জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিতে শীতের আমেজ অনুভূত হলেও ক্যালেন্ডারের পাতায় শীতকাল আসতে আরো বাকি ১০-১২ দিন। গ্রামাঞ্চলের জনসাধারণ শীতের পরশ পুরোপুরি পেলেও শহরে এখনো দিনে গরম; রাতে ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করছে। এ সময়ে শুষ্ক প্রকৃতিতে ধুলো-বালি আর ঠান্ডা-গরমের মিশ্রিত ঋতু বদলে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বয়স্ক ও শিশুরা। যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল; তারাই মূলত আক্রান্ত হচ্ছে সর্দি, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা, শ্বাস কষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ার মতো রোগগুলোতে।

মিরপুর শেওড়াপাড়া থেকে ১৬ মাস বয়সের মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর শিশু হাসপাতালে এসেছেন মা মাহফুজা বেগম। তিনি বলেন, আজ চার দিন ধরে মেয়ের জ্বর, সর্দি, কাশি, বুকে কফ জমে আছে। বলেন, এখনো ডাক্তার দেখে নাই। লাইনে দাঁড়ালেও বাচ্চা কান্না করছে, তাই একটু বাইরে নিয়ে আসলাম। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় মাহফুজার সঙ্গে। রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে সাত মাসের শিশুকে নিয়ে এসেছেন লিপি ও ইয়াসির দম্পতি। তাদের ছোট্ট মেয়ে তহুরা সর্দি জ্বরে নাজেহাল অবস্থা। মায়ের কাঁধে নাক ঘষছে আর কাঁদছে, ছোট্ট তহুরার কান্না বলে দিচ্ছে, তার শরীর ভালো নেই। মা লিপি বলেন, বুকের দুধ ছাড়া কিছুই মুখে নিচ্ছে না। সর্দিতে নাক বন্ধ থাকার কারণে ঠিকমতো দুধও খেতে পারে না।

ঠান্ডা, সর্দি, জ্বর ও শ্বাসে টান ধরা নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন ৭৮ বছরের বৃদ্ধ রায়হান। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় তার সঙ্গে। হাসপাতালে রায়হানের ছেলে সোহেল রানা তাকে নিয়ে এসেছেন। সোহেল রানা বলেন, আমাদের বাসায় আমার মায়েরও শরীর খুব খারাপ, বাড়ি থেকে হাসপাতাল দূর বলে, হাসপাতালে আসতে চায় না মা। তাই ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে খাওয়াইছি। ভালো না হইলে আনতে হইবে।

 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগের ধরন ও তীব্রতা অনুসারে অনেকেই বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন; জটিলতা থাকায় অনেকে আবার হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। যাদের বেশির ভাগই বয়স্ক ও শিশু। চিকিৎসক বলছেন, ঋতু পরিবর্তনজনিত ঠান্ডার কারণে অনেকে কাশি, গলাব্যথা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত জটিলতাসহ জ্বর ও ভাইরাল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে চলতি বছর ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র দুই দিনে—সাধারণ ঠান্ডা জনিতসমস্যা নিয়ে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ৫৪৭ শিশু। আর ঠান্ডাজনিত জটিলতা নিয়ে ভর্তি হয় ৪৩৩ শিশু। নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি আছে ৭৩ শিশু। অ্যাজমা নিয়ে ভর্তি ৪১ শিশু। ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৮৯ জন শিশু। নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৭৩ শিশু। ২০২৫ সালের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে মোট ২ হাজার ৩৩৪ জন শিশু। ডায়রিয়াজনিত কারণে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৪৫৯ জন।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. কামরুজ্জামান ইত্তেফাককে বলেন, আবহাওয়া বদলের কারণে কমন কোল্ড, ব্রঙ্কিওলাইটিস বেশি হয়। যা ঠান্ডা-কাশি-নাক দিয়ে পানি পড়া দিয়ে শুরু হয়,  থাকে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াও বাড়ে এই সময়। বিশেষ করে অ্যাজমার পরিমাণ বাড়ে। তাছাড়া এই সময় কিছু চর্মরোগও দেখা যায়। তিনি বলেন, যেহেতু এই সময়টাতে বায়ুমন্ডল শুষ্ক থাকে; শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে এবং ধূলিকণা বেড়ে যাওয়ার ফলে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া ও শীতকালীন ডায়রিয়ায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়।

এ সময় শিশুকে সুস্থ রাখতে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, শিশুকে শীতের কাপড় পরাতে হবে, মাথা ঢেকে রাখতে হবে, মাথায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না, বাড়ির বাইরে অহেতুক বাচ্চাদের নিয়ে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। শিশুর ঠান্ডা লাগলে, কাঁশি হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না। কুসুম গরম পানি খাওয়াতে হবে, শীতের কাপড় পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করতে হবে। ঘর বন্ধ করে রাখা যাবে না, ভালো বায়ু যাতে প্রবেশ করতে পারে সেজন্যে দিনে দরজা-জানালা খোলা রাখতে হবে।  

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট যক্ষ্মা হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার ইত্তেফাককে বলেন, এই শীতে শ্বাসকষ্টের রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। যেমন তীব্র শীতে শ্বাসকষ্টের রোগী বাড়ে। বিভিন্ন অঙ্গ ফেইলিউর এর কারণেও শ্বাস কষ্ট হয়। এই শীতে ঠান্ডা, কাশি, সর্দি জ্বর হতে পারে। সেটা বায়ু দূষণের কারণেও বাড়ে, তাছাড়া দিনে দিনে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ঠান্ডা রোগে শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া হয়। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঋতু পরিবর্তনের সময়টাতে বেশি হয় এসব সমস্যা। তাছাড়া আমাদের দেশে অ্যাজমা ও সিওপিডি রোগীর সংখ্যা বেশি। অ্যাজমার ক্ষেত্রে রোগী শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসে। সিওপিডির ক্ষেত্রে কাশি হয় শ্বাসকষ্ট অনেক পরে হয়।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews