যশোর উপজেলা নির্বাচন

আধিপত্য বাড়াতে ভাইকে চেয়ারে বসাতে চান শাহীন

ভোটে অংশ নিতে চান আরও ৬ প্রার্থী

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে পরাজিত হয়ে আবারও যশোর সদরের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করতে চান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে তাঁর ভাইকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তারই অংশ হিসেবে ঈদ-পরবর্তী পুনর্মিলনীর নামে একক প্রার্থিতা ঘোষণা দেওয়ার সমাবেশ করেন তিনি। নির্বাচনে অর্ধডজন দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রচারণায় থাকলেও সেই সমাবেশে একমাত্র উপস্থিত ছিলেন শাহীনের ভাই তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে ওই সমাবেশে সদরের বিভিন্ন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই একই সুরে বক্তব্য রেখে বলেন, শাহীন চাকলাদারের প্রার্থীই আমাদের প্রার্থী। তবে অন্য প্রার্থীরা বলেছেন, মূলত উপজেলার রাজনীতিতে একক আধিপত্য বিস্তার করতে শাহীন তাঁর ভাইকে প্রার্থী করছেন।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহিত কুমার নাথ বলেন, সদর উপজেলায় ঈদ পুনর্মিলনীর নামে নেতাকর্মীকে ডেকে শাহীন চাকলাদার একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চেয়েছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা হয়ে তিনি এমনটি করতে পারেন না। মূলত জেলা সদরের রাজনীতিতে একক আধিপত্য বিস্তার করতে তিনি তাঁর ভাইকে প্রার্থী করতে চান। এতে দলের তৃণমূলে কোন্দল সৃষ্টি হবে।

যশোর সদর উপজেলার রাজনীতি দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও অপরটির নেতৃত্ব দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বর্তমানে শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ। দলীয় কার্যক্রমেও একসঙ্গে অংশ নিচ্ছেন। কাজী নাবিল আলাদাভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন। 

২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নকে ঘিরে শাহীন চাকলাদার ও কাজী নাবিলের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সদর আসনে দু’জনই দলীয় মনোনয়ন চাইলেও পান নাবিল। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন শাহীনের সমর্থকরা। এর পর ২০১৮ সালে আবারও মনোনয়ন পান নাবিল। এতে তাদের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়। ২০২০ সালে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুতে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনটি শূন্য হলে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছিলেন শাহীন চাকলাদার। তিনি কেশবপুরের এমপি হলে সদরে তাঁর একক আধিপত্যে ভাটা পড়তে থাকে। ফলে তাঁর দীর্ঘদিনের শীর্ষ অনুসারীরা ভেড়েন নাবিলের ডেরায়। এর পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কেশবপুরে দলীয় মনোনয়ন পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আজিজের কাছে পরাজিত হন। রাজনীতিতে শাহীনের অস্তিত্বের স্বার্থে তিনি আবারও সদরের রাজনীতিতে ফিরতে মরিয়া। দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে তিনি সভা-সমাবেশ করেছেন। ফলে নাবিলের আসনে শাহীন সক্রিয় হওয়ায় এই দুই শীর্ষ নেতার দ্বন্দ্ব এখন চরমে।

সদর থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় পুরো জেলার রাজনীতি। দুর্দিনের নেতা শাহীনের সদর উপজেলায় বেশ প্রভাব রয়েছে, রয়েছে অনেক অনুসারী। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে এই উপজেলার টানা তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। তবে কেশবপুরের সংসদ সদস্য হওয়ার পর সদরের রাজনীতিতে কিছুটা আলগা হয়ে যান। তাই এখন আবারও সদরের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করতে চান জেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা। তারই প্রথম ধাপ হিসেবে উপজেলায় বসাতে চান তারই চাচাতো ভাই তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুকে।

গত বুধবার বিকেলে শহরের শাহীনের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যালয় প্রাঙ্গণে ঈদ-পরবর্তী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীরা বলেন, এটি মূলত সদর উপজেলা পরিষদে তাঁর পক্ষের প্রার্থী চূড়ান্ত করার সমাবেশ। অনুষ্ঠানে শাহীন চাকলাদার বলেন, আমি সদরের মানুষের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব।

এ উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে চান শাহীন অনুসারী আরও কয়েক নেতা। তাঁর ভাই একক প্রার্থী হওয়ার প্রক্রিয়ায় তাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল বলেন, আশা করেছিলাম দলের জন্য যারা দীর্ঘদিন কাজ করেছে, সেই তৃণমূলের নেতাকর্মীর চাওয়ার ভিত্তিতে প্রার্থী বানাবেন। কিন্তু যার দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই, তাঁকে প্রার্থী ঘোষণা করা হচ্ছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ফন্টু চাকলাদারের আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী হয়েছে। সেখানে নেতাকর্মীরা তাঁকে একক প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু আমি বলেছি, আমাদের আরও প্রার্থী আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। 

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বলেন, দল থেকে একক প্রার্থী ঘোষণার সুযোগ নেই। ঈদ পুনর্মিলনীতে অনেকেই চেয়েছেন ফন্টুকে দলের প্রার্থী করার। পদপদবি না থাকলেও সে দীর্ঘদিন রাজনীতি করে। এখানে আমার আধিপত্য কোনো বিষয় নয়। জনগণ চাইলে সে নির্বাচন করবে, জনপ্রতিনিধিও হবে।

ফন্টু ছাড়াও শাহীন অনুসারীদের মধ্যে সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে প্রচারে রয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল। আর নাবিল গ্রুপের প্রার্থী হতে চান বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, যুব মহিলা লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতা ফাতেমা আনোয়ার এবং বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews