প্রাচীন মায়া সভ্যতার গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের খ্যাতি আজও বিস্ময় জাগায়। এ নিয়ে করা নতুন গবেষণায় মিলল চমকপ্রদ তথ্য। সূর্যগ্রহণের সময় তারা যেভাবে নিখুঁত সূর্য-চাঁদ-পৃথিবীর অবস্থান নির্ণয় করতেন, তা বিস্ময়কর। সেই রহস্যই অবশেষে উদ্ঘাটন করেছেন বিজ্ঞানীরা।
উত্তর ও মধ্য আমেরিকার প্রাচীন সভ্যতা মায়া। খ্রিষ্টপূর্ব দুই সহস্রাব্দ থেকে প্রায় দেড় হাজার খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তাদের বিস্তার। আধুনিক প্রযুক্তি না থাকলেও আকাশ গণনায় ছিল দারুণ দক্ষতা। বছরের কোন দিনে সূর্যগ্রহণ ঘটবে, তা মায়া জ্যোতির্বিদেরা আগেই জানাতে পারতেন।
এই গণনার বড় প্রমাণ মিলেছে ‘ড্রেসডেন কোডেক্স’ নামে একটি পুঁথিতে। ৭৮ পাতার এই পুস্তকে রয়েছে আকাশ-জ্যোতির, ঋতুচক্র, চিকিৎসা ও ক্যালেন্ডার সম্পর্কিত নথি। সেখানে পাওয়া গেছে সূর্যগ্রহণের তারিখ নির্ণয়ের বিশেষ ছক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই গবেষক, আলবানি ইউনিভার্সিটির জন জাস্টসন এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক জাস্টিন লোরি নতুন বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন, মায়ারা চন্দ্রমাসের ধারাবাহিকতা ধরে গ্রহণ পূর্বাভাস দিতেন।
এক চন্দ্রমাসের দৈর্ঘ্য ধরতেন প্রায় ২৯.৫ দিন। ছকে ছিল ১ থেকে ৪০৫ পর্যন্ত চন্দ্রমাসের হিসাব। এই ধারাবাহিক গণনা মিলিয়েই ভবিষ্যতের গ্রহণ নির্দিষ্ট করা হতো।
তবে গ্রহণ নিয়ে ছিল ধর্মীয় আচারও। বিশ্বাস করা হতো— গ্রহণের সময় সূর্য দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই সূর্যদেবতাকে শক্তি ফিরিয়ে দিতে হত উৎসর্গ বা সামাজিক আচার। সিদ্ধান্ত নিতেন পুরোহিত ও শাসকশ্রেণি।
নতুন গবেষণা বলছে, ৪০৫ মাস শেষ হলেই গণনা আবার ১ থেকে শুরু হতো না বরং আরও জটিল পদ্ধতিতে, পূর্বের তথ্য ধরে রেখে প্রেডিকশন তৈরি করতেন মায়া জ্যোতির্বিদেরা। এটাই তাদের গণনাকে করেছে আরও নিখুঁত।
প্রযুক্তি-শূন্য সময়ে দাঁড়িয়ে এই নিখুঁত জ্যোতির্বিজ্ঞান আজও বিস্ময় জাগায়। নতুন গবেষণা জানিয়ে দিল মায়ারা শুধু সভ্যতার নির্মাতা নয়, বিজ্ঞানেও ছিলেন অনন্য।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল