বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে ফের নেতাকর্মীদের তীর্যক প্রশ্নের মুখে পড়লেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে পরিস্থিতি শান্তভাবে মোকাবিলা করে তিনি নেতাকর্মীদের সব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছেন।

রবিবার (২৪ মার্চ) বিকালে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বক্তব্য শুরু করলে তাকে উদ্দেশ করে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন। তখন মঞ্চ এসে নেতাকর্মীদের প্রশ্ন করার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

এসময় ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এইচএম রাশেদ দর্শক সারি থেকে উঠে মঞ্চের কাছে এসে জানতে চান, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সর্বশেষ যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তাতে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়া হয়নি কেন?’ এর জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কে বলেছে আপনাকে এই কথা। অবশ্যই মুক্তি চাওয়া হয়েছে। ডোন্ট টেল এ লাই।’ তার এ জবাবে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।

এ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আবেগ দিয়ে যুদ্ধ জয় করা যায় না। এখানে অনেকে অনেক কথা বলছেন। নেত্রী গ্রেফতার হওয়ার পরে যখন আমরা কর্মসূচি দিয়েছি, তখন কতজন এসেছেন আর কতজন আসেননি আমরা তা দেখেছি। কারা কারা কর্মসূচি থেকে আস্তে আস্তে চলে গেছেন, সেটাও দেখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই নির্বাচনের মধ্যে কারা বেরিয়ে এসে প্রতিবাদ করেছেন, সেটাও দেখেছি। সুতরাং শুধু আবদ্ধ ঘরে নিরাপদ জায়গায় থেকে এভাবে কথা বললে শত্রুকে পরাজিত করতে পারবেন না।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ভুল না সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল– নেতাকর্মীদের এ প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের যাওয়ার আগে নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। খালেদা জিয়ার নির্দেশেই আমরা নির্বাচনে গিয়েছি। নির্বাচনের পরেও তার নির্দেশেই ঐক্য ধরে রাখতে কাজ করেছি।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘দেশনেত্রীর নির্দেশেই আমরা নির্বাচনকে একটি হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, আমাদের সাধারণ সভায় দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে গণতন্ত্রের পক্ষে ঐক্য গড়ে তুলতে তিনি পরিষ্কার করে বলে গিয়েছিলেন। এই ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করতে ঐক্য নিয়ে লড়াই করতে বলেছিলেন।’

বিএনপিকে ভাঙার ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি কোনোদিন নিঃশেষ হবে না। বিএনপির রাজনীতি জনগণের রাজনীতি। এর আগে অনেকে বিএনপিকে ভাঙতে চেয়েছিল। এরশাদ সরকার ভাঙতে চেষ্টা করেছে। এর পরে আওয়ামী লীগও ভাঙতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। এখন আবারও বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা চলছে। কিন্তু একজন কর্মীকেও সরিয়ে নিতে পারেনি। এখন সময় কঠিন। এই কঠিন সময় অতিক্রম করতে হবে অত্যন্ত ধৈর্য্য ও সাহস নিয়ে।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘সরকার মনে করছে, এভাবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকবে! এটা অসম্ভব। হিটলার থাকেনি, মুসোলিনি থাকেনি, ফেরাউন নেই, আপনারাও থাকবেন না। জনগণ সব মামলা প্রত্যাহার করে যেভাবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এসেছিল, খালেদা জিয়াও সেভাবে কারাগার থেকে মুক্ত হবেন।’

বিএনপির সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুল হকের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওবায়দুল হক স্মৃতি সংসদ আয়োজিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন– নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন ও সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, সংগঠনের সভাপতি টিএস গিয়াসউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় একইভাবে নেতাকর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন মির্জা ফখরুল ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ। ওই দিন তারা বক্তব্য শুরু করলে মঞ্চ থেকে নেতাকর্মীরা প্রশ্ন করেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি দেন; কর্মসূচি নেই কেন? হয় কর্মসূচি দেন না হয় বিএনপি ভেঙে দেন।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews