বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখে খাবারের পাতে ইলিশ না রাখতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সমাজের অন্য শ্রেণি পেশার মানুষের মতোই সাড়া দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা। এ কারণে এ বছর ‘সরকারিভাবে নিষিদ্ধ’ ইলিশের বাজার তেমন চড়া ছিল না, একইসঙ্গে বিকল্প মেন্যুর দিকে ঝুঁকে পড়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীসহ সমাজের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলেছেন, আবহমানকাল থেকেই পহেলা বৈশাখ বাঙালি উদযাপন করে আসছে মেলা, হালখাতাসহ নানা ভাবে। দিনটিতে ঘরে ঘরে ভালো খাবারের আয়োজনও নিয়মিত অনুষঙ্গ। তবে পান্তা কিংবা ইলিশ কখনোই পহেলা বৈশাখের অনুষঙ্গ ছিল না। নব্বুইয়ের দশকের শেষের দিকে রাজধানীতে নাগরিক আয়োজনে পহেলা বৈশাখের প্রচলন হলে সেসময় ইলিশ দিয়ে পান্তা খাওয়ার রীতি চালু হয়। দ্রুতই পান্তা-ইলিশ পহেলা বৈশাখের সমার্থক হয়ে ওঠে। কিন্তু, বৈশাখ অর্থাৎ এপ্রিল মাস জাটকা ইলিশের নদী থেকে সাগরে ফিরে যাওয়ার সময়। তাই জাটকা নিধন রোধে এসময় সরকারিভাবে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ। এ কারণে পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাওয়াকে বরাবরই নিরুৎসাহিত করা দরকার।

পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ বর্জনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়কালকে ইলিশের প্রজনন ও বর্ধনকাল হিসেবে গণ্য করে মৎস্য অধিদফতর। এ কারণে এ সময়ে ইলিশ মাস শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাওয়ার প্রচলন ঘটার কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ জাটকা ইলিশ নদী ও সাগরে ধরা হয়ে থাকে। সরকারিভাবে বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করা হলেও এবং বিভিন্নভাবে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা থাকলেও এ সময়ে জাটকা ইলিশ শিকার থামছেই না। গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার ব্যাপারে নানা রকম লেখা ও মন্তব্য প্রকাশিত হচ্ছে কয়েক বছর ধরেই। তবে গত বছর এ বিষয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাদ্য তালিকায় না রাখার আহ্বান জানালে বদলাতে শুরু করে পরিস্থিতি। এ বছরও তিনি বৈশাখে ইলিশ বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। তার এ আহ্বানে বিপুল সংখ্যক মানুষ সাড়া দেওয়ায় গত সপ্তাহে হুট করে পড়ে যায় ইলিশের দর। দলীয় নেতা-কর্মীরাও প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।             

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এ বছর পান্তা ইলিশের পরিবর্তে দলের নেতা কর্মীদের অনেকেই খিচুড়ি, সব্জি, বেগুন ভাজা, মরিচ ভাজা ও ডিম ভাজাই রেখেছেন তাদের পহেলা বৈশাখের খাদ্য তালিকায়। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পান্তা ইলিশের বিকল্প একটি খাদ্য তালিকা গত মঙ্গলবার ঘোষণা করেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। সেই মেন্যু অনেকেই মেনেছেন বলে জানিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আপনারা ইলিশ খাবেন না। ইলিশ ধরবেন না। পান্তা-ইলিশের পরিবর্তে খিচুড়ি, সব্জি, বেগুন ভাজা, ডিম ভাজা ও মরিচ ভাজা খাবেন। সেসময় পহেলা বৈশাখের সঙ্গে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নাই বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইলিশ খেতে বারণ করায় এবারও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ইলিশ খাওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। তারা জানিয়েছেন, তারা বৈশাখে পান্তা ইলিশের বিকল্প হিসাবে খিচুড়ি, সব্জি, বেগুন ভাজা, মরিচ ভাজা ও ডিম ভাজা রেখেছেন।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনেও খাদ্য তালিকায় খিচুড়ি, সব্জি, বেগুন ভাজা, মরিচ ভাজা ও ডিম ভাজা রাখা হয়েছে। সকালে কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈশাখের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে অনেকেই এই খাবার সেখানে দেখেছেন বলে বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পহেলা বৈশাখের খাদ্য তালিকা

তাছাড়া সকালে সেখানে পরিবেশন করা হয়েছে নাড়ু, সন্দেশ, মোনাক্কা ও খই এসব। বৈশাখ উপলক্ষে গণভবনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পদচারণায় সকাল থেকেই ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা গণভবনের গেটে জড়ো হতে থাকেন। সকাল নয়টা থেকে মূল গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। এরপর প্রধানমন্ত্রী গণভবনের মাঠে এসে নেতা কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় সেখানে নৃত্য পরিবেশন ও বৈশাখী আমেজের বিভিন্ন গান পরিবেশন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সেখানে উপস্থিত সবাই তা উপভোগ করেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পহেলা বৈশাখে ইলিশ খেতে হবে এমন কোন বাধা ধরা নিয়ম তো নাই। তাছাড়া বৈশাখের পরে ছাড়া আমি ইলিশ খাই না। যখন বৃষ্টি হবে, লোনা পানি সাগরে চলে যাবে তখনকার ইলিশ মজা। ইলিশ ছাড়াও পহেলা বৈশাখ পালন করা যায়। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখে ইলিশ খেতে হবে এমন রেওয়াজে আমি বিশ্বাসী নই। 

জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর অপর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্ধারিত খাদ্য তালিকা দিয়ে সকালে এবং দুপুরে খেয়েছি। আমার বাসায় ইলিশ রান্না হয়নি। তিনিও বলেন, এই সময়ের ইলিশ আসলে সুস্বাদুও হয় না।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, আমার বাসায় ইলিশ রান্না হয়নি। আমি ও আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা পহেলা বৈশাখে বিশেষ কোনও খাবার খাইনি। নিয়মিত খাবারই খেয়েছি। বৈশাখ উপলক্ষে বাজার থেকে ইলিশ কেনাও হয়নি বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আমার বাসায় ইলিশ কেনা হয়নি। রান্নাও হয়নি ইলিশ।

জানতে চাইলে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইলিশ নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্ধারিত খাদ্য তালিকা অনুসরণ করেছি। 

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ বলেন, পহেলা বৈশাখ উৎসব পালন করেছি। তবে পান্তা-ইলিশের উৎসবে মিলিত হইনি। পরিবারের সদস্যরাও খাদ্য তালিকায় পান্তা ইলিশ রাখেননি।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাক পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, পান্তা ইলিশ উৎসব হয়নি। পরিবারে সদস্যসহ সবাই মিলে আজকের দিনে পান্তা-ইলিশ বর্জন করেছি। ইলিশ আজকে নয়, অন্যদিন খাবো।      

মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক বলেন, পান্তা ইলিশ নিজেও খাইনি, বাসার অন্যরাও খায়নি।   

/টিএন/   



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews