পরেশ চন্দ্রের (৮০) বাড়ি কুড়িগ্রামের চিলমারীর রমনা ইউনিয়নের মুদাফৎথানা গ্রামে। তার ঘরে ৬ দিন ধরে বুকপানি। স্ত্রী ও নাতিকে নিয়ে উঠেছেন পাউবোর বাঁধে।পেশায় বাইসাইকেল মেকানিক এ বৃদ্ধের এখন কোনো আয় নেই। ঘরে কোনো খাবারও নেই। বুধবার দুপুরে জোড়গাছ নতুন বাজার এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী ত্রাণ কেন্দ্রের সামনে অনুনয়-বিনয় করেন একটা রিলিফের স্লিপের জন্য- ‘বাবা সকাল থাকি না খায়া আছং বাহে, মোর এ্যাহনা ইলিপের বেবস্তা করি দ্যাননা ক্যাঁ।’উত্তরাঞ্চলের বন্যা কবলিত বেশিরভাগ জেলার চিত্র এমনই। বাড়িঘর ডুবে গেছে অনেক আগেই। থাকার জায়গা নেই। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন সড়ক, বাঁধ বা স্কুলের আশ্রয় কেন্দ্রে। কিন্তু ঠাঁই নেই সেখানেও। খাবারের অভাব, ত্রাণ নেই, সুপেয় পানি নেই।পাশাপাশি গৃহপালিত পশু গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। নিজেদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করতেই ত্রাহি অবস্থা, সেখানে এগুলো নিয়ে কি করবেন। অনেকে তাই ‘পানির দরে’ বিক্রি করে দিচ্ছেন গবাদি পশু। এর মধ্যে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। নেই ওষুধের ব্যবস্থা। কোথাও কোথাও সরকারি-বেসরকারি ত্রাণের দেখা মিললেও বেশিরভাগ দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছেনি বলেই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।এছাড়া রাতে বানভাসি মানুষের মাঝে দেখা দেয় সাপ ও ডাকাতের ভয়। বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, রাজশাহী, ফরিদপুরসহ ৮ জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল-ধস দেখা দিয়েছে। ফলে এসব জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।বন্যায় বিভিন্ন জেলায় অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। দিনাজপুরের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বুধবারও বন্ধ ছিল।বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, বন্যায় গত এক মাসে দেশের ২১ জেলায় ১০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে পানিতে ডুবে ৯২ জন। আর মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ সাপের কামড়ে ১০ জন।বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৮৪০ জন। মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এদিন দেশের ছয় জেলায় আরও ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের ২২ জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৩৩ লাখ মানুষ। ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ২১৭ হেক্টর। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ ৫২ হাজার পরিবার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১ হাজার ৫৯৯টি। এগুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ১১ হাজার।এদিকে উজান থেকে পানি নেমে আসায় ঢাকার আশপাশের ৫ নদী ফুলে উঠছে। নদ-নদীগুলো হচ্ছে- বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু এবং টঙ্গি খাল। অদূরে আছে বংশী। এসব নদীতে পানি আসে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র এবং ধলেশ্বরী থেকে। এ ৮ নদ-নদীর পানিই বাড়ছে।দেশের ১৯টি নদ-নদী বুধবারও বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্তত ৫ এলাকায় ৬০ মিলিলিটারের ওপরে বৃষ্টি হয়েছে।সাধারণত কোনো এলাকায় একদিনে ৫০ মিলিলিটার বা তার বেশি বৃষ্টি হলে স্থানীয়ভাবে সেখানে বন্যা পরিস্থিতি হয়। আর ১০ দিন ধরে কোথাও ৩০০ মিলিলিটার বা তার বেশি হলে তা সংশ্লিষ্ট এলাকায় বন্যা তৈরি করে।যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-চিলমারী থেকে আহসান হাবীব নীলু ও গোলাম মাহবুব জানান, চিলমারী উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ৬ দিন ধরে বন্যার পানিতে ভাসছে। বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে উপজেলা শহরে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ২৭ হাজার ৩০২টি পরিবারের প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ পড়েছে সীমাহীন দুর্ভোগে। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। নেই বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্যের ব্যবস্থা।ছড়িয়ে পড়েছে চর্ম রোগসহ পানিবাহিত নানা রোগ। সরকারি ত্রাণ এলেও তা একেবারেই অপ্রতুল। বন্যাক্রান্ত হওয়ার ৬ দিন পর ৬৫ টন চাল ৬ হাজার ৫শ’ পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হলেও ত্রাণ বঞ্চিত রয়ে গেছে ২০ হাজার ৮০২ পরিবার। ফলে ত্রাণের জন্য হাহাকার সর্বত্র।কুড়িগ্রাম থেকে প্রায় ৪০ কিমি. দূরে রমনা ইউনিয়নে এসে দেখা যায়, কাদাপানিতে দাঁড়িয়ে শত শত নারী-পুরুষ অপেক্ষা করছিলেন ত্রাণের জন্য। কিন্তু সবার ভাগ্যে জোটেনি ত্রাণের স্লিপ। বুকপানি ভেঙে আসা ত্রাণবঞ্চিতরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।বন্যা দুর্গতদের জনপ্রতি সরকারিভাবে মাত্র ১ কেজি করে চাল ও ৩ টাকা ৪৯ পয়সা করে বিতরণের কথা বলা হলেও বুধবার পর্যন্ত বন্যার ৫ দিনেও জেলার অধিকাংশ বন্যা দুর্গত মানুষের কাছে তা পৌঁছেনি। ত্রাণ না পেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন যাপন করছেন বানভাসি গৃহহীন মানুষ।তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। বুধবার দুপুরে বিরল উপজেলার রাজারামপুর ইউনিয়নে গিয়ে বন্যার্ত মানুষের আহাজারি দেখা যায়। ওই ইউনিয়নের মালঝার গ্রামের প্রায় ৭০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধা ধলিবালা রায় জানান, বন্যার ৫ দিনেও সরকারি এক ছটাক সাহায্যও পাননি তিনি।বুধবার জেলায় পানিতে ডুবে দুই শিশুসহ আরও ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তারা হল- দুলাল হোসেন (৩৫), মিনি আকতার (৪), আশিক রহমান (৯)। এদিকে সারা দেশের সঙ্গে দিনাজপুরের রেল যোগাযোগ এখনও বন্ধ রয়েছে।ডিমলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্ভোগ এখনও কাটেনি।সরকারিভাবে তেমন ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেন তারা। এ বন্যায় তিস্তা পাড়ের ৩০১টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হলেও মাত্র ৮০টি পরিবারকে সরকারিভাবে সহায়তা দেয়া হয়েছে। রাতে বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে সাপ আতঙ্ক দেখা দেয়। সাপের ভয়ে অনেকে রাতভর জেগে থাকেন।পঞ্চগড় থেকে এসএ মাহমুদ সেলিম জানান, পঞ্চগড়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন বানভাসি লক্ষাধিক মানুষ। কিন্তু আশ্রয় কেন্দ্রে কিছু খাবার মিললেও বাড়ি ফিরে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের প্রধানপাড়ার বৃদ্ধা আলেয়া বেগম বলেন, ‘অষ্টাশির বন্যার পরত এমন বন্যা মুই আর দেখু নাই বা। ঘণ্টাখানতে হামার ঘরখান ডুবে গেইল। ছোয়া পুতা নিয়া হামরা কেলার ভুরা নিয়া স্কুল মাঠত উঠিছি। ওই ঠেনা সরকার হাতে খিচুরি দিছে খাইছু এলা বাড়ি আইচ্ছি কুন্তু খাওয়ার কিছু নাই।’বন্যায় বাড়িঘর হারিয়ে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।বুধবার পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবারের কাছেই ত্রাণ পৌঁছেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্ণা ইউনিয়নের পূর্ব সিন্দুর্ণা গ্রামের তরিকুল ইসলাম তোতা বলেন, ‘আমরা চেয়ারম্যান-মেম্বারের লোক নই বলে পানিবন্দি অবস্থায় পড়ে থাকার পরেও কেউ আমাদের ত্রাণ দেয়নি।’এ ব্যাপারে সিন্দুর্ণা ইউপি চেয়ারমান নুরুল আমিন বলেন, সিন্দুর্ণা ইউনিয়নে পানিবন্দি ৪ হাজার ১০০ পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।মঙ্গলবার পর্যন্ত তাদের মধ্যে শুধু আটশ’ পরিবারকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। বুধবার আরও ৫ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। পর্যায়ক্রমে সবার মাঝেই ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হবে।বন্যায় জেলার ৭টি উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়ন ও ৫টি পৌরসভার ৫৫৪টি গ্রামের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। পানিবন্দি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নৌকা, আশ্রয় কেন্দ্র, বাঁধ, উঁচু স্থানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।অনেকস্থানে বানভাসি মানুষ ও গৃহপালিত পশু একসঙ্গে বসবাস করছে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য ও গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। ভেঙে পড়েছে স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা।এদিকে মেলান্দহ ও বকশীগঞ্জে পানিতে ডুবে ২ জনের মৃত্যু ও ২ জন নিখোঁজ হয়েছেন। নিহতরা হল- মেলান্দহের স্কুলছাত্র জিল্লুর ও বকশীগঞ্জের মোজাম্মেল হক। মঙ্গলবার রাতে সরিষাবাড়ি উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের ডোয়াইল গ্রামে ঝিনাই নদী রক্ষা বাঁধটি ভেঙে গেছে। এতে ইউনিয়নটি বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।এনায়েতপুর থানার সীমান্তবর্তী পাচিল-গোপালপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সড়ক প্রবল পানির স্রোতে ভেঙে গেছে। বুধবার ভোরে বাঁধটির প্রায় ১শ’ মিটার ভেঙে যায়।এতে অন্তত ১৮টি গ্রামের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, সাড়ে ৫ হাজার একর আবাদি জমি, ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৩২টি তাঁত কারখানাসহ হাজারও একর আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া, এনায়েতপুর দক্ষিণের সঙ্গে শাহজাদপুর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, বাঁধ বিলীনে আপাতত কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না। তবে, শুষ্ক মৌসুমে আবার বাঁধটি নির্মাণ করা হবে বলে উল্লেখ করেন।জেলার সার্বিক বন্যাপরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন। বুধবার সকাল থেকে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। কাঁঠালবাড়ি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে খিচুড়ি বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে সেনাবাহিনী। নেতৃত্ব দেন মেজর সেলিম রেজা। এছাড়া নাগেশ্বরী ও চিলমারী উপজেলায় সেনাবাহিনী অবস্থান নিয়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সহযোগিতা করছে।উলিপুরে খাদ্য, বাসস্থান এবং গোখাদ্য সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত ৫ শতাধিক পরিবার। বুধবার উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের বাগুয়া অনন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়, অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। রৌমারীতে পানিতে ডুবে হোসেন আলী (৬০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।বগুড়ার সোনাতলা থেকে ধুনট পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে অন্তত ১৩ হাজার পরিবার বসবাস করে। নতুন করে আরও পরিবার আসায় মানুষের ভারে বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি ইঁদুরের গর্তের কারণে শতাধিক স্থানের লিকেজ দিয়ে পানি ঢুকছে।এতে বাঁধের অনেক স্থান ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সারিয়াকান্দির দীঘলকান্দি হার্ড পয়েন্টের কাছে পরিত্যক্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ২০০ মিটার অংশে ফাঁটল ধরে ধসে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন ও স্থানীয়রা বাঁধটি রক্ষায় মেরামত করছেন। এ বাঁধ রক্ষা করা সম্ভব না হলে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়বে।এদিকে বন্যা দুর্গতরা বিভিন্ন আশ্রয়ন প্রকল্প, বাঁধ ও স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব ও পয়ঃনিষ্কাষণের সমস্যা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাবুল চন্দ্র শীল জানান, বাঁধের ওপর গবাদি পশু রাখছে; খড়ের গাদা করেছেন। এ কারণে ইঁদুর আসছে, এগুলো বাঁধে গর্ত করছে।জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে বানভাসি মানুষ এখনও সড়কে খোলা আকাশের নিচে বা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। অনেকেই ত্রাণ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ বন্যাকবলিত শত শত মানুষের। তবে জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল বলেন, বানভাসি মানুষের জন্য ৮৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব মানুষের খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।তিন দিন পর মোহনপুর উপজেলার ভীমনগর বেড়িবাঁধের ভাঙনের মুখ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বুধবার সকাল থেকে জিও ব্যাগ ফেলা হয়।এরই মধ্যে প্রবল স্রোতের তোড়ে এ উপজেলার ধুরোইল ও ঘাষিগ্রাম ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের দুই হাজার ৩০ হেক্টর জমির ফসল প্লাবিত হয়েছে।আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪টি স্থান ভেঙে গেছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।এছাড়া ছোট যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নওগাঁ শহর রক্ষা বাঁধ উপচে এবং বাঁধের আউটলেট (নদী থেকে পানি বের করে দেয়ার নালা) নওগাঁ শহরের কাজীর মোড় থেকে সরিষা হাটির মোড়, ডিগ্রি কলেজ মোড় থেকে শহরের লাইব্রেরি পট্টি, পোস্ট অফিস পাড়া, শহরের সুপারি পট্টি, কালীতলা, নাপিত পাড়া, আরজি নওগাঁ ও পাটালির মোড় প্লাবিত হয়েছে।বুধবার সকালে ধসে যায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তুলসীগঙ্গা নদীর মাদারতলী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং এর বেশ কয়েকটি জায়গায় ফাটলও দেখা দিয়েছে। দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর বাম তীরের প্রায় ১৫ ফুট বাঁধ ধসে গেছে।খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বিভাগের সহকারী বিভাগীয় প্রকৌশলী নজমুল হক এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় স্থানীয় লোকজন নিয়ে বাঁধটি জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের ব্যবস্থা নেন। এদিকে দেয়াল ধসে বিলাসিনী নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।বন্যায় পানিবন্দি কাউনিয়া, পীরগাছা, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও গঙ্গাচড়া উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক পরিবার। এদের মাঝে খাদ্য, বাসস্থান, বিশুদ্ধ পানির অভাব ও কর্ম সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। বন্যাকবলিত দুর্গম চরাঞ্চলের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসা পরিবারগুলোর মাঝে এখনও সরকারি কোনো সাহায্য পৌঁছেনি।এদিকে বদরগঞ্জের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঠাঁই নেয়া মানুষদের খোঁজখবর নেয়নি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন। বন্যাদুর্গত কোনো কোনো এলাকার মানুষ এখন পর্যন্ত সরকারি ত্রাণ পায়নি।এ কারণে তাদেরকে অনাহার ও অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। ত্রাণের দাবিতে এক ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে বুধবার বিকালে বানভাসি মানুষেরা পৌর শহরে বিক্ষোভ করেছে। এ উপজেলায় পানিতে ডুবে শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।তারা হল- হৃদয় বাবু (১১) ও দুলাল মিয়া (৪২)। তারাগঞ্জে বন্যাদুর্গতদের মাঝে নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।বুধবার যমুনার পানির তোড়ে নলীন-পিংনা-যোকারজচর বাঁধের (তারাকান্দি-ভূঞাপুর সড়ক) কমপক্ষে ১০টি স্থানে ফুটো (লিকেজ) হয়ে পানি প্রবেশ করছে। এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভূঞাপুরে পিংনা-যমুনা সেতু বাঁধে হুমকি দেখা দেয়ায় বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।মঙ্গলবার রাতে ফরিদপুর শহর রক্ষা বাঁধের মোহাম্মদপুর বাজারের কাছে বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দেয়ায় শহরজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। রাতেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নির্দেশে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাঁধটি মেরামতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।এদিকে সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েকশ’ হেক্টর জমির ধানসহ সবজির ক্ষেত। বেশ কয়েকটি স্কুল-মাদ্রাসায় পানি উঠায় সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চরভদ্রাসনে প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিতে ভাসছে। তলিয়ে গেছে তাদের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।যমুনার পানিতে ডুবে গেছে আরিচা ঘাটে অবস্থিত একটি সরকারি পিসি পোল কারখানা। বুধবার সকালের দিকে এ পোল উৎপাদন কারখানাটিতে বন্যার পানি উঠে পড়ায় উৎপাদন কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।সিলেটে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি কমলেও উজান ঢলের আতঙ্ক কাটেনি। শেরপুরে বন্যার পানিতে গোসল করতে নেমে ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হল হানিফ উল্লাহ (১৬) ও নাঈম (৪)। ভারি বর্ষণে নোয়াখালীর নিন্মাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জেলা সদর-ঢাকা সড়কেও পানি উঠেছে।গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কুষ্টিয়ায় পদ্মা ও গড়াই নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অবিরাম বর্ষণে চাঁদপুরের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ৮টি ভাঙনকবলিত স্থানে ফের ভাঙন দেখা দেয়ায় মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।এছাড়া সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে ৬শ’ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ফের ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি। মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি ও লৌহজংয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নাটোরের সিংড়ায় আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে। নেত্রকোনা-কলমাকান্দা সড়কে ৩ দিন ধরে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ জেলার দুর্গাপুরে পানিবন্দি মানুষের মাঝে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews