২০ বছর পর ময়নুল ইসলাম পলের 'পাথরের বৈভব'
প্রাণ-প্রকৃতির বৈচিত্র্য পাথরের শিল্পকর্মে তুলে এনেছেন শিল্পী ময়নুল ইসলাম পল। ঢাকার লালমাটিয়ার কলাকেন্দ্রে চলছে তার শিল্পকর্মের প্রদর্শনী 'পাথরের বৈভব'।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শিল্পী জানান, শুক্রবার শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীতে মোট ৩৭টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে।
তার ভাষ্য, "পাথরের কাজ তো খুব বেশি হয় না। এই প্রদর্শনীতে সেটিই করার চেষ্টা করেছি। এর মধ্যে ৩২টা শিল্পকর্ম আছে গত দুই বছরে করা। বাকিগুলো আগের কাজ। এখানে পাখি আছে, মানুষ আছে, প্রাণ-প্রকৃতির বৈচিত্র্য আছে।"
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়; যা চলবে ১৮ অগাস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সকলের জন্য উন্মুক্ত।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং প্রদর্শনীর কিউরেটর নাসিমা হক মিতু বলেন, "ময়নুল ইসলাম পল একজন নিষ্ঠাবান ভাস্কর। নানা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, নানা প্রতিকূলতার মধ্য অবিচ্ছিন্নভাবে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।"
বাংলাদেশের বাস্তবতায় পাথর নিয়ে কাজ করাটা ‘ভীষণ কঠিন’ মন্তব্য করে নাসিমা হক বলেন, "আমাদের মত দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে কমিশনবিহীন ব্যক্তিগত ভাস্কর্য চর্চায় পাথরে ভাস্কর্য নির্মাণ কঠিন একটি বিষয়। শুধু ব্যয়বহুলই নয়, এগুলো সংরক্ষণ করাও কঠিন।"
৩৫ বছর ধরে ভাস্কর্য চর্চার মধ্য দিয়ে পল শৈল্পিক প্রকাশভঙ্গি অর্জন করেছেন। তাতে রয়েছে আধুনিকতা ও ব্যক্তির নৈঃসঙ্গ, রয়েছে লোকজ ফর্মের নানা অভিপ্রকাশ, রয়েছে উপকরণ আবিষ্কার-পুনরাবিষ্কার ও অনুশীলনের আত্মমগ্ন খেলা।

বিভিন্ন গ্রুপ প্রদর্শনীর পাশাপাশি ১৯৯৭ সালে প্রথম ভাস্কর্য প্রদর্শনীর মধ্যে দিয়ে তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 'পাথরের বৈভব' শিল্পীর পঞ্চম প্রদর্শনী, যা আয়োজিত হচ্ছে দীর্ঘ ২০ বছর পর।
লেখক ও সাংবাদিক ইমতিয়ার শামীম বলেন, বাংলাদেশে শুধুমাত্র পাথরকেন্দ্রিক প্রথম ভাস্কর্য প্রদর্শনী 'স্টোনস-২' করেছিলেন ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান, ২০১৬ সালের মার্চে গ্যালারি কায়াতে। সে হিসেবে পলের এই আয়োজন দ্বিতীয় পাথরকেন্দ্রিক ভাস্কর্য প্রদর্শনী।
"ভাস্কর ময়নুল ইসলাম পলের 'পাথরের বৈভব' এই জনপদের নাগরিক জীবনযাত্রার পরিসরে ভাস্কর্যকেন্দ্রিক শৈল্পিকতাচর্চা ও প্রদর্শনের নতুন এক পরিসর নির্মাণ করেছে।"
এ দেশের রাজনৈতিক সংকট ও সামাজিক প্রস্তুতির অভাবে এখনও ভাস্কর্য শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে মন্তব্য করে ইমতিয়ার শামীম বলেন, "ভাস্কর নভেরা আহমদ ও হামিদুজ্জামান খানের ধারাবাহিকতায় যারা এ দেশে ভাস্কর্য সৃজনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, নিবিড় ও একাগ্র ভূমিকা রেখে চলেছেন, ময়নুল ইসলাম পল তাদেরই একজন। এই প্রদর্শনী বাংলাদেশে ভাস্কর্যচর্চার ক্ষেত্রে যে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিয়েছে, তা দূর করতেও ভূমিকা রাখবে।"

ময়নুল ইসলাম পল বলেন, "বিশ বছর পর একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী; যা শিল্পযাত্রার জন্য বোধকরি কম সময় না। তাই কোনো অজুহাতের গল্প তৈরি করব না। তবে এ কথা সত্য, আমাদের শিল্পচর্চা রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়ায় বিচ্ছিন্নতার সংস্কৃতি গড়ে তোলে।"
এই ভাস্কর্য প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য কলাকেন্দ্রের সংগঠক, কিউরেটর ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান ময়নুল ইসলাম।