বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম ইউসুফের ওপর দলের প্রতিপক্ষ নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনা তদন্তে  মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বেঁধে দেওয়া সাত দিনের সময়সীমা শেষ হলো আজ  (শুক্রবার)। গত ১০ নভেম্বর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার লিখিত নির্দেশ দেওয়া হলেও এ বিষয়ে দলটির দফতর থেকে কোনও খোঁজই নেওয়া হয়নি। উপরন্তু, মনিরুল ইসলামকে মারধরের সঙ্গে জড়িত নুরুল আমীন চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার থেকে রক্ষা করতে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগীয়) মাহবুবুর রহমান শামীম ভূমিকা রাখছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। বাংলা ট্রিবিউনের কাছে বিএনপি মহাসচিবের দেওয়া নির্দেশের একটি ফটোকপি সংরক্ষিত আছে।

বিএনপি মহাসচিবের বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, গত ৪ নভেম্বর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে জনসভার আয়োজন করেছিল উত্তর জেলা বিএনপি। জেলা কমিটির আমন্ত্রণে ওই সমাবেশে প্রায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম ইউসুফ। ওই সময় মিরসরাই উপজেলার বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নুরুল আমীনের নেতৃত্বে তার ওপর হামলা হয়। এতে তাৎক্ষণিক ১২ জন আহত হন। ওই ঘটনায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় আসামি হিসেবে আছেন নুরুল আমীন চেয়ারম্যানও।

অভিযোগপত্র থেকে প্রাপ্ততথ্য, গত ১০ নভেম্বর চট্টগ্রামে হামলার ঘটনায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। নির্দেশে ফখরুল লেখেন, ‘জনাব, রিজভী। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তার (নুরুল আমীন)বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সাত দিনের মধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিন।’

মহাসচিবের চিঠিমির্জা ফখরুলের নির্দেশিত সাত দিনের সময়সীমা শুক্রবার শেষ হলেও অদ্যাবধি মিরসরাইতে এ নিয়ে কোনও প্রতিনিধি দল পাঠায়নি বিএনপির দফতর বিভাগ। অভিযুক্ত নুরুল আমীন চেয়ারম্যানই বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, এই অভিযোগ প্রতিহিংসার কারণে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। আমি সেখানে ছিলাম না।  আমি বেশি রাজনীতি করি, এই জন্য হয়তো।’

ঢাকা থেকে দলের কোনও নেতা তদন্ত করতে যোগাযোগ করেছে কিনা, এমন প্রশ্নে নুরুল আমীন বলেন, ‘কেউ যোগাযোগ করেনি। বরং আমি নিজে যোগাযোগ করেছি। কেন্দ্র থেকে কোনও কিছুই জানানো হয়নি। আমি জানিয়েছি, ঘটনা কী ছিল।’

জানতে চাইলে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা টোটালটা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার পর ব্যবস্থা নেবো।’

কবে নাগাদ প্রতিবেদন হতে পারে, এমন প্রশ্নে রিজভী বলেন, ‘আগে হয়ে আসুক, আমরা টাইম দিয়েছি একটা। এরপর বলা যাবে।’ রিজভী আহমেদ যুক্ত করেন, ‘এটা তো আমাদের ইন্টারনাল বিষয়। এটা তো বাইরে ডিসক্লোজ করার জন্য না। দলের প্রসেস চলছে, কমপ্লিট হলে রেজাল্ট আসবে।’

মহাসচিবের দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়া প্রসঙ্গে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘কবে শেষ হবে না হবে... রিপোর্ট হবে, এরপর মহাসচিব দেখবেন। কাজগুলো চলছে।’

এই মিছিলেই হামলা করে প্রতিপক্ষরাএ বিষয়ে ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম ইউসুফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তার ভাষ্য, ‘আমি দলকে জানিয়েছি। দলই ঠিক করবে, এটার পরবর্তী ফলাফল কী হবে।’

এদিকে, হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত নুরুল আমীন চেয়ারম্যানকে রক্ষা করতে চট্টগ্রামের দায়িত্বে থাকা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম ভূমিকা রাখছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ৪ নভেম্বরের মারামারির ঘটনায় নুরুল আমীনকে রক্ষা করতে শামীমের অবদান রাখার অভিযোগ উঠেছে।

যদিও মাহবুবুর রহমান শামীম এই প্রতিবেদকের প্রশ্ন হেসে উড়িয়ে দেন। বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে কিভাবে দ্বন্দ্ব হবে। এটা আমার এলাকা না। কিছু ছেলেপেলে করেছে। আমার বিভাগে পড়লেও এলাকাটা আমার না। দরখাস্ত হয়েছে, তদন্ত হবে। এরপর দেখা যাক।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র একনেতা জানান, উপজেলা নির্বাচনের সময় তাকে জয়ী করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কিন্তু নুরুল আমীন চেয়ারম্যান শুরু থেকেই মারদাঙ্গায় বিশ্বাসী । চট্টগ্রামেও কয়েকদিন আগে মারামারির ঘটনায় তার ভূমিকা ছিল।

গুরুতর অভিযোগ করেন এই সিনিয়র নেতা, বলেন, ‘নুরুল আমীন জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। কেন্দ্রকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন তিনি। তার পেছনে জামায়াতের স্থানীয় শক্তি রয়েছে।’

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা হয় নুরুল আমীন চেয়ারম্যানের সঙ্গে। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমি কখনও জামায়াত করিনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা করে অনেকে মারামারির ঘটনার কথা বলছে।’

সিনিয়র কয়েকজন নেতা তাহলে কেন অভিযোগ তুলবেন- এমন প্রশ্নে নুরুল আমীন বলেন, ‘আমি বলতে পারবো না।’

মনিরুল ইসলাম ইউসুফসহ নেতাকর্মীদের মারধরের ঘটনা চট্টগ্রামের প্রভাবশালী নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকেও জানানো হয়েছে। এরইমধ্যে স্থায়ী কমিটির সব সদস্যকে অভিযোগপত্রের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি বিস্তারিত জানি না। বিষয়টি তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। এর বেশি বলতে পারবো না।’

আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘মিরসরাইতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা আছে। কয়েকজন আলাদা থাকে। এগুলো ঠিক হয়ে যাবে আশা করি। তদন্ত করার নির্দেশ এসেছে। দেখা যাক কী হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবুর রহমান শামীম বলেন, ‘তদন্তের কোনও দায়িত্ব পাইনি। ঘটনা যা ঘটেছে, অভিযোগ হয়েছে। আমি পাইনি। আমাকে কোনও চিঠিপত্র দেয়নি কেন্দ্র। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও দায়িত্বও দেওয়া হয়নি।’

আরও পড়ুন:

ঝন্টুর পক্ষে এখনও মাঠে নামেননি আ. লীগ নেতাকর্মীরা



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews