এক দিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত, অন্য দিকে উঁচু-নিচু পাহাড়ের সারি। মাঝখানে মসৃণ পথ যেন মিশে গেছে অজানায়! এই পথ ধরে চলতে চলতে কখনও সমুদ্রের লোনা বাতাসের ঝাপটা ছুঁয়ে যাবে আপনাকে, কখনও সবুজ পাহাড়ের সতেজতায় ভরে উঠবে মন। বলছি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের কথা। বর্তমানে এটিই পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ রোড।

খোলা জিপ নিয়ে এই রাস্তা ভ্রমণের কৌতূহল ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। একই সঙ্গে সমুদ্র ও পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে তাই আমরা চার বন্ধু ছুটলাম কক্সবাজারে। দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে গাড়ি ঠিকঠাক করে উঠে পড়লাম। কলাতলি থেকে শুরু হলো আমাদের যাত্রা।


সেদিন আকাশ বেশ মেঘলা। রাস্তার দুইদিকে গাছের সারি নিয়ে ছুটে যাচ্ছে আমাদের গাড়ি। গাছের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে সমুদ্র। বেশ ঠাণ্ডা বাতাস তখন। প্রাণ জুড়িয়ে যায়। বেশ খানিকক্ষণ পর হঠাৎ গায়েব হয়ে গেল গাছের দল! একদম খোলা সমুদ্র তখন চোখের সামনে। প্রবল উচ্ছ্বাসে ঢেউ আছড়ে পড়ছে সৈকতে। আহা! এই দৃশ্য দেখতে দেখতে যেন ছুটে যাওয়া যায় অনন্তকাল!


বামদিকে চোখ ফেরাতেই আরেক মুগ্ধতায় ছেয়ে গেল মন। সবুজের পর সবুজ সেজেছে আপন মহিমায়। ‘চলো না ঘুরে আসি অজানাতে...’- শুরু হলো আমাদের গান। সাগরের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখন যেন বদলে গেছে বামদিকের প্রকৃতি! দেখলাম দূরে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি পাহাড়। পাহাড় আর সমুদ্র ছুঁয়ে রাস্তা হারিয়ে যাচ্ছে বাঁকে বাঁকে। টুপটাপ বৃষ্টি ঝরতে শুরু করেছে এরই মধ্যে। মুগ্ধতার পালে যেন আরেকটু হাওয়া লাগলো। বৃষ্টিভেজা হাওয়া! বৃষ্টিতে সমুদ্র যেন আরও বেশি সুন্দর হয়ে ওঠে, তার দানবীয় রূপটা আরেকটু ঝিকমিকিয়ে ওঠে।


বৃষ্টিকে পেছনে ফেলে ছুটছে আমাদের গাড়ি। আমাদের চোখেমুখে তখন বৃষ্টি, সমুদ্র আর পাহাড় দেখার মুগ্ধতা। ঠিক আড়াই ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছলাম সাবরাং বেড়িবাঁধে। এখানেই মেরিন ড্রাইভের রাস্তা শেষ হয়েছে। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সীমান্তের ওপার। ততক্ষণে বৃষ্টি ধরে এসেছে। ফুরফুরে চমৎকার বাতাসের বিকেল কাটালাম আমরা। তারপর ফিরতি পথে একই সৌন্দর্য সঙ্গে নিয়ে ফিরলাম কক্সবাজার।

প্রয়োজনীয় তথ্য
/এনএ/