দেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত চামড়া শিল্প। গুণগতমানের চামড়া, স্বস্তা দরের শ্রমিক, কাঁচামালের সহজ প্রাপ্যতাসহ দেশে বিদ্যমান আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধাজনক ইন্ডিকেটর দিনকে দিন চামড়া শিল্পের সম্ভাবনার দিকটি জোরালোভাবে জানান দিচ্ছে। চামড়া শিল্প একদিকে যেমন দেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করেছে অন্যদিকে এই শিল্প থেকে প্রতিবছর সরকারের কোষাগারে জমা পড়ছে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের চামড়া রফতানির বাজার প্রতিবছর শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ হারে বাড়ছে এবং টাকার অঙ্কে যেটা বছরে গড়ে ৩০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় তৎকালে চামড়া শিল্পের গতি কিছুটা মন্থর হলেও বর্তমানে সেটা কাটিয়ে উঠেছে। দেশীয় বাজারেও চামড়াজাত পণ্যের যথেষ্ট কদর এবং চাহিদা রয়েছে। চামড়াজাত পণ্যকে আকর্ষণীয় করতে যুগোপযোগী গবেষণা ও নিত্যনতুন ডিজাইন জনগণের নজর কাড়ছে। এজন্য চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা এবং উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। বছরের সব মৌসুমে চামড়া উৎপাদন হলেও ঈদুল আজাহা হচ্ছে দেশের চামড়া ব্যবসায়ীদের কাঁচা চামড়া সংগ্রহের প্রধান মৌসুম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিবারের ঈদুল আজাহায় সারাদেশে প্রায় ১ কোটি পশু কোরবানি হয়, যার মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি।
দেশের প্রচলিত রীতিতে সাধারণত ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। ঈদুল আজাহায় এত বেশি পশু কোরবানি হয় যার থেকে প্রাপ্ত চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে হিমশিম খায় ট্যানারি শিল্পগুলো। ট্যানারি শিল্পগুলোর দাবি, ঈদুল আজাহায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রাপ্ত অধিক চামড়ার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ বা প্রক্রিয়াজাতকরণে তাদের উপর অনেক বেশি চাপ পড়ে যায়। ঘাটতি পড়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও জনবলের। ট্যানারিগুলোর ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বহুগুণ বেশি চামড়া আসায় সেগুলো সংরক্ষণে যথোপযুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করা দুরহ হয়ে পড়ে। তাই অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রাপ্ত অধিক চামড়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাকে একটু হলেও নড়বড়ে করে দেয়, যার প্রভাব গিয়ে পড়ে মাঠপর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীদের উপর। এক দশক আগেও যেখানে একটি গরুর চামড়া আকারভেদে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি করা যেত, সেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সেই চামড়া ৫০০ টাকাতেও বিক্রি করতে পারছে না। ব্যবসায়ীদের গঠিত সিন্ডিকেট এবং নানা ধরনের কৃত্রিম সঙ্কট চামড়া ক্রয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে বলে প্রতীয়মান হয়। তবে ট্যানারি শিল্পগুলোর এই দাবিও যথেষ্ট যৌক্তিক। আমাদের দেশে এই সমস্যা অনেক ক্ষেত্রেই রয়েছে। ভরা মৌসুমে সবধরনের কৃষিজ পণ্য থেকে শুরু করে ফল, শাকসবজি, মসলা, মাছ এবং চামড়া শিল্পে এর প্রভাব সুস্পষ্ট। বাড়তি উৎপাদনের চাপ এবং উপযুক্ত স্টোরেজ সুবিধা না থাকায় বেশ বড় ধরনের ঝক্কিঝামেলায় পড়তে হয়। চামড়া শিল্পকে এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়। ঈদুল আজহা পরবর্তী সময়ে কাঁচা চামড়ার বাজারে নানা ধরনের অসঙ্গতি ও অস্থিরতা দেখা দিলে সরকারের পক্ষ থেকে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার রীতি শুরু হয়। কিন্তু তারপরও নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে কাঁচা চামড়া ক্রয় করে ব্যবসায়ীরা। প্রতিবাদস্বরূপ অনেক চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে পানির দরে বিক্রি না করে চামড়া ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটে। যেটা আর্থিক ক্ষতিসহ পরিবেশ দূষণে বড় ভূমিকা পালন করে।
এই ক্ষতি পূরণে গবেষকগণের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। চামড়ার বাড়তি চাপকে সামাল দিতে প্রক্রিয়াজাতকরণের পাশাপাশি বিকল্প পথ অনুসরণ করে চামড়া থেকে বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল, যেমন: কোলাজেন আহরণ করা যেতে পারে। চামড়াকে প্রক্রিয়াজাতকরণের পূর্বে যদি এর থেকে কোলাজেন সংগ্রহ করে সেই কোলাজেনকে বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজে লাগানো যায় তাহলে সেটি অবশ্যই প্রক্রিয়াজাতকৃত চামড়ার চেয়ে অধিক মূল্য সংযোজিত হবে। কোলাজেন মূলত এক ধরনের প্রোটিন যেটি অ্যামাইনো এসিডের পলিমার। এই কোলাজেনে এক্টিভ পেপটাইড বন্ধন রয়েছে। যেখানে অন্যান্য কেমিক্যালের বিক্রিয়া ঘটিয়ে এবং অন্যান্য কেমিক্যাল সংযোজন করে কোলাজেন থেকে বিভিন্ন ফাংশনাল ম্যাটেরিয়াল তৈরি করা যেতে পারে। কোলাজেনের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। বায়োমেডিক্যাল বিভিন্ন এপ্লিকেশনে কোলাজেন কিংবা কোলাজেন ফাংশনাল ম্যাটেরিয়াল তৈরি করা যেতে পারে। খাদ্যশিল্পে ফুড গ্রেড-এ কোলাজেনেরও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। কেননা, কোলাজেন ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে কাজ করে, যেটি চামড়া থেকে উৎপাদন করা যেতে পারে। বর্তমান বিশ্ব সর্বদা অ্যাডভ্যান্সড গবেষণার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই অ্যাডভ্যান্সড গবেষণার ক্ষেত্রে কোলাজেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যদি বাণিজ্যিকভাবে চামড়া থেকে কোলাজেন তৈরি করা যায় তাহলে অবশ্যই এটি ট্যানারি শিল্পের উপর চাপ কমাবে, সেইসাথে ট্যানারিশিল্পের থেকে যে দূষণ সেটাকে অনেকাংশে কমিয়ে আনবে। বলে রাখা ভালো, কোলাজেন আহরণ যে শুধুমাত্র চামড়া থেকে করা যাবে এমনটা নয়। প্রক্রিয়াজাতকরণের পূর্বে চামড়াকে ড্রেসিং করা হয়। অর্থাৎ চামড়ার কিছু বাড়তি অংশ যেমন কানের অংশ, লেজের অংশ, পায়ের কিছুটা অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয়, যেটাকে Trimmings বলে। চামড়ার Trimmings পরবর্তী যে বাদ পড়া চামড়ার টুকরো পাওয়া যায় তাকে Raw Trimmings বলে, যাকে চামড়া শিল্পের by-product বা উপাজাত বলা যায়। চামড়ার বিকল্প এই Raw Trimmings, কোলাজেন আহরণের একটা উৎকৃষ্ট উৎস হতে পারে। বিগত দিনের গবেষণা পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৩,২৫,০০০ মেট্রিক টন Raw Trimmings উপাজাত হিসেবে ট্যানারি থেকে উৎপন্ন হয়। ট্যানারি শিল্পগুলো যেটাকে কঠিন বর্জ্যের ক্যাটাগরিতে ফেলে এবং এটা থেকে মারাত্মক দূষণ সংঘটিত হয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই Raw Trimmings তার নিজস্ব ভরের প্রায় শতকরা ২০ ভাগ কোলাজেন ধারণ করে। সে হিসাবে ট্যানারির কঠিন বর্জ্য হিসেবে বিবেচিত Raw Trimmings থেকে বছরে ৬৫,০০০ মেট্রিক টন কোলাজেন আহরণ করা যেতে পারে। এই বিপুল পরিমাণ কোলাজেনকে কাজে লাগিয়ে গবেষণা ক্ষেত্রের নতুন দ্বার উন্মোচন করা সম্ভব।
এবার আসি ড্রেসিংকৃত চামড়ার মূল প্রক্রিয়াজাত নিয়ে। ট্যানারি মালিকেরা প্রথমে দেশের বিভিন্ন এলাকার আড়তদার ও মৌসুমি কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লবণযুক্ত চামড়া ধাপে ধাপে ক্রয় করে। লবণ চামড়ার অতিরিক্ত পানি শোষণ করে ব্যাক্টেরিয়া বা ফাঙ্গাস জন্মাতে বাধা দেয়। এরপর শুরু হয় চামড়ার মূল প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপ। তবে জ্ঞাতব্য বিষয় হলো, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে অনেক বেশি রসায়ন জড়িত। এজন্য এর প্রতিটি ধাপে গবেষণার বিস্তর সুযোগ রয়েছে। যে পদ্ধতিতে কাঁচা চামড়াকে বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী, অধিকতর দীর্ঘস্থায়ী ও পচনরোধক করা হয় তাকে ট্যানিং বলে। যে কারখানায় চামড়ার ট্যানিং করা হয়, সে কারখানাকে ‘ট্যানারি’ বলা হয়। ট্যানিং-এর বিভিন্ন ধাপের মধ্যে লাইমিং, ডিলাইমিং, ডিহেয়ারিং, ব্যাটিং উল্লেখযোগ্য এবং প্রতিটি ধাপে বিস্তর রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে থাকে। তবে প্রধানত দুই পদ্ধতিতে চামড়ার ট্যানিং করা হয়। একটি উদ্ভিজ্জ ট্যানিং এবং অপরটি ক্রোম ট্যানিং। ট্যানিং শব্দটির উৎপত্তি মূলত ট্যানিন (Tannin) থেকে, যা ট্যানিক এসিড নামক এক ধরনের উদ্ভিজ্জ রাসায়নিক পদার্থ থেকে উদ্ভূত। প্রাকৃতিকভাবে সকল সবুজ উদ্ভিদে ট্যানিক এসিড আছে। ট্যানিক এসিডের হাইড্রোক্সিল গ্রুপ চামড়ার প্রোটিনের এক্টিভ গ্রুপ তথা পলিপেপটাইড বন্ধন (-CONH-) এর সাথে লিঙ্কেজ তৈরি করে চামড়াকে দীর্ঘস্থায়ী করে। প্রাচীনকালে উদ্ভিদের এই ট্যানিক এসিড ব্যবহার করে চামড়াকে ট্যানিং করা হতো। তাই পরিবেশবান্ধব ট্যানিং-এর কথা ভাবলে এসকল সবুজ উদ্ভিদ থেকে ট্যানিক এসিড সংগ্রহ করে চামড়াকে ট্যানিং করা যেতে পারে। সবুজ উদ্ভিদের মধ্যে যেগুলোতে ট্যানিন কন্টেন্ট বেশি সেখান থেকে ট্যানিন সংগ্রহ করে পরিবেশবান্ধব এই ট্যানিং ব্যবস্থাকে জোরদার করার জন্য ব্যাপক গবেষণার সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু উল্লেখিত ট্যানিং পদ্ধতি দুটির মধ্যে বিশ্বব্যাপী ক্রোম ট্যানিং অধিক প্রচলিত। কেননা, ক্রোম ট্যানিং প্রক্রিয়ায় কাঁচা চামড়া অধিকতর স্থায়ী হয়। এই পদ্ধতিতে কাঁচা চামড়াকে পাকা চামড়ায় পরিণত করার ধাপ শুরু হয় পিকলিং এর পরে। ক্রোম ট্যানিং প্রক্রিয়ায় Cr এর যোগান দিতে বেসিক ক্রোমিয়াম সালফেট ব্যবহৃত হয়। ক্রোম ট্যানিং প্রক্রিয়ায় কোলাজেনের পলিপেপটাইড বন্ধন (-CONH-) এর মধ্যে পরিবর্তন ঘটিয়ে Cr আয়ন দ্বারা কোলাজেন ফাইবারগুলোকে কোলাজেন-ক্রোমিয়াম অক্সো জটিল যৌগে পরিণত করে। প্রকৃতপক্ষে ক্রোম ট্যানিং প্রক্রিয়া একটি জটিল ক্রিয়া। এ জটিল প্রক্রিয়াতে হেক্সা-অ্যাকুয়া ক্রোমিয়াম আয়ন, [Cr(H2O)6]3+ এর মধ্যে ওলেশন (Olation) ও অক্সোলেশন (Oxlotion) ঘটে। এ দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যাকটিভ ট্যানিং এজেন্ট হিসেবে [Cr(H2O)]+ আয়ন দুটি কোলাজেন শিকলের পেপটাইড বন্ধন আয়ন সন্নিবেশ বন্ধন ও প্রাইমারি যোজ্যতার মাধ্যমে আবদ্ধ হয়। এজন্য এনজাইম ট্রিপসিন দ্বারা পেপটাইড বন্ধনের আর্দ্র-বিশ্লেষণ রোধ করে চামড়ার পচন থেকে চামড়াকে রক্ষা করে। উপরন্তু চামড়াকে সফট, ফ্লেক্সিবেল করে মেকানিক্যালি অনেক মজবুত করে। এক কথায় বলা যায়, ক্রোম ট্যানিং-এ মূলত Cr চামড়ার কোলাজেনের সাথে লিঙ্কেজ গঠন করে। সাধারণত Cr এর সাথে চামড়ার প্রোটিন অংশের সাথে কমপ্লেক্স বন্ধন তৈরির মাধ্যমে এই লিঙ্কেজ গঠিত হয়। কয়েকটি লাইনের মাধ্যমে এখানে সংক্ষেপে ক্রোম ট্যনিং বর্ণনা করা হলেও এই ট্যানিং-এর সাথে বেশ বড় রসায়ন জড়িত। নিঃসন্দেহে যারা লেদার প্রসেসিং কিংবা ট্যানিং সাইন্স নিয়ে পড়েছেন তারা এই বিষয়ে আরও বিস্তর জ্ঞানের অধিকারী হবেন।
তবে প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, অধিকতর প্রচলিত এই ক্রোম ট্যানিং পরিবেশের জন্য নিরাপদ নয়। কেননা, Cr মানবস্বাস্থ্য তথা সমগ্র প্রাণি ও উদ্ভিদকূলের জন্য হুমকি। সাধারণত ট্যানারি শিল্পনগরের ডাম্পিং ইয়ার্ড এলাকায় ট্যানারি থেকে Cr সমৃদ্ধ কঠিন বর্জ্য ওই এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়। উন্মুক্ত স্থানে এ বর্জ্য ফেলায় বাতাসে তীব্র ঝাঁঝাল গন্ধ ছড়ায়। Cr সমৃদ্ধ কঠিন বর্জ্য থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় (যেমন: ইলেক্ট্রোলাইসিস) Cr পৃথক করা যেতে পারে। এই Cr পৃথককৃত পুনরায় ট্যানিং-এর কাজে ব্যবহার করা যাবে। তাহলে Cr থেকে সংঘটিত পরিবেশের যে দূষণ সেটা অনেকাংশে কমে আসবে। এজন্য Cr কে পুনঃব্যবহারের বিষয়টি অবশ্যই গবেষকদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়াও ট্যানারি শিল্পনগরের কঠিন বর্জ্যের বাড়তি চাপ সামাল দিতে ডাম্পিং ইয়ার্ডে গর্ত খুঁড়ে সেখানে কঠিন বর্জ্য রাখা হয়। এটা বর্জ্যের কোনরকম সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হতে পারে না। একারণে প্রতিবছর ঈদুল আজাহার পর ট্যানারিগুলোতে আসা চামড়া প্রক্রিয়াকরণ শুরু হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। অনেক কারখানায় ট্যানারির কঠিন বর্জ্য, যেমন টুকরো চামড়া, হাড়, চর্বি, দাঁত এগুলো পুড়িয়ে পোলট্রি ফিডসহ আরো নানা জিনিস তৈরি করা হয়। এসব কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া পুরো এলাকাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। ট্যানারি এবং ওইসব ছোট ছোট কারখানার কারণে এলাকার মানুষ, মাটি, পানি এবং বাতাস বিষে আক্রান্ত করে ফেলে, যেটা প্রাণি ও উদ্ভিদকূলের জন্য বেশ উদ্বেগের বিষয়। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তথা পরিবেশবান্ধব ‘গ্রিন এন্ড ক্লিন টেকনোলজি’ নিয়ে বিস্তর গবেষণার সুযোগ রয়েছে। গবেষণার সুযোগ রয়েছে ক্রোমিয়ামের বিকল্প ট্যানিং ম্যাটেরিয়াল খুঁজে বের করার। সংশ্লিষ্ট গবেষকদের বিষয়গুলো আমলে নিয়ে পরিবেশ দূষণরোধে সুষ্ঠু সমাধান ও বিকল্প ব্যবস্থা বের করতে পারেন।
বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি নির্ভরযোগ্য রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে চামড়া শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কেননা, আমদানি নির্ভর এদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য রফতানি আয় বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। সেই কারণে চামড়াশিল্পকে একটি সম্ভাব্য নির্ভরযোগ্য রফতানিমুখী ও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে গড়ে তোলার জন্য গুণগত মানের চামড়া উৎপাদন, সেগুলোর সঠিক উপায়ে বাজারজাতকরণ এবং চামড়াকে ম্যাটেরিয়ালে রূপান্তর অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। ফলপ্রসূ গবেষণা, উদ্ভিজ্জ্য ট্যানিং-এর দিকে অধিক গুরুত্ব, চামড়া থেকে কোলাজেন আহরণ করে নতুন নতুন ফাংশনাল ম্যাটেরিয়াল উদ্ভাবন এবং ট্যানিং প্রক্রিয়ায় Cr এর বিকল্প খুঁজে বের করতে পারলেই এই শিল্প হবে পরিবেশবান্ধব এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। নীতি নির্ধারকদের সাথে উপযুক্ত সমন্বয় করে গবেষকদের ফলপ্রসূ গবেষণার মাধ্যমে সঠিক ও টেকসই ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে এই শিল্পকে আরও বেশি বেগবান করা যেতে পারে। তাহলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ কমে আসবে এবং চামড়ার প্রকৃত মূল্যের উৎকর্ষ সাধিত হবে, অন্যদিকে চামড়া শিল্পের ভবিষ্যৎ আরও বেশি সম্ভাবনয়াময় হয়ে উঠবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]