উপনিবেশিক শাসনামলে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পরও ১৯২১ সালে বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল পিছিয়ে পড়া মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষায় অগ্রগতির কথা চিন্তা করে। ইংরেজ শাসকরা সেই উদ্যোগে সফল হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার একশ বছর পর সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত দায়িত্বশীলদের চিন্তা চেতনায় প্রশ্ন উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তুমি কার? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পহেলা বৈশাখ মঙ্গল শোভাযাত্রার অনুমতি দেয় এমনকি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হোলি উৎসবের অনুমতি দেয়া হয়। অথচ ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে পবিত্র কোরআর নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেয়া হয় না। এমনকি তীব্র তাপদাহে স্বস্তির বৃষ্টির আশায় ইসলাম ধর্মাবলম্বনে বৃষ্টি প্রার্থনা করে সালাতুল ইসতিসকার আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়নি। গত বুধবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হলের মাঠে সালাতুল ইসতিসকা আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অথচ গরমের অজুহাতে তাদের খোলা মাঠে নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশ্ন হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রা (মিছিল) প্রচÐ দাবদাহের মধ্যে করা গেলে মুসুল্লিরা এক যায়গায় নামাজ আদায় করতে পারবে না কেন? মুসলমানদের জন্য প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কী মুসলমানদের হাত থেকে ছিনতাই হয়ে গেছে? স্বায়ত্ত শাসিত হলেও ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় জনগণের অর্থে। সেখানে যারা হিন্দুয়ানি ‘মঙ্গল শোভা যাত্রা’ ও ‘হোলি উৎসবের’ অনুমতি দেয় অথচ সালাতুল ইসতিসকারের অনুমতি দেয় না তারা কাদের প্রতিনিধিদ্ব করছেন? ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকারের নামাজ আদায়ের অনুমতি না নেয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তোলপাড় চলছে। নেটিজেনরা নানাভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এবং প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ইসলাম বিদ্বেষীদের কবল থেকে রক্ষার দাবী জানাচ্ছেন। কেউ কেউ লিখেছেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় মুসলমানদের পাড় লেখার জন্য প্রতিষ্ঠা হলেও তা এখন ছিনতাই হয়ে গেছে। মুসলমান নামের কিছু শিক্ষিত হিন্দুত্ববাদী ঢাবিকে বিধর্মীদের আখড়ায় পরিণত করেছে।

তীব্র তাপদাহে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম ধর্মাবলম্বনে বৃষ্টি প্রার্থনা করে সালাতুল ইসতিসকার আদায় করছেন মুসলিম স¤প্রদায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হলের মাঠে সালাতুল ইসতিসকা আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তবে গরমের অজুহাতে তাদের খোলা মাঠে নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেসহ নানা মাধ্যমে।

জানা যায়, তীব্র গরমে যখন জনজীবন বিপর্যস্ত, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের একদল শিক্ষার্থী বৃষ্টি প্রার্থনা করে সালাতুল ইসতিসকার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এতে সাড়া দেয় অন্যান্য বিভাগের ধর্মপ্রাণ সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। নামাজে ইমামতি করার জন্য রাজি হয় প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ ও ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী প্রফেসর মুখতার আহমাদ। কিন্তু প্রশাসনের অনুমতি পাননি শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করেছেন অনেকে। এক শিক্ষার্থী লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জানাজা হতে পারে, শিকদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হতে পারে, ছাত্রলীগের নিয়মিত প্রোগ্রাম হতে পারে, তীব্র গরমেও ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলন হতে পারে, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ভবনের পাশ দিয়ে উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে মিছিল করতে পারে, এসবে কারো কোনো সমস্যা হয় না। অথচ ইসলাম ধর্মের কিছু সামনে আসলেই প্রশাসনের যত সমস্যা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আয়োজকদের একজন ইনকিলাবকে বলেন, আমরা আমাদের বিভাগ ও আরবি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষককে নামাজে ইমামতি করার আহŸান জানালে তারা কেউই সায় দেয়নি। পরবর্তীতে আমাদের বিভাগের এলামনাই প্রফেসর মুখতার আহমাদ এতে ইমামতি করতে রাজি হয়েছেন। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের অবগত করতে আমরা মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রæপে একটি পোস্টার বানিয়ে তাও পোস্ট করি। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এলে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রক্টর আমাদেরকে ডেকে পাঠান। প্রক্টর অফিসে ডেকে নিয়ে দুইজন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রক্টর আমাদেরকে নানাভাবে শাসাতে থাকেন। তারা আমাদেরকে বলেন, তোমাদেরকে কিছুতেই এটা করতে দেওয়া হবে না। যদি অনুমতি ছাড়া তোমরা কিছু করো এবং তোমাদের উপর যদি কোন হামলা হয় সেটার দায়ভার আমরা নিব না।

জানা যায়, ওই দুইজন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রক্টর ছিলেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগেরই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ইমাউল হক সরকার টিটু ও ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদের শিক্ষক ড. এম এল পলাশ।
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, এসিস্ট্যান্ট প্রক্টর ড. পলাশ আমাদেরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ১৩ টি সংগঠনের বাইরে কোন সংগঠনের অনুমতি নেই ক্যাম্পাসে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করার। আর তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ব্যবহার করে ডিপার্টমেন্টের নাম ব্যবহার করেছ, অথচ বিভাগ থেকেই অনুমতি নাওনি! তোমাদের এই লোগো ব্যবহার করাতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যান্ডিং করা হচ্ছে। এরজন্য চাইলেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তোমাদেরকে জবাবদিহি করতে পারে।

তবে তাদেরকে শাসানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রক্টর ইমাউল হক সরকার টিটু। তিনি বলেন, আমরা তো ইসতিসকার নামাজের বিরুদ্ধে নই। তারা যেহেতু আমার বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল তাই চেয়ারম্যানের কল পেয়ে আমি তাদের ডেকে নেই। এবং সেখানে ছাত্র-শিক্ষকের মাঝে যেভাবে কথা হয় সেভাবেই কথা হয়েছিল। তাদেরকে ডেকে নেওয়ার কারণ ছিল তাদের কাজের পন্থাটা সঠিক ছিল না। তারা বিভাগের নাম ব্যবহার করেছে অথচ বিভাগের অনুমতিই নেয়নি।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি অন্য অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রক্টর ড. এম এল পলাশ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের প্রক্টর স্যারই ভালো বলতে পারেন, যেহেতু আমরা একটা ইউনিটের অংশ এবং তিনি তার প্রধান। এতে আমার কোনো মন্তব্য নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মাকসুদুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে চলে। এখানে সবকিছুরই একটা নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়। তারা বড় একটা জমায়েত করবে, কিন্তু কোনো অনুমতি নিবে না তা তো হয় না। তারা যদি অনুমতি নিত তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটা বিবেচনা করে দেখতো অনুমতি দেওয়া যায় কি না। আমরা এই তীব্র গরমে আজকেও একটা সংগঠনকে প্রোগ্রামের অনুমতি দেইনি। ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত ছাত্র ইউনিয়নের প্রোগ্রামের অনুমতি তারা আরো একমাস আগেই নিয়ে রেখেছিল। তারপরও তাদের মাইকের শব্দ শুনে আমরা তাদের বলাতে তারা দ্রæত প্রোগ্রাম শেষ করেছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews