বাতাস থেকে গ্রীনহাউস বা ক্ষতিকর গ্যাসের দূষণ কমাতে এই অদ্ভুত উপায় ব্যবহার করতে চাইছে মাইক্রোসফট। ছবি: রয়টার্স

বাতাস থেকে গ্রীনহাউস বা ক্ষতিকর গ্যাসের দূষণ কমাতে এই অদ্ভুত উপায় ব্যবহার করতে চাইছে মাইক্রোসফট। ছবি: রয়টার্স

পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইড বা দূষণ কমিয়ে আনতে মানববর্জ্য প্রক্রিয়াজাতে নজর দিচ্ছে মার্কিন সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট। এ নতুন পদ্ধতিতে মানুষের বর্জ্য মাটির প্রায় পাঁচ হাজার ফুট নিচে পাঠাবে তারা।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে কাজের ফলে পরিবেশে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ আরও বেড়েছে মাইক্রোসফটের, যা কমিয়ে আনতে চাইছে কোম্পানিটি। এজন্য বাতাস থেকে গ্রিনহাউস বা ক্ষতিকর গ্যাসের দূষণ কমাতে এই অদ্ভুত উপায় মাইক্রোসফট ব্যবহার করবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।

বৃহস্পতিবার এক ঘোষণায় মাইক্রোসফট বলেছে, ‘ভল্টেড ডিপ’ নামের এক প্রতিষ্ঠান থেকে ৪৯ লাখ মেট্রিক টন পরিবেশবান্ধব কার্বন ডাইঅক্সাইড সরানোর চুক্তি করেছে তারা। প্রতিষ্ঠানটি ‘বায়োস্লারি’ নামের এক মিশ্রণ তৈরি করে, যেটি মানুষের বর্জ্য ও কৃষি বর্জ্য মিলে তৈরি হয়। এ মিশ্রণকে মাটির অনেক গভীরে পাম্প করে পাঠিয়ে দেয় তারা, যার বদলে কার্বন ক্রেডিট বা পরিবেশে দূষণ কমানোর স্বীকৃতি পায় কোম্পানিটি।

মাইক্রোসফটের এ চুক্তি আগামী বছর থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী ১২ বছর ধরে চলবে। যতবার কোম্পানিটি এক টন কার্বন মাটির নিচে পাঠাবে ততবার তারা একটি করে ‘কার্বন ক্রেডিট’ পাবে, যা থেকে প্রমাণ মিলবে, পরিবেশ থেকে দূষণ কমিয়েছে প্রযুক্তি জায়ান্টটি।

‘ভল্টেড ডিপ’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া রিচেলস্টাইন বলেছেন, “আমরা বিভিন্ন ধরনের জৈব বর্জ্য নিচ্ছি।

“এটি কাদার মতোন নরম ও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অশোধিত জৈব বর্জ্য, যা বর্তমানে মাটির উপরে সমস্যা তৈরি করছে। আমরা এসব বর্জ্য তুলে নিয়ে মাটির খুব গভীরে রেখে দিই। যাতে পরিবেশ থেকে কার্বন স্থায়ীভাবে সরানো যায়।”

প্রতিষ্ঠানটি যে বর্জ্য ব্যবহার করে তা সাধারণত সম্পূর্ণ কঠিন, তরল বা গ্যাস নয়। এ ধরনের বর্জ্য শোধন করা কঠিন ও অনেক সময় এগুলোকে মাঠের মধ্যে ফেলে রাখা হয়। এতে মাটির পুষ্টি উপাদান পানিতে গিয়ে দূষণ তৈরি করে ও ‘পিএফএএস’ বা ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ নামের ক্ষতিকর রাসায়নিক পানির মাধ্যমে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।

এসব বর্জ্যকে সংগ্রহ করে তা ভূপৃষ্ঠের প্রাকৃতিক পাথরের নিচে গভীরে পাম্প করে দেয় ‘ভল্টেড ডিপ’। এরপর মাটির নিচে সংরক্ষিত কার্বনের পরিমাণ অনুসারে কার্বন ক্রেডিট বিক্রি করে তারা। বর্তমানে এক মেট্রিক টনের জন্য এই ক্রেডিটের মূল্য প্রায় সাড়ে তিনশ ডলার বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইন্ডিপেনডেন্ট।

২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সাড়ে ৭৫ কোটি টন কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিবেশে নিঃসরণ করেছে মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানি। তারা আশা করছে, হাজার হাজার ফুট গভীরে জৈব বর্জ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের কার্বন নির্গমণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে কোম্পানিটি।

ইন্ডিপেনডেন্ট লিখেছে, এখন পর্যন্ত অনেক কার্বন ক্রেডিট কিনেছে মাইক্রোসফট। মোট ৮ কোটি ৩০ লাখ টনের বেশি কার্বন ক্রেডিট পেয়েছে তারা। যার মধ্যে এ বছরই ৫ কোটি ৯০ লাখ টন ক্রেডিট কিনেছে কোম্পানিটি। তবে এ সংখ্যার মধ্যে ‘ভল্টেড ডিপ’-এর সঙ্গে মাইক্রোসফটের চুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নয়।

‘ভল্টেড ডিপ’-এ বিনিয়োগকে পারস্পরিকভাবে লাভজনক বলে বর্ণনা করেছে মাইক্রোসফটের জ্বালানি ও কার্বন রিমুভাল বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ব্রায়ান মার্স।

“তারা মূলত বায়োসলিডস বা জৈব-সলিড নিচ্ছে, যা বর্তমানে বেশিরভাগ সময়ই মাঠে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে পানির বিভিন্ন উৎসে পুষ্টি উপাদান ও অন্যান্য দূষণকারী পদার্থ তৈরি হতে পারে।

“এ পদ্ধতিতে এসব বায়োসলিডকে এমন এক জায়গায় আটকানো যায়, যেখানে এগুলো পরিবেশের জন্য সমস্যা তৈরি করবে না এবং কার্বন বাতাসের সঙ্গেও মিশবে না, অর্থাৎ একসঙ্গে দুই ধরনের লাভ হচ্ছে, যা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews