকার আসলো, ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলো, তো তাদের বিচার করতে হবে, এটা উনাদের কমিটমেন্টেরই পার্ট। আর সংস্কার ততটুকু যেটা নির্বাচন আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত, সেগুলো উনারা করবেন, বাকি সংস্কারের ক্ষেত্রে উনারা প্রস্তাবনা রাখতে পারেন, আপনি দেখবেন ৩১ দফায় যেভাবে বলা হয়েছে, সে নামেই করা হয়েছে, উনারা অন্যদের প্রোপোজালগুলো দিতে পারে।
আরটিভি: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুস সম্প্রতি বিএনপিকে ইঙ্গিত করে একটি মন্তব্য করেছেন- একটি মাত্র দলই নির্বাচন চাইছে, এই মন্তব্যের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি?
ড. মাহদী আমিন: গতকালও যে মিটিং হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের উপস্থিতিতে সেখানে তিনটি ছাড়া সব রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের নির্বাচনের কথা বলেছেন, উনার কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা সব রাজনৈতিক দল এক হয়েই তো অনেক আশা নিয়ে উনাকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান করেছেন। সুতরাং উনার কাছ থেকে আমরা যা সত্য, যা সঠিক, যা ন্যায়, যা ন্যায্য, সে বয়ান প্রত্যাশা করি।
আরটিভি: জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, বিচারের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কিন্তু গত ১৬ বছরে যারা গুম-খুন, হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন তারা আসলে কতখানি বিচার পাবেন বা তারা কি আদৌ বিচার পাবেন?
ড. মাহদী আমিন: ধাপে ধাপে সবগুলোই হবে হয় তো, বিএনপির তো একটা অঙ্গীকার আছে, আপনি ৩১ দফাতে দেখবেন যে মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলো গত ১৬ বছরে হয়েছে, সেই গুম-খুন হামলার প্রত্যেকটা বিচার অবশ্যই কার্যকর করতে হবে। বর্তমানে আমরা যে আইসিসি দেখলাম- ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল, সেটা কিন্তু ক্যাপাসিটি বা রিসোর্সের দিক থেকে দুর্বল। আমরা আরও একটা ক্রাইম ট্রাইবুনালের কথা আগে থেকে বলছি। তাদেরকে তো সাপোর্ট দিতে হবে। রিসোর্স দিতে হবে। ক্যাপাসিটি ক্যাপেবিলিটি তৈরি করতে হবে। বর্তমানে হচ্ছে না। কারণ জুলাই বিচারই তো দ্রুত হচ্ছে না। সেটাই স্লো। জুলাই-আগস্ট যদি স্লো হয়, তাহলে তার পেছনেরগুলো আরও ওভারডেন হয়ে যাবে। এ কারণে গণতান্ত্রিক সরকার দরকার। পাশাপাশি আরেকটা বিষয় বলি- বিএনপির যেমন একটা অঙ্গীকার রয়েছে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান বারবার বলেছেন- গত ১৬ বছরের প্রত্যেকটা গুম-খুনের বিচার নিশ্চিত করতে চাই। ১৬ বছরে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে, যারা ইনজুরড হয়েছেন উনাদের পাশে রাষ্ট্রের দাঁড়াতে হবে, দুঃখজনক হলেও সত্য এই জুলাই-আগস্টে কতজন শহীদ হয়েছেন তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা আমরা আজ পর্যন্ত দেখি নাই। যদি তালিকাই না থাকে আপনি কিভাবে তাদের পাশে দাঁড়াবেন, বিএনপির একটা অঙ্গীকার- যারা শহীদ হয়েছেন, প্রত্যেকটা শহীদ পরিবারের পাশে রাষ্ট্রীয়ভাবে দাঁড়ানো হবে।
আরটিভি: জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি সংবিধান বাতিল, গণপরিষদ গঠন ও গণভোট চাইছে। কিন্তু বিএনপি সরাসরি এর বিরোধিতা করছে, এর যুক্তিটা কি?
ড. মাহদী আমিন: আমি আপনাকে প্রশ্ন করি, যে তিনটা বিষয় বললেন- জুলাই-আগস্টে কি এই ধরনের বিষয়ে বলেছিলেন একবারও? তাহলে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা কি? আকাঙ্ক্ষা সেটাই- যেগুলোর উপর ভিত্তি করে মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিলেন। জুলাই আকাঙ্ক্ষা ছিল এমন একটা রাষ্ট্রব্যবস্থা, যেখানে সরকারের কাছে মানুষ দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতার জায়গা পাবে। যেখানে আর দুর্নীতি-দুঃশাসন হবে না, দুর্বৃত্তায়ন হবে না। যেখানে মেধার মূল্যায়ন হবে। যেখানে বৈষম্য থাকবে না। সংবিধানে পরিবর্তনের সাথে তার সম্পর্ক নাই।
আরটিভি: কিছুদিন আগে একজন বরণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বলেছেন যে রুচির দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে দেশে, তো সামাজিক সংগঠনগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, সাংস্কৃতিক চর্চার কোন সুযোগ নেই, খেলাধুলারও সুযোগ নেই, তো এই সাংস্কৃতিক যে বন্ধাত্ব সেইটা নিয়ে আসলে বিএনপি কি ভাবছে, এটা কিভাবে গুছাবে?
ড. মাহদী আমিন: বিএনপি কিন্তু দেখবেন সবার আগে বাংলাদেশ নামক একটা নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। সেখান থেকে কনসার্ট করা হয়েছে, যেখানে বিদেশি কোন ব্যান্ডকে আনা হয় নাই, আমাদের লক্ষ্য এমন একটা বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যেখানে আমরা আমাদের নিজেদের যে স্ট্রেন্থ রয়েছে, যেটা আমরা ইনহেরিট করছি, সেটাকে প্রায়রিটাইজ করতে হবে, শিক্ষা ব্যবস্থার এটা অনেক বড় ভূমিকা থাকবে, আপনি যদি দেখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বক্তব্য, উনি বলেছেন- আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাতে আমরা এক্সট্রা কারিকুলামে এ্যাক্টিভিটিটাকে ইনক্লুড করবো। এজ ম্যান্ডেটরি সাবজেক্ট। স্পোর্টসটাকে ম্যান্ডেটরি করা হবে। অর্থাৎ যারা শিশু-কিশোর রয়েছেন, যারা তরুণ-তরুণী রয়েছেন উনারা চাইলে বাংলাদেশে নতুন সাবজেক্ট হিসেবে গিটার বাজাতে পারেন, উনারা ওনারা সংগীতের কাজ করতে পারেন, উনারা মিউজিক করতে পারেন, উনারা যার যার পছন্দের ফুটবল-ক্রিকেট-ব্যাডমিন্টন, যার যে স্পোর্টসটা পছন্দ সেটা কিন্তু আমরা আমাদের ক্লাসে ম্যান্ডেটরি করে দিব। আমাদের যে এডুকেশনাল রিফর্ম পলিসি রয়েছে, তার ভিতর গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা থাকবে। এর পাশাপাশি উনি বলেছেন যে, আমরা আরবান এরিয়াগুলোতে অন্ততপক্ষে প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে একটা মিনিমাম খেলার সাপোর্ট আমরা তৈরি করতে চাই, ইউনিয়ন বা থানা পর্যায়ে যেগুলো রয়েছে, সেখানে মাঠের ব্যবস্থা করতে চাই। আমাদের আরবান পলিসির ভেতরে কিভাবে আমরা আরও একটি গ্রিন বাংলাদেশ তৈরি করতে পারি। কিভাবে আমরা তাদেরকে আউটফিল্ডের ব্যবস্থা করে দিতে পারি, সেটাও ম্যান্ডেটরি করা হবে। আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই, যেখানে শিক্ষা ব্যবস্থা মানে শুধু খাতা কলম বই পুস্তক তাই না, সেখানে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে হবে।
আরটিভি: বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল যৌথভাবে মে মাসে যে কর্মসূচি- তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ভাবনা, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ এবং তারুণ্যের সামাজিক রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার যে সমাবেশ করেছে এটা নিয়ে ভবিষ্যতে আর কি কি কর্মসূচি বা প্ল্যান আছে?
ড. মাহদী আমিন: আমরা চাই সবচাইতে বেশি তারুণ্যকে ধারণ করা রাজনৈতিক দল হিসেবে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার যারা তরুণ রয়েছেন ওনাদের কাছে ছুটে যাওয়ার জন্য। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমরা ডিফারেন্ট ডিফারেন্ট প্লাটফর্মে ওনাদের সাথে যাব। এঙ্গেজমেন্টে যাব। বিএনপির সবচাইতে বড় স্ট্রেন্থ হচ্ছে এটাই যে আমরা সেই রাজনৈতিক দল যারা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি না। আমরা দেশ পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করি। আমরা সেই রাজনৈতিক দল যারা পলিসি চাপিয়ে দেই না। পলিসি একটা আইটারেটিভ প্রসেসের মাধ্যমে অর্থাৎ একমুখীভাবে চাপানো না দ্বিমুখী আলাপচারিতার মাধ্যমে। এটা ডায়লগ তৈরি করার মাধ্যমে। আমাদের পলিসিটাকে শেপ করতে চাই। আমাদের তারুণ্যদের জন্য যে পলিসিগুলো রয়েছে সেগুলো উনাদের কাছে ছুটে যাবো। সামনে আরও বড় পরিসরে যাবো। সারা বাংলাদেশ জুড়ে যাওয়ার ইনশাআল্লাহ পরিকল্পনা রয়েছে এবং ওনারা কি চান? উনাদেরকে আকাঙ্ক্ষা সেটাকে লিপিবদ্ধ করব। সুতরাং একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে শুধুমাত্র আমাদের ভিশন থাকবে সেটাই যথেষ্ট না। সেই ভিশনটা অন দা গ্রাউন্ড যারা রয়েছেন সে তরুণ-তরুণী যুবক-যুবতীদের সাথে কতটা রেজোনেট করে সেটা কতটা কানেক্ট করে এবং তাদের এসপারেশনটাকে আমরা কতটা রিফ্লেক্ট করি। এই দুইয়ের মিশেলের মাধ্যমে ইনশল্লাহ আমরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে তারুণ্যের ভাবনার পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলনের প্রচেষ্টা।
আরটিভি: আমরা একটু ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখি যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দলের কর্মীদের দক্ষতা এবং মনন-মেধা বৃদ্ধির জন্য প্রচুর পরিমাণে কর্মশালা-ওয়ার্কশপ করেছেন, যেগুলোকে বলা হয়- কালচারাল এক ধরনের প্র্যাকটিসও ছিল, সেইগুলো এখন আপনারা কিভাবে চিন্তা করছেন?
ড. মাহদী আমিন: বিএনপি একমাত্র রাজনৈতিক দল যে ৫ আগস্টের পর সারা বাংলাদেশ জুড়ে কর্মশালা আয়োজন করেছে, ৩১ দফার যে কর্মশালা আমরা করেছি, সেটা বিভাগীয় পর্যায়ে জেলা পর্যায়ে, উপজেলা পর্যায়ে, থানা পর্যায়ে, ওয়ার্ড পর্যায়ে করছি, সেখানে আমরা শুধু বলছি না, আমরা শুনছিও এবং সেখানে কিন্তু একদম ওপেন ফ্লোর করে যারা অডিয়েন্সে রয়েছেন, উনারা যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন। সুতরাং কর্মশালার ক্ষেত্রেও যদি আমরা বলি বর্তমান বাংলাদেশের বিএনপির জনক, অন্যান্য রাজনৈতিক দল দেখছি এটা শুরু করছে। আমরা সেটাকে এপ্রিশিয়েট করি। এটাই তো গণতন্ত্র হওয়া উচিত।
আরটিভি: একেবারেই শেষ পর্যায়ে আমরা চলে এসেছি, একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন আপনাকে করতে চাই, সেটি হচ্ছে- বিলেতের বিপুল সম্ভাবনার জীবন, আমি জানি আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড এবং একাডেমিক লুমিনাস ক্যারিয়ার, তো সেগুলো ছেড়ে আপনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসার পেছনের গল্পটা কি?
ড. মাহদী আমিন: দেখুন বিদেশে থাকলে হয়তো নিজের জন্য খুব বড় কিছু, ভালো কিছু করা যেত, বাট দেশের জন্য সমাজের জন্য বৃহত্তর পরিসরে যদি কিছু করতে হয়, তাহলে একটা পলিটিক্যাল পার্টি মানে সবচাইতে বড় প্লাটফর্ম, বাংলাদেশের হিস্ট্রিতে যদি আমরা দেখি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সবচাইতে দৃঢ়ভাবে যে রাজনৈতিক দল ধারণ করেছে সেটা তো বিএনপি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের যে সুনির্দিষ্ট সুবিস্তৃত পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক রয়েছে বাংলাদেশকে কিভাবে গড়ে দিতে হবে, বদলে দিতে হবে, তার জন্য প্রত্যেকটা একটা সেক্টরওয়াইজ উনার যে ডিটেইল এবং থর পলিসি রয়েছে তার চাইতে বেটার বাংলাদেশকে আর বদলে দেয়ার কোন সুযোগ নাই। সুতরাং এই যে একটা এক্সাইটিং জার্নি, এটা হয়তো বিএনপির রাজনীতির বাইরে বাংলাদেশে আর কোন সুযোগ নাই।
আরটিভি: আপনার কি কখনও দ্বিধাদ্বন্দ ছিল যে আসবো, আসবো না। একটা এমবিভালেন্ট সিচুয়েশনে ছিলেন নাকি একদম প্রিডিটারমাইন ছিলেন যে না আমি যাব, দেশের মানুষের জন্য করব। দেশের জন্য আসলেই আপনার ইমপ্যাক্ট আছে যেটি আপনি আসলে করতে সেই কনভিকশন থেকে এসেছেন? ফ্যামিলি থেকে বা কোন এমবিলেন্স ছিল কিনা?
ড. মাহদী আমিন: আমি সবসময় চেয়েছি, আমার ফ্যামিলি থেকেও বলেছে যে, যা কিছু করি না কেন দিন শেষে হু মেক এ ইমপ্যাক্ট ইন সোসাইটি। বৃহত্তর পরিসরে পলিটিক্স হচ্ছে- সেই মেথড যার মাধ্যমে আমরা দেশকে বদলে দিতে পারি, দেশকে বিনির্মাণ করতে পারি, আর আমরা অত্যন্ত ফরচুনেট বলব- আমাদের সেই লিডার রয়েছেন বিএনপির একক্টিং চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান, যার সে ভিশন রয়েছে, যার সেই ডিটেইল পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক রয়েছে, বাংলাদেশের মধ্যে উনি একমাত্র রাজনীতিবিদ, যিনি বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে ডিটেইল ওয়ার্ক করেছেন, কিভাবে কোন সেক্টরে আমরা বদলে দিতে পারি, কোন কোন পলিসি এডাপশনের মাধ্যমে কিভাবে গ্লোবাল বেস্ট প্র্যাকটিসটাকে আমরা বাংলাদেশে কনটেক্সচুয়াল অ্যাপ্লিকেশন করতে পারি, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে পারার সুযোগ এটা ওয়ান্স ইন লাইফটাইম অপরচুনিটি।
আরটিভি: আরেকটা মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন যেহেতু আপনি উনার উপদেষ্টা আপনাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান কবে দেশে আসবেন?
ড. মাহদী আমিন: দেখুন এদেশের স্বাধীনতার ঘোষক উনার বাবা, এদেশে প্রথম সত্যিকার অর্থে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি উনার বাবা। প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী উনার মা। সুতরাং এই, বাংলাদেশে এসে জনগণের সাথে থাকা, জনগণের পাশে থাকা, উনার মত তার কেউ চান না। যত দ্রুত সেই উপযুক্ত রাজনৈতিক ও আইনি পরিস্থিতি তৈরি হবে তত দ্রুত তিনি আসবেন। অবশ্যই দেশে বিপুল যে জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা রয়েছে, উনাদের কাছে ছুটে আসবেন, ইনশাল্লাহ।
আরটিভি: একেবারে শেষ প্রশ্ন করতে চাই। সেটি হচ্ছে- সবার আগে বাংলাদেশটা আসলে কেমন বাংলাদেশ?
ড. মাহদী আমিন: সেই বাংলাদেশ যেখানে আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে পূর্ণ মর্যাদা নিয়ে থাকবো। সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিধা প্রতিষ্ঠা হবে। সেই বাংলাদেশ যেটা শহীদ প্রেসিডেন্সি জিয়াউর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই বাংলাদেশ যেটা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিনির্মাণ করতে চেয়েছিলেন এবং সেই বাংলাদেশ যেটা আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান বর্তমান বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় নেতা করতে চাইছেন। সবচাইতে নির্যাতিত নেতা হিসেবে প্রত্যেকটা সেক্টর ধরে ধরে যে ডিটেইল ফ্রেমওয়ার্ক এবং রোডম্যাপ তৈরি করেছেন, তার আলোকে আমরা পরিবর্তিত বাংলাদেশে একটা নিরাপদ সবার জন্য, সেই কাঠামো গড়ে তুলতে পারবো। এমন একটা বাংলাদেশ যেখানে প্রত্যেক শ্রেণী এবং পেশার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। সমস্যার সমাধান হবে। সেই বাংলাদেশ যেখানে আমরা প্রত্যেকে যার যার পরিবার নিয়ে এখন যে লাইফস্টাইল তার থেকে আরও বেটার কিছু করতে পারবো। সো ইন টোটাল আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই, যেখানে আমাদের লিভিং স্ট্যান্ডার্ড আরও অনেক বেটার হবে। যার যার জায়গা থেকে পলিটিক্যাল এবং ইকোনোমিক এম্পাওয়ারমেন্ট সেটা আরও ব্রডার হবে এবং আমরা সত্যিই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় মালিকানা ফেরত পাব, সেই স্বাধীন সার্বভৌম এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশই আমাদের সবার আগে বাংলাদেশ।
আরটিভি/কেএইচ