বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করার পরেও বাংলাদেশে আমরা এর সম্ভাব্য বিপদ সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে পারিনি। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে বাণী শোনানো হলেও কার্যকর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে অতি সামান্য। ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর্যায়গুলো একের পর এক অতিক্রম করে আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে ধাবিত হচ্ছি বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার সংখ্যাও দ্রুত গতিতে বাড়তে শুরু করেছে। কোনো কোনো জীবাণু–বিশেষজ্ঞ এটাকে ক্রিটিক্যাল বা সংকটাপন্ন পর্যায় বলে অভিহিত করছেন।

এই সংকটাপন্ন পর্যায়ে এসেও আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়, সরকার ঠিক কীভাবে এই গুরুতর জাতীয় সংকট মোকাবিলা করার পরিকল্পনা করেছে। পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ইত্যাদির ঘোষণাও আসছে। কিন্তু একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কীভাবে তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে; তাদের কাছ থেকে সংক্রমণ অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া কীভাবে ঠেকানো হবে; ব্যাপক পরিসরে এই দুই বড় কাজ করার সামগ্রিক সক্ষমতা সরকারের একার আছে কি না—এসব বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা করা হয়েছে বা হচ্ছে কি না, তা জানা যাচ্ছে না।

পৃথিবীর কোনো দেশেই মহামারি পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সরকারের একার পক্ষে সম্ভব হয় না। চলমান করোনা মহামারির ক্ষেত্রেও আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশে সরকারগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য বেসরকারি খাত এগিয়ে আসছে। শুধু বড় বড় ব্যবসা, শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান নয়, বেসরকারি খাতের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোও করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকারকে সহযোগিতা করছে। বাংলাদেশেও এ পর্যন্ত তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহযোগিতার প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে। সামাজিক-নাগরিক পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণের কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু এ দেশের স্বাস্থ্যসেবার বৃহত্তর অংশ বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোকেও এখন এগিয়ে আসতে হবে।

লক্ষ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার বৃহত্তর অংশটিই বেসরকারি খাতের। টোটাল হেলথ এক্সপেন্ডিচার (টিএইচএ) বা মোট স্বাস্থ্যব্যয়ের মাত্র ৩৪ শতাংশ বহন করে সরকারি খাত। টিএইচএর বাকি ৬৬ শতাংশই যায় রোগীদের পরিবারগুলোর পকেট থেকে; যায় বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর পকেটে। সুতরাং এই গুরুতর স্বাস্থ্যগত সংকটের মুহূর্তে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর জাতির স্বার্থে অনেক কিছু করার আছে।

অনেক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই সংকট মোকাবিলায় অংশ নিতে চায়—এমন কথা শোনা যাচ্ছে। অন্তত ২০টি বেসরকারি হাসপাতালে পিএসআর পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। তাদের এই সক্ষমতা কাজে লাগানো হলে পরীক্ষার ঘাটতি অনেকটাই মেটানো সম্ভব। কিন্তু সরকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে পরীক্ষার অনুমতি দেয়নি। আমরা মনে করি তাদের অনুমতি দেওয়া উচিত, পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিটও সরবরাহ করা উচিত। তারা পরীক্ষা করে করোনা রোগীদের শনাক্ত করলে তাদের চিকিৎসা দেওয়া এবং করোনায় আক্রান্ত নয়—এমন সাধারণ রোগব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের পৃথক পৃথকভাবে চিকিৎসা দেওয়ার কাজগুলো সহজ হতে পারে। এ ছাড়া বেসরকারি কিছু হাসপাতালকে শুধু করোনা রোগী চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করা যেতে পারে।

এই জাতীয় সংকট মোকাবিলায় বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতকে যুক্ত করার জন্য সরকারি সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ প্রয়োজন। এবং তা এখনই প্রয়োজন। ইতিমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews