আব্দুল মালেক পাটোয়ারী জ্ঞানার্জন ও লেখালেখি জগতে এক অতিপরিচিত নাম। তার সৃষ্টিশীল ও জ্ঞানগর্ভ সাহিত্য চর্চা চিন্তার জগতে খুবই ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তিনি ইসলামী মূল্যবোধ ও আদর্শের ভিত্তিতে সাহিত্য চর্চায় নিয়মিত রয়েছেন। তার যুক্তিপূর্ণ, তথ্যবহুল ও ক্ষুরধার লেখনি আমাদের জ্ঞানচর্চার অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তিনি পাঠ্যপুস্তক ও শিশু-সাহিত্যের ক্ষেত্রেও বেশ সব্যসাচী লেখক। তার লেখা বিভিন্ন পুস্তক দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যসূচিভুক্ত রয়েছে। তিনি জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখেও আমাদেরকে মূল্যবান দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
বস্তুত আব্দুল মালেক পাটোয়ারী ইসলামী আন্দোলনের একনিষ্ঠ ও বলিষ্ঠ সম্মুখযোদ্ধা। তাই তার লেখনীর প্রতিটি ছত্রেই ইক্বামাতে দ্বীনের কথা স্থান পেয়েছে। তার লেখা গ্রন্থগুলো ইসলামী আন্দোলনের বৃত্তে বৃত্তাবদ্ধ। ইসলামী আন্দোলনের ওপর তার লেখা ‘মানোন্নয়ন সহায়িকা’ এবং ‘নাজাতের সোনালী পথ-১’ নামীয় দু’টি মহামূল্যবান গ্রন্থের ওপর আজকের আলোচনার বিষয়।
মানোন্নয়ন সহায়িকা
আলোচ্য গন্থটি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মানোন্নয়নের জন্য খুবই সহায়ক একটি সংকলন। অলোচ্য পুস্তকটিতে প্রাজ্ঞ লেখক মানোন্নয়ন কী, কেন ও কীভাবে এ প্রসঙ্গে সংক্ষেপে হলেও অনেক মূল্যবান দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বিশ্বনবী (সা.) এর প্রতি আল্লাহ পাকের প্রথম নির্দেশ ‘ইকরা’ (পড়)। বস্তুত মানোন্নয়ন ও অনুশীলনের পূর্বশর্ত হচ্ছে যথাযথভাবে অধ্যয়ন। তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মানবৃদ্ধি করতে অধ্যবসায়ের কোন বিকল্প নেই। আর আব্দুল মালেক পাটোয়ারী সে অধ্যবসায় সহজ করে দিয়েছেন তার সংকলন ‘মানোন্নয়ন সহায়িকা’র মাধ্যমে।
ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠনভুক্ত দীনি ভাই-বোনদের উপরে বর্ণিত মন-মানসিকতা থেকে একেবারে মুক্ত হতে না পারা গেলেও কীভাবে তারা প্রত্যাশিত উদ্দেশ্য হাসিল করবেন; বিশেষ করে মানোন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবেন এদিকে লক্ষ্য রেখেই লেখক এ বইটি সংকলন করার প্রয়াস পেয়েছেন। পুস্তকটির শুরুতেই আমার কাজ, আপনার কাজ, জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, তালীমুল কুরআন, বিষয়ভিত্তিক কুরআন-হাদীস অধ্যয়ন, ঈমান আকীদা, ঈমানের পরীক্ষা, তিন দফা দাওয়াত ও চার দফা কর্মসূচী, সংগঠন, প্রশিক্ষণ, আনুগত্য, বাইয়াত, তাকওয়া, পর্দার সাথে দীন প্রতিষ্ঠায় মহিলাদের দায়িত্ব নিয়ে লেখক আলোচনা করেছেন।
সংগঠন পদ্ধতি, দলীয় গঠনতন্ত্রের চুম্বক বিষয়গুলোসহ নতুন সিলেবাসের আলোকে প্রণীত। এতে নিম্নোক্ত কয়েকটি বইয়ের সার সংক্ষেপ সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় পাঠকের চোখে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। বিশেষভাবে নোটকৃত ডজনখানেক পুস্তকের নাম-সত্যের সাক্ষ্য, চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান, হেদায়াত, ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি, সাফল্যের শর্তাবলী, ইসলামী রাষ্ট্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন, কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সর্বোপরি একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণ ও তার থেকে বাঁচার উপায়, মাসা’য়ালা মাসায়েলসহ জামায়াতে ইসলামীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ইত্যাদি সযত্নে সংযোজিত হয়েছে। আরো সংযোজিত হয়েছে দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় দু’য়া। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনশক্তির দ্রুত মানোন্নয়নে এটি একটি অনন্য পুস্তক বলেই আমার বিশ্বাস। সংকলনটি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের দ্রুত মানোন্নয়নে খুবই সহায়হক হবে বলে মনে করি।
নাজাতের সোনালী পথ-১
লেখকের এ গ্রন্থটি ২০২২ সালে ইউনিক পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত। সূরা আল-হাদীদ ও সূরা আল-মায়েদার অংশ বিশেষ নিয়ে প্রণীত ‘নাজাতের সোনালী পথ-১’। বাজারে দারসুল কুরআন সিরিজের অসংখ্য বই থাকা সত্ত্বেও এ বইটি সংগ্রহে রাখা এ জন্যই জরুরি যে, লেখকের ত্রিশের অধিক সংখ্যক সূচিপত্রের মধ্যে, উত্তম কাজে অগ্রগামী হওয়া, তাহলে বিলম্ব কেন, রিদ্দা ও মুরতাদ, একটি সতর্কবাণী, আল্লাহর ভালোবাসায় সিক্ত যারা, জিহাদবিহীন মৃত্যু মুনাফিকের মৃত্যু, ওলীর পরিচয় ও ব্যাখ্যা, হিজবুল্লাহ ও হিজবুস শয়তানের পরিচয় ইত্যাদি অধ্যয়নে অগ্রসর কর্মী ও দুর্বল দায়িত্বশীলদের চাঙ্গা হওয়ার কথা। দীর্ঘ সাংগঠনিক জীবনে বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতার আলোকে আব্দুল মালেক পাটওয়ারী খুবই সুবিন্যস্ত করে লিখেছেন। যা সচেতন পাঠকমাত্রই উপলব্ধি করার কথা।
১২৮ পৃষ্ঠার ‘মানোন্নয়ন সহায়িকা’র গায়ের মূল্য ১৬০/- টাকা ও ৮০ পৃষ্ঠার ‘নাজাতের সোনালী পথ-১’ বইটির গায়ের মূল ৯০/- টাকা মাত্র। আমি আব্দুল মালেক পাটোয়ারীর মহামূল্যবান গ্রন্থ দু’টির বহুল প্রচার ও প্রসার কামনা করছি।
- সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা
কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট।