নির্বাচন কমিশন আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে এরই মধ্যে দুই দফায় তফসিল ঘোষণা করেছে। তবে বিএনপি নির্বাচন আরও পেছানোর দাবি করছে। এ পটভূমিতেও বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম কিনছেন, নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণাও চালাচ্ছেন। অন্যদিকে নির্বাচন সুষ্ঠুর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সব মিলিয়ে নির্বাচনি আমেজ তৈরি হয়েছে দেশে, এখন শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের অপেক্ষা।
দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে ‘নির্বাচনি আমেজ’ শীর্ষক বৈঠকিতে এমন অভিমতই ব্যক্ত করেন রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর শুক্রাবাদে বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিও থেকে এ আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করে এটিএন নিউজ। পাশাপাশি বাংলা ট্রিবিউনের ফেসবুক ও হোমপেজে লাইভ দেখা যায় বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি।
সুনীল শুভ রায়মাহমুদুল হকের সঞ্চালনায় বৈঠকিতে অংশ নেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলির সদস্য সুনীল শুভ রায়, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, আওয়ামী লীগের বন-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, দেশ টিভির সাংবাদিক সুকান্ত গুপ্ত অলক, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান এবং বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম।
বৈঠকের শুরুতেই বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘নির্বাচন এক মাস পেছানোর জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তার অনেক কারণ রয়েছে। আর নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন পেছানোরও সুযোগ রয়েছে। যেহেতু বছরের শেষ সময়,এই সময়ে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা ছুটিতে থাকবেন। বড়দিন উপলক্ষে ছুটিতে থাকবেন তারা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে গায়েবি মামলা হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা এখন জামিন নেওয়ার জন্য ব্যস্ত। তারা নির্বাচনি আমেজে নেই। এসব কারণেই আমরা চেয়েছি এক মাস পেছানোর। কমিশন যতই বলুক আর সময় নেই পেছানোর,কিন্তু আমরা বলছি সময় অবশ্যই রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী পেছানো সুযোগ রয়েছে।’
এমরান সালেহ প্রিন্সতিনি বলেন, ‘কমিশন অন্যান্য নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করে দফায় দফায়। কিন্ত এবার তারা করেনি। বর্তমান সরকার যে প্রশাসন সাজিয়ে রেখেছে, কমিশন সেই প্রশাসন দিয়েই নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু ইউএনও, এসি, ডিসি, এসপি পরিবর্তন না করা পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকার যা বলছে, কমিশন তা-ই করছে। এটা কমিশনের আচরণ হওয়া উচিত নয়।’
জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুনীল শুভ রায় বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। ফলে যেকোনও দল যেকোনও কিছু চাইতেই পারে। বিএনপিও নানা কারণে নির্বাচনের সময় পেছানোর জন্য বলতেই পারে। কিন্তু আমরা জাতীয় পার্টি নির্বাচনে বিশ্বাসী। আমরা নির্বাচন চাই।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে আমরা কমিশনের সঙ্গে দেখা করেছি, আলাপ করেছি। কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে যা বলছে, তাতে আমাদের আস্থা রয়েছে। আমরা চাই নির্বাচন সঠিক সময়েই হোক। আমাদের পেছানোর কোনও দাবি নেই।’
দেলোয়ার হোসেনদেশে বর্তমানে নির্বাচনি সুবাতাস বইছে বলে মন্তব্য করে সাংবাদিক সুকান্ত গুপ্ত অলক বলেন, ‘নির্বাচন পেছানোর দাবি যেকোনও রাজনৈতিক দল করতেই পারে। যেহেতু এটি একটি গণতন্ত্রিক দেশ। এখন প্রশ্ন হলো দেশের নির্বাচনি আমেজটা কেমন হচ্ছে এবং নির্বাচন সঠিকভাবে অনুষ্ঠিত হবে কিনা। দেখতে পাচ্ছি সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে। বর্তমানে নির্বাচনি সুবাতাস বইছে। মনোনয়নপত্র কেনা হচ্ছে। নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা হলো। কিন্তু এর মধ্যেই যেকোনও দল যখন বলে, নির্বাচন পেছাতে হবে, এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনি আমেজটি একটু ভিন্ন দিকে চলে যায়। কিন্তু হওয়া উচিত, যে পরিস্থিতিতেই আছি না কেন, এটাকেই কীভাবে সফল করা যাবে। আবার আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবে কি থাকবে না। নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও এতকিছু ভাবাচ্ছে বিএনপিকে!’
তিনি বলেন, ‘তারা বলছেন বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবেন কি থাকবেন না? এটা কি একদিনের সিদ্ধান্ত? যতই ছুটি থাকুক তারা নির্বাচনে থাকতে হলে আনেক আগে থেকেই সিলেক্টেড থাকতে হয়। এখানে একটা বাজেটের বিষয় রয়েছে। ফলে বিদেশি পর্যবেক্ষকের বিষয়টি অযৌক্তিক বলে আমি মনে করি।’
সুকান্ত গুপ্ত অলকআওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে কমিশন। প্রথমবার তারিখ ঘোষণা করার পর সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কমিশন নির্বাচন কিছুদিন পেছালো। নির্বাচন কমিশন কোনও ইচ্ছা ও অনিচ্ছায় চলে না, এমনকি সরকারের কথাতেও চলে না। কমিশন একটি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সেই আইন অনুযায়ীই কমিশন কাজ করে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩০ ডিসেম্বর। ডিসেম্বর মাসটি বছরের শেষ মাস। এই সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা থাকে না। বছরের শেষ সময় হওয়ায় সাধারণ মানুষ অনেক ব্যস্ত থাকেন। এছাড়া আরও নানা কারণে কমিশন চেয়েছে বছর শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচনটি সম্পন্ন হোক। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও আপত্তি নেই।’
ডা. জাহেদ উর রহমানজাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন শুরু হলে নাকি সবকিছু নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে যায়— এটা দেলোয়ার হোসেন সাহেব বলেছেন। এভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। সংবিধানে তা কিন্তু বলা নেই। কমিশন যদি চায় তাহলে সরকারের প্রশাসন কমিশনকে সহযোগিতা করবে। এছাড়া তফসিল ঘোষণা করার পর আওয়ামী লীগ মিষ্টি বিতরণ করেছে,শোডাউন দিয়েছে, খুশি হয়েছে। এর অর্থ কী? এর অর্থ বুঝতে খুব বেশি জ্ঞানী হতে হয় না। ফলে বোঝাই যায় কমিশন কীভাবে ইন্টারপ্রেট হচ্ছে। এর আগেও ২০০৮ সালে দুবার তফসিল পেছানো হয়েছে,একটি বড় দলকে নির্বাচনে আনার জন্য। এবারও কি পেছানো সম্ভব নয়? অবশ্যই সম্ভব। কমিশন নির্বাচন না পিছিয়ে,একটি বড় দলের কথা না শুনে নির্বাচন দিতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ যে দেশের মালিক তা বোঝানোর অন্যতম কাজ হলো তার ভোটাধিকার প্রদান করা। কিন্তু ভোটাধিকার কতটুকু দিতে কমিশন কাজ করছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আমরাও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সরকার ও কমিশনকে পর্যবেক্ষণ করছি। সারাদেশে গ্রেফতার-হামলার বিষয়ে কমিশন একটি কথাও তো বলেনি, কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর তা বলার দরকার ছিল।’
বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপ আহ্বান করার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন সুবাতাস বইতে শুরু করেছিল। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে সংলাপ হয়েছে। সংলাপ আহ্বানের সঙ্গে সঙ্গেই দেশে আমেজ তৈরি হয়েছে। জাতি খুশি হয়েছে, নির্বাচনের সুবাতাস এখান থেকেই শুরু হয়েছে।’
শফিকুল ইসলামতিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে,জাতি খুশি হয়েছে। কারণ, আমাদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা রয়েছে,নতুন বছরে তারা স্কুলে যাবে, তাদের ফল প্রকাশ করতে হবে। সবকিছু বিবেচনা নিয়েই এই তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে এই নির্বাচনকে বাধা না দিয়ে সহযোগিতা করুন,নির্বাচনি আমেজ তৈরি হয়েছে,সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দিন। ঘরে-বাইরে নির্বাচনি বাতাস বইছে— এটা স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews