ডাইনোসরের ইতিহাস নতুন করে লিখল এই জীবাশ্ম?

হাড়টি ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে সংরক্ষিত রয়েছে মিউজিয়ামে। ছবি: ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম

হাড়টি ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে সংরক্ষিত রয়েছে মিউজিয়ামে। ছবি: ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম

আফ্রিকায় পাওয়া সাড়ে ২২ কোটি বছরের পুরানো এক জীবাশ্মের পায়ের হাড় ডাইনোসরের ইতিহাস নতুন করে লিখেছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।

তারা বলছেন, প্রাচীন বা প্রথমদিকের ডাইনোসরদের আকার নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগের অনুমান ঠিক ছিল না। তাদের সেই ধারণা বদলে দিচ্ছে নতুন এই আবিষ্কার।

নতুন পাওয়া এ হাড়টি এক রহস্যময় সরীসৃপ দল সাইলিসরাস-এর। এরা ট্রায়াসিক যুগে পৃথিবীতে বসবাস করত এবং বিজ্ঞানীদের অনুমান, এরা হয়ত প্রথমদিকের ডাইনোসর বা ডাইনোসরের খুব ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

এ নতুন আবিষ্কার থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, প্রথমদিকের ডাইনোসররা বিজ্ঞানীদের অনুমানের চেয়েও আকারে বড় হতে পারে।

এ হাড়ের গল্প শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। ওই সময় এখনকার জাম্বিয়ায় অভিযানে গিয়ে জীবাশ্মাকৃত ফিমার বা উরুর হাড় খুঁজে পেয়েছিলেন ব্রিটিশ গবেষকরা।

সেই সময়ে গবেষকদের মনোযোগ ছিল স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতো দেখতে সরীসৃপদের ওপর। ফলে ওই সময় হাড়টি আলাদা করে রেখে দেওয়া হয়েছিল এবং বহু বছর ধরে সেইভাবেই পড়েছিল এটি। পরে ২০১০-এর দশকে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, সাইলিসরাস নামে এক প্রাচীন প্রাণীর খুঁজে পাওয়া হাড়গুলোর মধ্যে এটি একটি।

সাইলিসরাস হচ্ছে ডাইনোসরের মতো দেখতে এক ধরনের সরীসৃপ, যারা প্রায় ২৪ কোটি থেকে ২০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে বাস করত। বিজ্ঞানীরা ২০১০ সালেই প্রথমবার বুঝতে পারেন যে, এরা এক আলাদা প্রাণীর দল।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিচিত প্রজাতির সাইলিসরাস আকারে প্রায় দুই মিটার লম্বা ছিল ও এরা সম্ভবত পোকামাকড় বা গাছপালা খেত।

সাইলিসরাসরা আসল ডাইনোসর ছিল না কি কেবল এদের খুব কাছের আত্মীয় ছিল তা নিয়ে এখনও বিতর্ক চলছে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাইনোসরের প্রথম সময়ের বিবর্তন বা উৎপত্তি ও পরিবর্তন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দিয়েছে এ গবেষণা।

যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম’-এর পিএইচডি শিক্ষার্থী ও এ গবেষণার প্রধান লেখক জ্যাক লাভগ্রোভ বলেছেন, এ বড় উরুর হাড় থেকে ইঙ্গিত মেলে, প্রথমদিকের বিভিন্ন ডাইনোসরের আকার হয়ত আগে যেমন ভাবা হত তার থেকেও বড় ছিল।

গবেষকরা বলছেন, প্রথমদিকের কিছু ডাইনোসর আর সাইলিসরাস হয়ত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আকারে ছোট হয়ে গিয়েছিল। আরও বড় বড় হাড় পাওয়া গেলে তাদের এই ধারণা আরও পাকাপোক্ত হবে।

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স’-এ। যার থেকে ইঙ্গিত মেলে, নতুন তথ্য খুঁজে পেতে মিউজিয়ামে থাকা বিভিন্ন জিনিস কতটা মূল্যবান হতে পারে।

এ হাড়টি লন্ডনের ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম’-এ ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে রয়েছে, যার গুরুত্ব আগে কেউ বুঝতে পারেনি। ভুলে যাওয়া বিভিন্ন জীবাশ্মও গবেষকদের বড় বড় আবিষ্কারে সাহায্য করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।

গবেষকরা বলছেন, জাম্বিয়ার ট্রায়াসিক যুগের বিভিন্ন পাথর সাইলিসরাসের জীবাশ্মে ভরা। যার মধ্যে একটি প্রজাতি ‘লুতুংগুতালি সিটওয়েসিস’ নামের এবং অন্যান্য পায়ের হাড় এখনও অজানা রয়েছে। কিছু উরুর হাড় অন্যগুলোর দ্বিগুণ দীর্ঘ। যার মানে, একই এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির সাইলিসরাস বাস করত বা একই প্রজাতির বিভিন্ন বয়সের হাড়ও হতে পারে এগুলো।

এ গবেষণায় পাওয়া হাড়ের বৃদ্ধি বা বিকাশের ধরন ওই এলাকায় পাওয়া অন্য হাড়ের থেকে আলাদা। গবেষকরা বলছেন, একই জায়গায় একাধিক সাইলিসরাসের প্রজাতি একসঙ্গে বাস করতে পারে।

এমনটি ঠিক হলে বিজ্ঞানীদের ট্রায়াসিক যুগের পরিবেশ নিয়ে ধারণা বদলে যাবে। সাইলিসরাসরা হয়ত ততটা ছোটখাটো প্রাণী ছিল না, বরং কিছু জায়গায় এরা সবচেয়ে বড় তৃণভোজী প্রাণীও হতে পারে, যা আগের সময়ের প্রধান প্রাণী ডাইসাইনোডন্টস থেকেও লম্বা ও বড়।

নতুন বিভিন্ন হাড় খোঁজার পাশাপাশি পুরানো হাড় নিয়েও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এ ধরনের গবেষণার মাধ্যমে ডাইনোসর কিভাবে বিকশিত হয়েছিল ও এই প্রাচীন প্রাণীরা কিভাবে পৃথিবীতে রাজত্ব করত তা ভালো করে বুঝতে পারবেন তারা।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, হয়ত জীবাশ্মবিদ্যার সবচেয়ে বড় রহস্যের একটির জট খুলতে বড় এক ধাপহতে পারে এই ভুলে যাওয়া পায়ের হাড়।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews