সেনাবাহিনী থেকে সাইবার নিরাপত্তা পেশায় যাওয়ার পথ সবসময় সহজ হয় না। ছবি: রয়টার্স

সেনাবাহিনী থেকে সাইবার নিরাপত্তা পেশায় যাওয়ার পথ সবসময় সহজ হয় না। ছবি: রয়টার্স

সংঘাতপূর্ণ কোনো এলাকার এক ফাঁকা গ্রামে পায়ে হেঁটে টহল দেওয়া ও বড় কোনো প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি অপারেশনস সেন্টার বা এসওসি-এ কাজ করা– দুটোই একেবারে আলাদা জগতের বিষয় মনে হতে পারে।

তবে সাবেক পদাতিক সেনা জেমস মারফি বলেছেন, রাস্তার পাশে যখন কোনো আবর্জনার স্তূপ দেখা যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে, আজ বোধহয় কেউ ময়লা তুলতে আসেনি। সেই সময় “আমাদের ঘাড়ের পেছনে লোমগুলো যেন দাঁড়িয়ে যায়, অদ্ভুত এক সতর্কতা জেগে ওঠে মনে।”

আর ঠিক এ ধরনের সতর্কতাই সাইবার নিরাপত্তা খাত চায়, বলেন মারফি। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ‘ফোর্সেস এমপ্লয়মেন্ট চ্যারিটি’তে সাবেক সেনা ও সেখানকার পরিবারের জন্য পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন তিনি।

বিবিসি লিখেছে, গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির জন্য সাইবার আক্রমণ এখন একটা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে উঠেছে, তা সে সরাসরি সাইবার অপরাধ হোক বা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতই হোক না কেন।

যুক্তরাজ্যের সশস্ত্র বাহিনী সম্প্রতি নতুন এক প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম শুরু করেছে, যাতে নতুনদের সাইবার দক্ষতা বাড়ানো যায়। এখানে যারা ভালো করবেন, তাদের জন্য সশস্ত্র বাহিনীতে বেশি বেতন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

তবে অনেক দিন ধরেই ঠিক উল্টো দিকেও এক নিরবচ্ছিন্ন স্রোত চলছে। যুক্তরাজ্যে ‘ফোর্সেস এমপ্লয়মেন্ট চ্যারিটি’র টেকভেটস প্রোগ্রাম সাধারণত প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ জনের কর্মসংস্থানে সহায়তা করতে পারেছে, যার মধ্যে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ কর্মী সাইবার নিরাপত্তার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।

এটা খুবই জরুরি। কারণ ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে’র ডেটা অনুসারে, গোটা বিশ্বে সাইবার নিরাপত্তার কাজে কর্মী ঘাটতি রয়েছে ৪০ লাখ। যুক্তরাজ্য এ কর্মী ঘাটতি কমিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছে, যেখানে সাইবার হামলার শিকার হয়েছে খুচরা বিক্রেতা দুটি শীর্ষ কোম্পানি।

তবে সেনাবাহিনী থেকে সাইবার নিরাপত্তা পেশায় যাওয়ার পথ সবসময় সহজ হয় না। ১০ বছর রয়্যাল আর্টিলারিতে কাজ করেছেন যুক্তরাজ্যের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান তথ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো আহদ্দৌদ। তিনি নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, বসনিয়া ও জার্মানিতে সেবা দিয়েছেন এবং ১৯৯৯ সালে অবসরে যান।

তিনি বলেছেন, “আমি বুঝতে পারলাম বিশ্ব বদলে যাচ্ছে।” পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে অনলাইন কোর্স করেন ও পরে পিসি সারানোর বিষয়ে পড়াশোনা করেন আহদ্দৌদ।

সেখান থেকে সাপোর্ট ডেস্কের কাজ শুরু করেন ও পরে ‘বিএই সিস্টেমস’ ও ‘ইউনিভার্সাল স্টুডিও’-এর মতো কোম্পানির সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তার কাজ শুরু করেন তিনি।

আহদ্দৌদের সামরিক প্রশিক্ষণ সবসময় তার সাইবার নিরাপত্তার কাজের পদ্ধতিতে প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেছেন, একজন অফিসার তাকে বলেছিলেন, একজন সৈনিক কত গভীরে গর্ত খোঁড়ে তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। “যখন গুলি আসবে তখন ঠিকই আপনি বড় গর্ত খোঁড়ার শক্তি খুঁজে পাবেন।”

সঠিক দক্ষতা হচ্ছে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করা। যেমন– ভাঙা সরবরাহ চেইন ঠিক করা বা যোগাযোগ বন্ধ বা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তা সামলানো।

“এ মানসিকতা সবসময়ই সেনাদের কাজের মধ্যেই ছিল। আপনি কীভাবে এটি ঠিক করবেন?” তিনি আরও বলেছেন, সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সব সময় চিন্তা করেন “ঝুঁকি, প্রতিরক্ষা ও প্রতিরক্ষার স্তর” নিয়ে।

আর এ বিষয়টি “খুব সুন্দরভাবে মিলে যায়” সাইবার সুরক্ষার সঙ্গে, যেখানে সবসময় ঝুঁকি থাকে ও তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হয়।

“আপনাকে এর আশপাশে কাজ করতে হবে ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারতে হবে। কারণ এটি কখনোই ঠিক যেমন আপনি আশা করেন সেভাবে ঘটবে না।”

এজন্য ব্লু টিম বা রক্ষা দলের কাজের জন্য সাবেক সামরিক সদস্যরা বিশেষভাবে উপযোগী, বলেছেন সাইবার নিরাপত্তা নিয়োগ সংস্থা ‘এলটি হার্পার’-এর সহযোগী পরিচালক ক্যাথরিন বার্ন।

এ ধরনের কাজের মধ্যে পড়ে নিরাপত্তা পরিচালনা, ঘটনা ঠেকানো ও ফরেনসিক বিশ্লেষণ, যা ব্লু টিমের কাজ। অন্যদিকে রেড টিমের সদস্যরা হলেন নৈতিক হ্যাকার, যারা সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বের করেন ও প্রায়ই একা কাজ করতেই পছন্দ করেন।

বার্ন বলেছেন, সাবেক সামরিক সদস্যরা কেবল “কঠোর পরিশ্রমীই নন”, বরং তারা দলগত হয়ে ভালোভাবে কাজ করতে এবং চাপের মধ্যেও শান্ত থাকতে পারেন। আর এসব “পরিস্থিতির কাজ অনেকটাই আসলে বিপর্যয়পূর্ণ।”

তবে সাইবার নিরাপত্তা জগতেরও প্রবীণদের দেওয়ার মতো অনেক কিছু রয়েছে। ক্রিস্টাল মরিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন, কারণ নতুন একটি ভাষা শিখতে চেয়েছিলেন তিনি।

মারফি বলেছেন, এখন নিয়োগকর্তারা সাবেক সামরিক সদস্যদের নানা দক্ষতা সম্পর্কেও সচেতন হয়েছেন।

“একবার কোনো নিয়োগকর্তা কোনো সাবেক সামরিক সদস্যকে নিয়োগ করলে তারা এমন আরও কর্মী পাওয়ার চেষ্টা করবেন।”



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews