বাংলাদেশের খাদ্যসংস্কৃতিতে আম এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। সুস্বাদু, সুগন্ধি ও পুষ্টিতে ভরপুর এই ফলকে অনেকে বলেন “ফলের রাজা”। গ্রীষ্মকালীন এই ফলের মধ্যে হিমসাগর, লক্ষণভোগ, গোপালভোগ, ফজলি, আম্রপালি বা ল্যাংড়া জাতের আম বিশেষ জনপ্রিয়। তবে বাজারে মনের মতো পাকা ও উপযুক্ত আম বেছে নেওয়া সবসময় সহজ হয় না। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আম কেনার সময় কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলে খুব সহজেই সেরা আমটি বাছাই করা সম্ভব।

আমের জাত সম্পর্কে জানুন
বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন জাতের আম পাওয়া যায়। প্রতিটি জাতেরই আলাদা স্বাদ, ঘ্রাণ ও টেক্সচার রয়েছে। আপনি যদি কাঁচা খেতে চান, জুস করতে চান বা রান্নায় ব্যবহার করতে চান, সেই অনুযায়ী জাত নির্বাচন করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন,হিমসাগর রসালো ও সুগন্ধি, গোপালভোগ খেতে তুলনামূলক নরম এবং ফজলি আকারে বড় ও রান্নার উপযোগী। বাজারে যাওয়ার আগে স্থানীয় ও ঋতুভিত্তিক জাত সম্পর্কে ধারণা নিয়ে রাখলে ভালো ফল পাবেন। বিক্রেতার কাছ থেকেও জাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান।

গন্ধে চেনার কৌশল
পাকা আম সাধারণত ডাঁটার পাশে মিষ্টি ও তীব্র ফলের ঘ্রাণ ছড়ায়। যদি আমে কোনো গন্ধ না থাকে, তবে তা এখনো কাঁচা। আবার টক, গাঁজনজাতীয় বা তীব্র গন্ধ থাকলে বুঝবেন সেটি অতিরিক্ত পাকা বা পচে গেছে। রাসায়নিকভাবে পাকানো আমে অনেক সময় ঝাঁঝালো বা অস্বাভাবিক গন্ধ থাকে সেগুলি এড়িয়ে চলাই ভালো। রঙ দেখে নয়, বরং ঘ্রাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া অধিক নির্ভরযোগ্য।

হাতের স্পর্শেই মিলবে উত্তর
আম হাতে নিয়ে হালকাভাবে চাপ দিন,পাকা আম নরম অনুভূত হবে, আর কাঁচা হলে থাকবে শক্ত। আবার খুব বেশি নরম হলে তা অতিরিক্ত পাকা বা খাওয়ার অযোগ্য। আমের গায়ে হালকা দাগ থাকলে সমস্যা নেই, তবে যদি গা-চোখে পড়ার মতো কুঁচকানো বা ডগার অংশ শুকনো লাগে, তাহলে সেটা এড়িয়ে চলুন। খোসায় কিছুটা কালচে দাগ থাকলে তা স্বাভাবিক ও ক্ষতিকর নয়।

শুধু রঙ দেখে সিদ্ধান্ত নয়
আমের রঙ অনেক সময় বিভ্রান্তিকর হতে পারে। যেমন,ল্যাংড়া বা ফজলি জাতের আম পাকা হলেও রং থাকে সবুজ। অন্যদিকে হিমসাগর বা আম্রপালি পাকার দিকে গেলে হালকা হলুদাভ হয়। তাই শুধুমাত্র রঙ দেখে নয়, ঘ্রাণ ও টেক্সচারের ভিত্তিতে আমের পাকা বুঝে নিন। খুব চকচকে বা অস্বাভাবিক রঙের আম কৃত্রিমভাবে পাকানোও হতে পারে। ডাঁটার কাছে সামান্য রস বেরোলে তা রসালো আমের লক্ষণ।

মৌসুমে ও বিশ্বস্ত বিক্রেতার কাছ থেকে কিনুন
বাংলাদেশে মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত আমের মৌসুম চলে। এই সময়েই স্বাভাবিকভাবে পাকা ও সুস্বাদু আম বাজারে পাওয়া যায়। মৌসুমের বাইরে আম কিনলে স্বাদ কমে যায় কিংবা সেগুলি কার্বাইড বা অন্যান্য রাসায়নিক দিয়ে পাকানো হতে পারে। তাই স্থানীয় পরিচিত ও বিশ্বাসযোগ্য বিক্রেতার কাছ থেকেই আম কেনার চেষ্টা করুন। অনলাইনে কিনলে নিশ্চিত হোন যে বিক্রেতা স্বচ্ছ উৎস থেকে আম সরবরাহ করে এবং রাসায়নিকমুক্ত আম বিক্রি করছে।

সেরা আম বেছে নিতে হলে শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের দিকে না তাকিয়ে, আমের গন্ধ, ধরন, স্পর্শ ও উৎসের দিকে মনোযোগ দিন। বিশেষজ্ঞদের এই পরামর্শ মেনে চললে প্রতিবার বাজার থেকে আপনি বেছে আনতে পারবেন সবচেয়ে মিষ্টি, রসালো ও নিরাপদ আম। মনে রাখুন,একটি সঠিকভাবে পাকা আম হতে পারে আপনার পুরো গ্রীষ্মের অনন্য স্বাদ-অভিজ্ঞতা।

সূত্র:https://tinyurl.com/mrwm5env