ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেছেন, “টিআইবির এই প্রতিবেদনের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এই প্রতিবেদন প্রকাশ আসলে এক স্টান্টবাজি হয়ে গেছে।” 

ঢাকা ওয়াসার অভিযোগ, অনুমানভিত্তিক এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে তাদের জনগণের কাছে ‘হেয় প্রতিপন্ন’ করতে চেয়েছে টিআইবি।

টিআইবি গত ১৭ এপ্রিল ‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক তাদের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, ঢাকা ওয়াসার ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করেন।

আর বাসাবাড়িতে এই পানি ফোটাতেই বছরে পোড়ানো হচ্ছে ৩৬ কোটি ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ঘনমিটার গ্যাস, যার আর্থিকমূল্য ৩৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

টিআইবির এই প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা ওয়াসা ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম বলেন, “ঢাকা ওয়াসার নীতি ও আইন, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবা নিশ্চিৎকরণ, সেবাগ্রহীতাদের অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টি- এ তিনটি বিষয় ছিল টিআইবির গবেষণার উদ্দেশ্য। কিন্তু তাদের প্রতিবেদনে এই তিনটি বিষয় নিয়ে যে ডেটা এসেছে তার সবই অনুমাননির্ভর। এই গবেষণায় কোনো পেশাদারিত্ব তো নেইই, সেই সঙ্গে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও নেই।”

রাজধানীর ৯১ শতাংশ বাসিন্দা ওয়াসার পানি ফুটিয়ে পান করেন- টিআইবির এই তথ্য প্রত্যাখ্যান করে ঢাকা ওয়াসা এমডি বলেন, “ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশনের মানদণ্ড অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসার পানি ১০০ ভাগ সুপেয়। এই তথ্য সম্পূর্ণ হাইপোথেটিক্যাল এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। ঢাকা শহরে বসবাসরত এক কোটি ৭২ লাখ লোক সবাই পানি ফুটিয়ে পান করেন না। ফুটানোর প্রয়োজনও পড়ে না।”

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার গ্রাহকদের ৫১ দশমিক পাঁচ শতাংশ বলছেন পানি অপরিষ্কার, ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ গ্রাহক পানিতে দুর্গন্ধ থাকার কথা বলেছেন। আর ৩৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ গ্রাহক বলছেন, সারা বছরই পানি অপরিষ্কার ও দুর্গন্ধযুক্ত থাকে।

তাকসিম এ খান দাবি করেন, উৎস থেকে গ্রাহকের জলাধার পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসার পানি শতভাগ বিশুদ্ধ ও নিরাপদ।

তিনি জানান, গত বছরের ১১ নভেম্বর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসার ১০টি মডস জোনের আওতাভুক্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৪৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর ই-কোলাই, কলিফর্মসহ অন্যান্য জীবাণুবিষয়ক ও ভৌত রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয়।

এই পরীক্ষার ফলাফলে ওয়াসার পানিতে কোনো ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন প্রকৌশলী তাকসিম।

“ই-কোলাই পরীক্ষায় ঢাকা গভীর নলকূপে শতভাগ, সরবরাহ লাইনে ৮৪.৩৮ শতাংশ, গ্রাহকের জলাধার ৬০.২৮ শতাংশ সন্তোষজনক অবস্থান পাওয়া গেছে।”

ঢাকার ছয়টি বস্তি এলাকায় ১২০৫টি ওয়াটার পয়েন্ট ও আরও ২০টি বস্তি এলাবার ১৯৪১টি পয়েন্ট থেকে নমুনা পানি সংগ্রহ করে আইসিডিডিআর,বি এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ল্যাবে নিয়ে যায় ঢাকা ওয়াসা।

তাকসিমের দাবি, সে পরীক্ষাতেও পানিতে কোনো ফিক্যাল কলিফর্ম পাওয়া যায়নি।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াসার ট্রিটেমন্ট প্লান্টের সক্ষমতা না থাকায় নগরে প্রতিদিনের ৯৬ শতাংশ পয়ঃবর্জ্য অপরিশোধিত অবস্থায় বিভিন্ন খাল হয়ে আশপাশের নদীতে গিয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে ওয়াসা এমডি বলেন, এডিবির ১৭ হাজার কোটি টাকা অর্থায়নে এসব প্লান্টের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন তারা। ঢাকায় তিনটি বৃহৎ পানি শোধনাগার প্রকল্প নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।

গ্রাহকদের হয়রানি ও দুর্নীতি নিয়ে টিআইবি যেসব অভিযোগ এনেছে, তা প্রত্যাখ্যান করে তাকসিম এ খান বলেন, “এখন পানির সংযোগ পেতে অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ থাকায় অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। ঢাকা ওয়াসার সকল পানির মিটারকেই অটোমেশনের আওতায় আনা হবে।”

এছাড়াও পানির পাম্পে সুপারভাইজরি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেটা অ্যাকুইজিশন (এসসিএডিএ) সিস্টেম স্থাপন করে ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ দ্বারা গভীর নলকূপের অপারেশন, কন্ট্রোল ও মনিটরিংয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করে ঢাকা ওয়াসার পরিচালনা ব্যয় কমানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

গত দশ বছরের বিভিন্ন উন্নয়ন সূচক তুলনা করলে দেখা যায়, প্রতি বছর রাজস্ব খাতে আয় ৬৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৮ শতাংশ হয়েছে। এ খাতে এ বছরের আয় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। সিস্টেম লস ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।  এ খাতে ওয়াসা আয় করেছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ঢাকা ওয়াসা এ বছর প্রায় ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় করেছে।

ওয়াসার বোর্ড ‘অকার্যকর’ বলে টিআইবি যে অভিযোগ এনেছে, তা ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তাকসিম এ খান।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews