অতিরিক্ত ভোজনের কারণে অধিকাংশ জীবজন্তুর বদনাম আছে। কিন্তু কিছু প্রজাতি তাদের অতিরিক্ত ভোজনের জন্য অন্যদেরও ছাড়িয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ভোজনের জন্য প্রাণীজগতে শীর্ষে রয়েছে নীলতিমি। প্রতিবার ৪ টন করে খাবার খায় এই প্রাণী। প্রতি গ্রাসে তিন মিলিয়ন সামুদ্রিক ক্ষুদে প্রাণী গিলে ফেলে। পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহদাকার ও দীর্ঘজীবী প্রাণী এই নীলতিমি।
নীলতিমি ছাড়াও আরো প্রাণী রয়েছে যারা অতিরিক্ত ভোজনের কারণে অন্যদের ছাড়িয়ে গেছে। এদের খাবারের ক্ষমতা ও ক্ষুধার পরিমাণ দেখে আপনি অবাক হবেন।
হাতি
স্থলে বাস করা প্রাণীদের মধ্যে হাতি সবচেয়ে বেশি ভোজন করে। একটি পুরুষ হাতি প্রতিদিন তাদের মোট ওজনের ১ শতাংশ ভোজন করে এবং নারী হাতি করে ১.৫ শতাংশ।
পুরুষ হাতির ওজন সাধারণত ৬ টন হয় এবং প্রতিদিন তারা ৬০ কেজি শুকনা খাবার খায়। পানি থাকলে এ খাবার ৪ গুণ ভারী হয়ে যায়। এই প্রাণী সারাদিন গাছপালা খেয়ে থাকে যাতে তাদের শরীরে পরিমাণমতো ক্যালরি যেতে পারে। হাতিরা দিনের ১৮ ঘণ্টা খেয়ে কাটায়।
পান্ডা
একটি বড় পান্ডা দিনের ১৪ ঘণ্টা বাঁশ চিবিয়ে খেয়ে পার করে দেয়। সব প্রাণীদের জন্য এ খাদ্য অভ্যাস প্রযোজ্য নয়। যেসব প্রাণীদের পরিপাকতন্ত্র গাছ থেকে খুব কম শক্তি গ্রহণ করতে পারে তাদের জন্য এতো পরিমাণ খাবার প্রতিদিন প্রয়োজন। এ জন্যই পান্ডারা প্রতিদিন ১২.৫ কেজি বাঁশ খায় যাতে তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। ফলে তারা বেশি বর্জ্য ত্যাগ করে।
সাধারণত তৃণভোজীরা পর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণের জন্য বেশি খাবার খেয়ে থাকে। অন্যদিকে মাংসাশীরা এ ক্যালরি মাত্র একবার খেলেই পেয়ে যায়।
বাদুড়
ছোট বাদামী বাদুড় প্রতি ঘণ্টায় ১০০০ মশা খেতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের এ সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ আছে। কানাডার ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ব্রক ফেনটন বলেন, এ ধারণা আসলে ভুল। ১৯৫০ সালে দুই প্রজাতির বাদুড় নিয়ে দুটি পরীক্ষা করা হয় যেখানে ভিন্ন ফল আসে।
ফেনটন বলেন, দুই পরীক্ষার প্রথমটিতে এক ঘণ্টা পর বাদুড়ের পাকস্থলি পরীক্ষা করা হয়, অন্যটিতে বাদুড়কে মশা ও মাছি ধরে এনে খাওয়ানো হয়। এতে প্রমাণ হয় না বাদুড় যখন বনে থাকে তখন কী পরিমাণ সে খেতে পারে।
বাদুড় শুধু মশা খায় না। তারা আরো বড় পোকা খেতেও পছন্দ করে। যেমন-মথ। কানাডার এক গবেষণায় দেখা যায়, মশা শুধু বাদুড়দের খাবারের খুব কম চাহিদাই পূরণ করে।
২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জাপানি বাদুড়েরা একবেলার খাবার খাওয়ার আগেই পরিকল্পনা করতে থাকে এর পরের বার কী খাবে। বাদুড় তাদের ওড়ার পরিকল্পনা সাজায় এভাবে যে পথে কী ধরনের খাবার পড়বে তার ওপর নির্ভর করে।
পিগমি শ্রু
ক্ষুদে প্রাণীদের মধ্যে শ্রু (ইঁদুর জাতীয় প্রাণী) সবচেয়ে বেশি খায়। তারা প্রতি ২-৩ ঘণ্টায় নিজেদের ওজনের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ খাবার গ্রহণ করে থাকে। অন্যদিকে পিগমি শ্রু প্রতিদিন তার শরীরের ওজনের ১২৫ শতাংশ সমান খাবার খেয়ে থাকে। এই স্তন্যপায়ী প্রাণীর রয়েছে দ্রুত মেটাবলিক মাত্রা। অর্থাৎ খাওয়ার সাথে সাথে তাদের শরীর ক্যালরি অতি দ্রুত শোষণ ও খরচ করে। এজন্য তাদের প্রতিনিয়ত উচ্চ আমিষযুক্ত খাবার প্রয়োজন।
হামিংবার্ড
হামিংবার্ডের ওড়ার জন্য প্রচুর পরিমাণের ক্যালরির প্রয়োজন। তারা ওড়ার সময় প্রতি সেকেন্ডে ৫০ বার পাখা নাড়ায়। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ক্ষেত্রে তাদের সবচেয়ে বেশি মেটাবলিক মাত্রা রয়েছে। প্রতিদিন হামিং বার্ড নিজের ওজনের অর্ধেক মিষ্টি খেয়ে থাকে। প্রতি ১৫ মিনিটে তারা ফুলের উপর ঘুরে ঘুরে মধু খায়।
বড় আকারের পাখিরা খাবার খেয়ে হজম করতে সময় নেয়। ছোট পাখিদের সে জন্য বেশি খেতে হয়। পাখিরা শক্তি মজুদ করে থাকে।
এছাড়া সিল্ক মথ ও জোঁকও আছে যারা তাদের ভয়ংকর ক্ষুধার জন্য বিখ্যাত। নিজেদের ওজনের থেকে বেশি এরা প্রতিদিন খেয়ে থাকে। গিনেস বুকের রেকর্ড অনুযায়ী একটি শুয়োপোকা ৫৬ দিনে নিজের শরীরের ওজনের ৮৬,০০০ গুণ বেশি থেয়ে থাকে। সূত্র : বিবিসি।
আরবি/এএসআই।