দেশে অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) যেমন—উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্রের রোগ এবং ক্যানসারজনিত কারণে মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে, চিকিৎসা ব্যয়ের প্রায় ৬৮ শতাংশই সাধারণ মানুষকে নিজ খরচে বহন করতে হয়। ফলে চিকিৎসা ব্যয় অনেক পরিবারকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেয় এবং অনেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবাও পান না। সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি হলেও এনসিডি এখনও জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে কাঙ্ক্ষিত গুরুত্ব পাচ্ছে না। এমন প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য অধিদফতর, ব্র্যাক এবং মেডট্রনিক ল্যাবস যৌথভাবে ‘৩৬০ ডিগ্রি এনসিডি কেয়ার ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক একটি প্রযুক্তিনির্ভর, কমিউনিটি-কেন্দ্রিক চিকিৎসা মডেল চালু করেছে।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকালে ব্র্যাক সেন্টার অডিটোরিয়ামে এই উদ্যোগের সম্প্রসারণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রকল্পটির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এতে সরকারি কর্মকর্তা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন সহযোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চল বা চরাঞ্চলের মতো অনেক এলাকায় এখনও সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছায়নি। সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে এসব সমস্যা মোকাবিলা সম্ভব।’ তিনি রোগ শনাক্তকরণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও ডাটাবেইজ তৈরির ওপর জোর দেন।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘স্বাস্থ্যব্যবস্থার পুনর্গঠনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় গুরুত্ব দিতে হবে। এই উদ্যোগ একটি শক্তিশালী সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের উদাহরণ এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক এনসিডি ব্যবস্থাপনায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু সরকারি উদ্যোগে নয়, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় পৌঁছাতে হলে জনগণের আচরণগত পরিবর্তন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি টেকসই কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর জানান, দেশের প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রতি ১০ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তিনি বলেন, ‘অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন এসব রোগ বৃদ্ধির পেছনে দায়ী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, এসব মৃত্যুর ৪০ শতাংশ প্রতিরোধযোগ্য।’

কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ এখন বাংলাদেশের জন্য অন্যতম বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি। এর মোকাবিলায় কমিউনিটি পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ, রোগীর ফলোআপ এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি সমন্বিত ডিজিটাল কাঠামো প্রয়োজন।’

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইন্টেলের সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান এবং মেডট্রনিক ল্যাবসের সাবেক সিইও ও চেয়ারম্যান ড. ওমর ইশরাক। তিনি বলেন, ‘যদি কেউ সুস্থ না হয়, তবে বুঝতে হবে কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি। ফলভিত্তিক চিকিৎসা মডেল শুধু মান উন্নত করে না, খরচও কমায়। ‘৩৬০ ডিগ্রি এনসিডি কেয়ার ইনিশিয়েটিভ’ ঠিক সেই দর্শনের প্রতিফলন।’

উদ্যোগটি ব্র্যাক ও মেডট্রনিক ল্যাবসের যৌথ উদ্যোগে, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও এনসিডিসি (নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল) প্রোগ্রামের সহযোগিতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে ব্র্যাকের কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্য তথ্য সংগ্রহ, রোগ শনাক্ত এবং ফলোআপের কাজ করেন।

সব তথ্য সংরক্ষণ করা হয় ‘স্পাইস’ নামের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে, যা জাতীয় স্বাস্থ্য তথ্যব্যবস্থা (ডিএইচএস২)-এর সঙ্গে সংযুক্ত। এতে চিকিৎসার ধারাবাহিকতা ও নীতিনির্ধারণে সহায়ক তথ্য নিশ্চিত হচ্ছে।

এই মডেলটি ইতোমধ্যে নীলফামারী ও নারায়ণগঞ্জসহ পাঁচটি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়, যেখানে ৭৮ শতাংশ রোগীর উচ্চ রক্তচাপ এবং ৪১ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এদের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ জন চিকিৎসা ছেড়ে দিয়েছিলেন। বর্তমানে এটি সাতটি জেলার ৪৩টি উপজেলায় বিস্তৃত এবং জাতীয় পর্যায়ে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews