ঈদুল আযহা আসে বারবার, কিন্তু এবারের ঈদ আমার কাছে একটু আলাদা। পরিবারের স্নিগ্ধ ছায়া ছাড়া, বাবা-মায়ের আদরের স্পর্শ ছাড়া, ভাইবোনদের কলতান ছাড়া, ঈদের দিনটি কেমন যেন একটু ফিকে মনে হয়। আমি আজ বাংলাদেশের বাইরে, ভারতের ক্যাম্পাসে, দ্বিতীয়বারের মতো ঈদ পালন করছি—একাকী, তবুও একাকী নই, কাছের মানুষদের স্মৃতিতে ভরপুর, তবুও তাদের থেকে দূরে।
ঈদের সকালে ঘুম ভাঙে মায়ের কণ্ঠস্বর শোনার তীব্র আকাঙ্ক্ষায়। কিন্তু চোখ খুলেই দেখি ক্যাম্পাসের জানালা দিয়ে ভেসে আসা সকালের রোদ, আর মোবাইলে কয়েকটা মেসেজ—বন্ধুদের থেকে, যারা আমরাই এখন একে অপরের পরিবার।
সকালেই ক্যাম্পাসের মসজিদে নামাজের জন্য সবাই একত্র হই। কেউ বাংলাদেশি, কেউ ভারতীয়, কেউবা অন্য দেশের মুসলিম ভাই-বোন। সবাই মিলে ঈদের জামাত আদায় করি, একে অপরকে কোলাকুলি করি, ঈদের শুভেচ্ছা জানাই। মনে হয়, আমরা যেন এক সুতোয় গাঁথা।
নামাজ শেষে ক্যাম্পাসের কমন রুমে বসে গল্প করি, একসাথে খাবার খাই, হাসি-ঠাট্টা করি। কিন্তু মাঝেমধ্যেই মনটা ছুটে যায় বাড়িতে—মায়ের হাতের রান্নার গন্ধ, বাবার আদরের স্পর্শ, ছোট ভাইয়ের আবদার, বোনের হাসির দিকে।
পরিবার ছাড়া ঈদ পালন করা কতটা কষ্টের, তা কেবল যারা এই অভিজ্ঞতা লাভ করেছে তারাই বুঝতে পারে। কোরবানির মাংস কাটার সময় বাবার পাশে থাকার কথা মনে পড়ে, মায়ের হাতের স্পর্শ মনে পড়ে। ঈদের নতুন জামা কাপড় পরার আনন্দ, পরিবারের সবাই মিলে ছবি তোলার মুহূর্ত—এসব এখন শুধুই স্মৃতি।
কখনো কখনো মনে হয়, আমি যেন অনেক দূরে, একা। কিন্তু আবার বন্ধুদের উষ্ণ হাসি, সহমর্মিতা, আর একে অপরের খোঁজখবর নেওয়ার আন্তরিকতা আমাকে কিছুটা শান্তি দেয়।
এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে যে, ঈদ শুধুই আনন্দের দিন নয়, এটি একাত্মতা, সহমর্মিতা ও ভালোবাসারও দিন। পরিবারের সান্নিধ্য না পেলেও, ক্যাম্পাসে থাকা বন্ধুরা এখন আমার নতুন পরিবার। তাদের সাথে ঈদ পালন করে আমি শিখেছি, ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন কতটা শক্তিশালী হতে পারে।
এছাড়া, বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির মানুষদের সাথে ঈদ উদযাপন করার সুযোগ পেয়েছি, যা আমাকে আরও উদার ও সংবেদনশীল করে তুলেছে।
-রিফাত ইসলাম রানা, শিক্ষার্থী ইইই বিভাগ, আন্না বিশ্ববিদ্যালয়, তামিলনাড়ু,ভারত
