জীবনকে অনেক সময় নিখুঁত দক্ষতার এক অপূর্ব উদাহরণ হিসেবে দেখা হয়—মধুচক্রের ছয়কোণা খোপ থেকে শুরু করে তিমির ধীর, শক্তি-সাশ্রয়ী হৃদস্পন্দন পর্যন্ত। মনে হয়, জীবজগতের প্রতিটি কোষ যেন প্রতিটি ক্যালোরি আর পরমাণু গুনে গুনে ব্যয় করে।

তবে সামান্য গভীরভাবে দেখলেই বোঝা যায়, প্রকৃতি সব সময় স্থায়ীত্বের ধার ধারে না। অনেক সময়, জীবনের কিছু অংশ—হোক তা কোষ, একটি প্রাণী কিংবা গোটা প্রজন্ম—আগেভাগেই ক্ষয়প্রাপ্ত বা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

এই নকশাগত ভাঙন আসলে ত্রুটি নয়, বরং জীবনের জন্য উপযোগী একটি কৌশল। এই ধারণার নাম—Selectively Advantageous Instability বা ‘নির্বাচিতভাবে উপকারী অস্থিরতা’ (SAI)।

কেন প্রয়োজন অস্থিরতা?

অস্থায়ী উপাদান ব্যবহার করে জীবজগৎ টিকে থাকে দীর্ঘমেয়াদে। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায়, হঠাৎ পরিবর্তনে মানিয়ে নিতে বা বিবর্তনের জন্য নতুন উপাদান পেতে—এই অস্থিরতাই হয়ে দাঁড়ায় জীবন রক্ষার মূল চাবিকাঠি।

কোষের ভেতরের চমক

প্রতিটি কোষে রয়েছে শত শত এমন প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড, যেগুলো কয়েক মিনিটেই তৈরি হয় এবং ভেঙেও যায়। উদাহরণস্বরূপ, ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর নামের প্রোটিনগুলো জিন চালু করেই অচিরেই ধ্বংস হয়।

এর ফলে উত্তপ্ত কোষ মুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পাল্টাতে পারে—যা জীবন্ত ব্যবস্থাকে করে তোলে দুর্দান্ত অভিযোজিত।

টেলোমিয়ার ও মেনোপজের গল্প

মানব শরীরের ক্রোমোজোমের প্রান্তে থাকা টেলোমিয়ার বয়সের সঙ্গে ছোট হয়। একসময় কোষ তার কার্যক্ষমতা হারায় বা আত্মবিনাশ ঘটায়।

অন্যদিকে, নারীদের প্রজনন ক্ষমতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার (মেনোপজ) পেছনেও রয়েছে বিবর্তনগত সুবিধা—‘গ্র্যান্ডমাদার ইফেক্ট’। এতে বয়স্ক নারীরা সন্তান না নিয়ে নাতি-নাতনিদের দেখাশোনায় পারিবারিক জিন বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করেন।

গবেষণাগারে SAI

যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন টাওয়ার বলেন, ‘প্রোটিন ও আরএনএ গঠন ও ধ্বংসের নিয়মিত প্রক্রিয়া প্রমাণ করে—SAI জীবনের অপরিহার্য অংশ।’

তিনি সম্প্রতি গবেষণাটি প্রকাশ করেছেন Frontiers in Aging জার্নালে। এর মাধ্যমে জীববিজ্ঞানে এটি একটি মৌলিক ‘নিয়ম’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে।

জেনেটিক ভারসাম্য ও বিবর্তন

এই নিয়ম অনুযায়ী, একটি কোষে একই সঙ্গে ভালো ও খারাপ জিন থাকা সম্ভব। একটি অবস্থায় ভালো জিনটি উপকারী, অন্য অবস্থায় মিউটেশন। ফলে পরিবেশ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কোষ নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী জিন চালু-বন্ধ করতে পারে।

এই ফ্লিপ-ফ্লপ প্রক্রিয়া জীবের অভিযোজন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

শুধু জীববিদ্যায় নয়, সমাজেও

মানব সমাজ, হাতির পাল, এমনকি পিঁপড়ার কলোনিতেও দেখা যায় সম্পর্ক গড়া ও ভাঙার ধারা—যা গোষ্ঠীকে আরও অভিযোজিত রাখে।

আজকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা জীবপ্রযুক্তিতেও এই নিয়ম অনুসরণ করে গবেষকরা পরিকল্পিতভাবে যন্ত্রাংশ ভাঙার ব্যবস্থা রাখছেন, যাতে প্রয়োজনের সময় তা নতুনভাবে গড়ে তোলা যায়।

শেষ কথা: ভাঙলেই বাঁচে

টাওয়ারের কথায়, জীবনের সব কিছু চিরস্থায়ী নয়, বরং পরিকল্পিত ভাঙনের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে বেঁচে থাকার রহস্য। কোষ, পরিবার, এমনকি সমাজ—সব জায়গায় সময়মতো পুরনো অংশ ভেঙে ফেলে নতুন গড়ার ক্ষমতাই এনে দেয় দীর্ঘস্থায়িত্ব।

এক কথায়, ‘সঠিক সময়ে কিছুটা ভাঙন—জীবনকে টিকিয়ে রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।’

সূত্র: https://www.earth.com/news/universal-rule-of-biology-sai-proposed-to-explain-aging-and-how-to-control-it/



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews