বাংলাদেশে তথ্য ও প্রযুক্তির প্রবেশ বহু আগে হলেও একবিংশ শতাব্দীতে এসে আইটি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের একটি বড় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিজিটালাইজেশনের এ যুগে জীবন ও কর্মের সব ক্ষেত্রেই রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ। তথ্যপ্রযুক্তির এই জয়জয়কারে পুরুষের সঙ্গে নারীদের অবদানও নেহায়েত কম নয় বরং প্রায় সমানই বলা চলে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার ও দক্ষতা মেয়েদের সামনে উন্মোচন করেছে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র। আইসিটি মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বর্তমানে দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকই নারী। বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিওএসএন) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, ২০০৫-০৬ সালে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার সায়েন্স অথবা তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত বিষয়সমূহ নিয়ে পড়ছেন প্রায় ২৫ শতাংশ মেয়ে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৫ শতাংশ ছাত্রীর মধ্যে পড়ালেখা শেষে ১৩ শতাংশ আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
নারীরা বিশেষ করে প্রোগ্রাম তৈরি করা, সাইড প্রতিষ্ঠা, বাণিজ্যকভাবে মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেন্ট, ই-মেইল সেবাদান বায়োডাটা প্রস্তুত করা, গ্রাফিকস, ডিজাইন তৈরি, শিক্ষার্থীদের জন্য নোট শিট প্রস্তুত করা, অনলাইন শপিং, তথ্য আদান-প্রদান, স্বাস্থ্য, কৃষিবিষয়ক তথ্যসেবা দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এজন্য তারা নিজ নিজ বাড়ি বা বাসার পাশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দোকান নিয়ে এ ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ প্রবণতা এখন ব্যাপক হারে চোখে পড়ে। এটা অর্থনীতির জন্য যেমনি কল্যাণকর; তেমনি পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য সমানভাবে কল্যাণকর। অর্থনীতিবিদরা মনের করেন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে ফলে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ সুগম ও সহজলভ্য হয়েছে। এতে এ খাতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও বাড়ছে দিন দিন। এখন প্রয়োজন এই প্রযুক্তিকে টেকই, সহজলভ্য ও সুলভ করা।
গ্লোবাল ব্রান্ড প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল ফাত্তাহ তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীদের প্রশংসা করে বলেন, নারীরা পুরুষের চেয়ে সেলসে এ্যান্ড মার্কেটিংয়ে পিছিয়ে থাকলেও অফিসের অভ্যন্তরীণ কাজে তারা পুরুষের চেয়ে বেশি পারদর্শী।
তিনি তার মতামত দিয়ে বলেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, আধুনিক বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাত। বর্তমান যুগে এ খাতে যে দেশ যত সমৃদ্ধ; সেই দেশই বিশ্বে ততটা উন্নত বা সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে। আইসিটির ছোঁয়ায় বিশ্ব এগিয়ে চলছে দ্রুততার সঙ্গে। সুতরাং দেশ তথা সমাজকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে আইসিটি খাতের উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। আধুনিক এ ডিজিটাল যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে বিশ্বের সব দেশই আইসিটির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলছে। আশার কথা, বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। নারীরাও সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে।
অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য গ্রহণ করা হয়েছে একটি মহাপরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারী-বেসরকারী প্রায় সব ক্ষেত্রেই লেগেছে ডিজিটাল যুগের ছোঁয়া। সরকার আইসিটি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং নিত্যনতুন প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশের উন্নয়ন মানেই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের উন্নয়ন। এ গুরুত্ব বিবেচনায় সমাজের মানুষের উন্নয়ন হলেই দেশের উন্নয়ন হবে।

বাংলাদেশ এ খাতে অভাবনীয় উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টার পাশাপাশি ব্যক্তি প্রচেষ্টাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমাদের দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। তাই দেশের উন্নয়নে সব ক্ষেত্রেই নারী সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে। বর্তমানে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি বিভাগ খোলা হয়েছে। যেহেতু সমাজের অর্ধেক নারী; তাই এ ক্ষেত্রে অর্থাৎ আইসিটি খাতেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

তারাও সমাজ তথা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। এ ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা লাভ করে নারী সমাজও প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। তবে সামাজিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেক সময় নারী সমাজ যথার্থভাবে এগিয়ে আসতে পারছে না। তাই সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে আইসিটি খাতে নারী সমাজকে সম্পৃক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এজন্য দরকার সরকারী-বেসরকারীভাবে প্রচারণা।
প্রযুক্তি যতটা টেকসই, সহজলভ্য হবে; ততটাই দেশ, সমাজ, অর্থনীতি সমভাবে উপকৃত ও লাভবান হবে। কারণ ব্যক্তির স্বাবলম্বী হওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ নিহিত থাকে। তাছাড়া আইসিটির বদৌলতে বর্তমান বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তের মানুষের সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান, ভাব বিনিময়, বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক এমনকি সামাজিকভাবে যোগাযোগ স্থাপন সহজেই সম্ভব হয়ে ওঠেছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews