ভারতের সাত ধাপের জাতীয় নির্বাচন যখন ৭ মে-এর নির্ধারিত সমাপ্তির দিকে এগোচ্ছে, দেশটির ২০ কোটি মুসলমানের বিরুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘৃণামূলক বক্তৃতা তীব্রতর হয়ে উঠছে। এই সপ্তাহের শুরুতে নিজ রাজ্য গুজরাটে সমর্থকদের একটি সমাবেশে মোদি তার নির্বাচনী প্রচারনায় দাবি করেছেন যে, বিরোধী দলগুলি মুসলমানদের সাথে দেশ দখলের ষড়যন্ত্র করছে। মোদি বলেন, 'আমি জাতির সামনে সত্য তুলে ধরেছি যে কংগ্রেস আপনাদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাদের বিশেষ পছন্দের লোকদের মধ্যে বণ্টন করার গভীর ষড়যন্ত্র করেছে।’মোদি আরও দাবি করেছেন যে, ভারতের বিরোধী দলগুলির জোট মুসলমানদের ভোট জিহাদ করতে বলছে। তাই ভারতের হিন্দুদের ভীত হওয়া দরকার। সমর্থকদের সামনে এই জোড়োলো দাবি করার আগে, তিনি 'লাভ জিহাদ' এবং 'ভূমি জিহাদ'-এর মতো ইসলামফোবিক ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উল্লেখ করেন, যেগুলির দ্বারা যথাক্রমে পুরুষদেরকে অন্য ধর্মের নারীদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার জন্য বিয়ে করছে বলে এবং ভারতের ভূখ-ের নিয়ন্ত্রণ লাভের উদ্দেশ্যে জমি-জমা কেনার জন্য মুসলমানদেরকে দায়ি করে হিন্দুত্ববাদীরা। মোদি বলেন, ‘আমি আশা করি আপনারা সকলেই জানেন যে জিহাদের অর্থ কী এবং এটি কাদের বিরুদ্ধে চালানো হয়ে থাকে।’গত সপ্তাহে একটি প্রচারাভিযানে মোদি মুসলিম সম্প্রদায়কে অনুপ্রবেশকারীদের সাথে তুলনা করে বলেন যে, মুসলমানরা ভারতে হিন্দুদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আরও বেশি সন্তান উৎপাদন করছে। বাস্তবে, মুসলমানরা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশেরও কম, এবং সরকারী তথ্য দেখায় যে, তাদের প্রজনন হার হিন্দু ও অন্যান্য প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠীর তুলনায় দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।৩০ এপ্রিল বিজেপি ইনস্টাগ্রামে একটি অ্যানিমেটেড তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে, যাতে মোাদি জাতিকে উদ্ধার করতে আসার আগে মধ্যযুগে ভারত আক্রমণ এবং তার সম্পদ লুণ্ঠনকারী হিং¯্র এবং লোভি হানাদার হিসেবে মুসলিমদেরকে উপস্থাপন করা হয়েছে। তথ্যচিত্র আবারও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই দাবিকে প্ররোচনা দিয়েছে যে, নির্বাচিত হলে কংগ্রেস দল হিন্দুদের সম্পদ ও সম্পত্তি মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করে দেবে।মোদির জীবনীকার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেছেুন যে, কয়েক দশক ধরে ধর্মীয় মেরুকরণ মোদির দ্বিতীয় প্রকৃতি হয়ে উঠেছে। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘ভারতীয় গণতন্ত্রকে বিজেপি এবং মোদির দ্বারা বাজেভাবে নৃশংস করা হয়েছে। আজকে ভারতে মুসলমারদের জন্য এটি সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ সময়, যারা সবসময় মনে করে যে তারা তাদের পরিচয়ের কয়েদী।’মোদির সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলি ভারতের বিরোধীদল এবং সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। দেশটির প্রায় ২০ হাজার নাগরিক মোদির ঘৃণাত্মক বক্তব্যের অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভারতের নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন। একাধিক ব্যবহারকারী ঘৃণাত্মক বক্তৃতাগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পর রিপোর্ট করার পরে ইনস্টাগ্রাম ৩০ এপ্রিলের ভিডিওটি সরিয়ে নিয়েছে। তবে, ভারতের নির্বাচন কমিশন এখনও মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে বিরোধী দলের নেতা কংগ্রেস নেতা প্রমোদ তিওয়ারি বলেন, 'মোদি প্রধানমন্ত্রী পদের মর্যাদাকে অসম্মান করেছেন; তার কথা কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে বের হওয়া কথা হতে পারে না।’ আল জাজিরারকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, 'এই নির্বাচনে গণতন্ত্র ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এবং ভারতের নির্বাচন কমিশন এটি অবজ্ঞা করে ঘুমাচ্ছে, কংগ্রেস দল মোদির প্রার্থীতাকে অযোগ্য ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে এবং তাকে প্রচারণায় বাধা দেওয়া উচিত।'বলেছেন যে, যেখানে মোদি নিজেকে বিরোধীদের আক্রমণের শিকার হিসাবে চিত্রিত করে এসেছেন, যেখানে অনেক বিরোধী নেতারদের বেড়ে ওঠার সুযোগের বিপরীতে নিজের আপেক্ষিক দারিদ্র্যের শৈশবকে ইঙ্গিত করেছেন, উদাহরণস্বরূপ, এবার তিনি নিজের ওপর থেকে সরে এসেছেন এবং সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্দশার শিকার হওয়ার একটি অনুভূতির জন্ম দিয়েছেন। ইরফান বলেছেন যে, ‘এটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চূড়ান্ত বিন্দু, যেখানে সমস্ত হিন্দুই শিকার এবং সেজন্যই তাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, বাকস্বাধীনতা বা ধর্মের (স্বাধীনতা) জন্য কোনও স্থানবিহীন একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের প্রয়োজন।’