প্রচণ্ড গরমে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ আক্রান্ত। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে এবারও ঋতুর পালাক্রমে বৈশাখ এসেছে। তবে বৈশাখ আসার অনেক আগেই প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনে বসন্ত তার জৌলুস হারিয়েছে। এই তালিকায় শুধু বসন্ত নয়; শরৎ, হেমন্ত, শীত এমনকি বর্ষাও আগের মতো ভরা যৌবনে আর নেই। সময়ের পালাক্রমে বর্ষাও বার্ধক্যে পতিত।
সাধারণত চৈত্রের শেষে এবং বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে গরম পড়ার কথা থাকলেও আগেভাগেই গ্রীষ্ম তার উত্তাপ মানুষের মাঝে দেখাতে শুরু করেছে। যার ফলে শুরু থেকেই মানুষের নাভিশ্বাস। ঢাকায় প্রায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ থাকলেও ইট-পাথর আর সিমেন্টের জঞ্জালে পাখার বাতাসে আর সেই গরমের উষ্ণতা সামাল দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিত্তবান কিছু মানুষের ঘরে ‘এসি’ নামক যন্ত্রের উপস্থিতি থাকায় তারা কিছুটা পরিত্রাণ পেয়ে থাকে। তবে গরিবদের এ ক্ষেত্রে কী করণীয়– সে প্রশ্ন তুললেই আশানুরূপ উত্তর না পেয়ে সেই দিনে অনেকবার গোসল, ঠান্ডা পানি খেয়েই গরম মোকাবিলা করছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণি।
আমাদের অপরিকল্পিত শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে এবং তা সাধারণত নদী, খাল, বিল, জলাশয়ের ধারে। যার দরুন তারা তাদের আবর্জনা পানিতেই ফেলতে পারে। কেননা, বিষাক্ত বর্জ্য বৈজ্ঞানিকভাবে নিষ্কাশন করা অনেক ব্যয়বহুল।
এখন আসা যাক নগর পরিকল্পনার দিকে। যে কোনো নগরে ইমারত স্থাপনার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা। কিন্তু আমাদের দেশের নগর পরিকল্পনাকারী রাজউকের বিধিমালা থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় নগরে সবুজের এত ঘাটতি।
নব্বইয়ের দশকের ঢাকা আর এখনকার ঢাকা শহরে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। জমির মালিক এখন এক ফোঁটা জমি ছাড়তে রাজি নন। আর যদিও-বা জমি ফাঁকা রাখেন, সেটাও প্রাচীর দিয়ে আটকে রাখেন। সুতরাং গরম কমাতে গেলে আগে নগর পরিকল্পনায় হাত দিতে হবে। ভবনের বিধিবিধানের সঙ্গে বাড়ির পাশে গাছ রোপণের জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কঠোর বিধান আরোপ করা বাঞ্ছনীয়। ইতোমধ্যে দেশের অনেক জায়গায় মানুষ হিট স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। গত ৪ দিনে অন্তত ৩১ জন মারা গেছে।
কথায় আছে– সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। গরমের হাত থেকে না পালিয়ে গরম যাতে প্রতিরোধ করা যায়, সেদিকে খেয়াল রাখা উত্তম। সে জন্য পরিকল্পিত নগরায়ণ, জনসংখ্যার ঊর্ধ্বগতি রোধ, শহরায়ন কমানো, কৃষিজমি নষ্টকরণকে নিরুৎসাহিত, সর্বশেষ সবুজায়ন যাতে অধিকতর বৃদ্ধি পায়, সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। সর্বোপরি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলায় সচেতন থাকতে হবে।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ