সম্প্রতি খেলাপি ঋণ ও ঋণখেলাপির সংখ্যা দুটোই বেড়েছে। এর জন্য মূলত দুটি কারণ শনাক্ত করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে- ডেফার্ট এলসির (পণ্য আমদানিতে বাকিতে ঋণপত্র) টাকা ব্যবসায়ীরা পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। আর খেলাপির সংখ্যা বেড়েছে আদালতে মামলা নিষ্পত্তির কারণে।

এ কারণগুলো তুলে ধরে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পৃথক জবাব পাঠিয়েছে ব্যাংকগুলো। সেখানে খেলাপি ঋণ ও খেলাপির সংখ্যা কমিয়ে আনতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও বেশি মনিটরিং ও আদালতে আটকে থাকা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সুপারিশ করা হয়েছে।

ঋণখেলাপির সংখ্যা ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে ২৩ জুন রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সেখানে ভবিষ্যতে তা কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ সম্পর্কে মতামত জানাতে বলা হয়। ওই চিঠির জবাবে ব্যাংকগুলো এমনটি জানায়।

জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ব্যাংকিং) ফজলুল হক যুগান্তরকে জানান, সম্প্রতি খেলাপি ঋণ ও ঋণখেলাপির সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাংকগুলোর নির্বাহীদের চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠির জবাব পাওয়া গেছে। তবে ব্যাংকগুলোর জবাব গতানুগতিক। এর পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ ব্যাপারে কাজ করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর ২০১৮ শেষে ছিল ৯৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা।

মার্চ শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা।

যা মোট ঋণের ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ। যদিও এই সময় নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ গ্রহণযোগ্য সীমায় কমিয়ে আনার জন্য কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেন।

এরপরও এই তিন মাসে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকে প্রায় ৩৯৯ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকে প্রায় ২৪০ কোটি টাকা ও সোনালী ব্যাংকে ১৭৬ কোটি টাকা। একই সময়ে বেসিক ব্যাংকে ১৭২ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে বেড়েছে ১৩ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোর জবাবকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যথাযথ মনে করছে না। মনে করা হচ্ছে, গতানুগতিক জবাব দিয়েছে। সেখানে বলা হয়, অনেক ব্যবসায়ী ডেফার্ড এলসি খুলেছেন। সাধারণত ১৮০ দিনের মধ্যে এর অর্থ ব্যাংককে পরিশোধ করতে হয়। ব্যবসায়ীদের অনেকে এই এলসি খুলে থাকেন। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী নির্ধারিত সময়ে টাকা শোধ দিতে পারেননি।

সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে অর্থ ঋণ আদালতে সরকারি ব্যাংকের ৫৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আটকে আছে। এর বিপরীতে আদালতে দুই লাখ মামলা রয়েছে। সম্প্রতি অনেক মামলার নিষ্পত্তি হওয়ায় নতুন অনেক ব্যবসায়ী খেলাপি হয়েছে। এসব ব্যবসায়ীকে আগে ঋণখেলাপি বলা যেত না। কারণ তারা আদালতে রিট করে এ ঘোষণাকে স্থগিত করে রেখেছিল।

সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণ ও খেলাপির সংখ্যা কমিয়ে আনতে যে সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- নতুন ঋণ অনুমোদন নীতিমালা সংশোধন ও জামানত গ্রহণে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন, ঋণ জালিয়াতি প্রতিরোধে জামানত হিসেবে জমি ও সম্পত্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার গঠন, উচ্চ আদালতে ব্যাংকের ঋণ সংশ্লিষ্ট রিট মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য পৃথক বেঞ্চ গঠন, বড় খেলাপি ঋণ তদারকির জন্য প্রতিটি ব্যাংকে একটি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে পৃথক একটি তদারকি সেল গঠন এবং ঋণ গ্রহীতার তথ্য সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধায়নে সেন্ট্রাল কেওয়াইসি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews