অনেক বন্যপ্রাণী, পাখি ও মাছ দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। খুব চেনা প্রাণী ও পাখিগুলোও আজকাল আর দেখা যায় না। হারিয়ে যেতে থাকা প্রাণীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বানর, কাঠবিড়ালি, বেজি ইত্যাদি। পাখির মধ্যে দোয়েল, টিয়া, বক, পেঁচা, ঘুঘু ইত্যাদিরও এখন দেখা মেলে কম।
কিছুদিন আগের একটি ঘটনা। শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের একেবারে খুব কাছে এক বাড়ির গাছে প্রচুর বক বাসা বানিয়ে থাকে। এক গাছে এত বকের উপস্থিতি একটি সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা করেছিল।
একদিন সকালে একজন আমাকে ফোন করে বলল, ওই গাছটিতে বক নিধন চলছে। আমি খবর নিয়ে দেখলাম আসলেই বক নিধন চলছে। খুব নির্মমভাবে বকগুলোর বাসা ভেঙে দেয়া হচ্ছে এবং গাছ থেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি কয়েকটি সংবাদপত্রের সংবাদকর্মীদের এ বিষয়ে জানাই এবং পরে বন কর্মকর্তাকেও জানানো হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়। এরপর অনেক কষ্টে বক মারা বন্ধ করা হয়। কিন্তু গাছটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেক বকই এখন আর সেখানে বাসা বেঁধে থাকছে না বা থাকতে পারছে না। বিষয়টি পরিতাপের।
আরেকটি ঘটনা এই শ্রীপুরেরই। শ্রীপুর বাজারের গরুহাটায় সন্ধ্যায় প্রচুর পাখির সমাগম হয়। পাখির সমাগম হলেই কিছু মানুষ পাখি মারার জন্য উঠেপড়ে লাগে। শ্রীপুর বাজারের এক যুবক যিনি প্রকৃতি ও মানবিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেন, তিনি কিছু ছবি তুলে পাঠিয়েছেন। তার তথ্যমতে, গুলাল দিয়ে ও ফাঁদ পেতে সবার সামনেই পাখিগুলো শিকার করা হয়ে থাকে। এই পাখি শিকারে অংশ নেয় শিশুরাও।
এভাবে পাখি শিকার সত্যিই খুব উদ্বেগের। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন আছে, আছে পাখি শিকার বন্ধে অনেক পদক্ষেপও। কিন্তু সমস্যা হল, অসচেতনতার কারণে একশ্রেণীর মানুষ পাখি নিধন করে চলেছে। যেভাবেই হোক, পাখি ও বন্যপ্রাণী নিধন বন্ধ করতে হবে। শ্রীপুরের এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে এখনও প্রচুর পাখির আনাগোনা হয়।
বিশেষ করে নদীবেষ্টিত শীতলক্ষ্যার তীর ঘেঁষা গ্রাম, বিভিন্ন বাজার ও শাল-গজারি বেষ্টিত এলাকাগুলোতে এখনও পাখির আধিক্য রয়েছে। শীতের সন্ধ্যাগুলোতে এদের কিচিরমিচিরে অসাধারণ এক আবহের সৃষ্টি হয় চারদিকে। কিন্তু যখন পাখি শিকার শুরু হয়, তখন মুহূর্তের মধ্যেই সব কিচিরমিচির বন্ধ হয়ে যায়। পাখিগুলো গাছে আর তখন বসে না। উড়তে থাকে আকাশজুড়ে আর হাহাকার করে বেড়ায়।
পাখি শিকার শুধু নিম্নবিত্তরা করে তা নয়, অনেক উচ্চবিত্তও করে। হাওর ও চর অঞ্চলগুলোতে গাড়ি নিয়ে এসে অনেকে পাখি শিকার করে। এ মানুষরাই আবার বড় বড় কথা বলে প্রকৃতি বাঁচানোর নামে! যারা পাখি শিকার করছে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। পাখিদের বিচরণের জায়গা করে দিতে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে পাখি অভয়ারণ্য গড়ে তোলার জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। এতে পাখি শিকার কিছুটা হলেও বন্ধ হবে। আশা করি এ ব্যাপারে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
সাঈদ চৌধুরী : রসায়নবিদ ও সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর