বাল্যবিবাহ ও যৌতুকের প্রভাব

আ ইন ও বিচা র মন্ত্র ণা লয়ে র অধী নে দেশের বিবাহ রেজিস্ট্রারকারী কাজীগণ কাজ করে থাকে। সারাদেশে নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েক হাজার বিবাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে মুসলিম সমাজে দায়িত্ব পালন করছে। কাজীদের এ পেশাটি এক সময় মুসলিম সমাজে মর্যাদাপূর্ণ ছিল। তাদেরকে আলাদাভাবে সম্মানের চোখে দেখা হতো। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে বিবাহ রেজিস্ট্রার কাজীগণ তাদের সেই ঐতিহ্য গৌরব হারাতে বসছে। লোভনীয় এ পেশাটি পেতেও লাখ লাখ টাকা লেনদেনের কথা শোনা যায়। অনেক দেনদরবার রাজনৈতিক তদবিরের মাধ্যমে এ পেশা যোগ্য অযোগ্য বিচার বিবেচনা ব্যাতিরেকে অনেকেই পেশাটি গ্রহণ করতে পেরেছে। আবার কোথাও কোথাও একজন কাজী অন্যজনের বিরুদ্ধে আইনী মামলায় জড়িয়ে পেশাটি ধরে রেখেছে।

সরেজমিনে বেশকিছু এলাকা ও কাজীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মুসলিম সমাজে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিবাহ রেজিস্ট্রেরী রক্ষণাবেক্ষণ অনেকেই সূচারুরূপে করছে না। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তাদেরকে প্রচলিত আইন অনুসরণের কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হলেও অনেকেই এ বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে অর্থের লোভে বয়সকে গুরুত্ব না দিয়ে অপ্রাপ্ত যুবক ও কুমারীদের বিবাহ রেজিস্ট্রার করতে দেখা যায়।

বয়সের জন্য যা প্রমাণ হিসেবে ছেলেমেয়েকে প্রদর্শন করতে হয়, সেখানে অনেক ধরনের গুজামিল ও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়। এসবের সাথে অনৈতিক অর্থ এবং কাজী ও তার সহকর্মীরা জড়িত। অনৈতিকভাবে ছেলে মেয়ে গোপনে উভয় পরিবারের সম্মতি ব্যাতিরেকে যেসব বিবাহ কাজী অফিসে সম্পন্ন হয় সেখানে নানা ধরনের অনিয়ম ও অর্থের লেনদেন হয়ে থাকে। অনিয়মের সবকিছু সংশ্লিষ্ট কাজী ও কাজী অফিস করে থাকে। যুবক-যুবতিরা স্বল্প সময়ে বুঝতে না পারলেও মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে এসব বিবাহবন্ধন প্রায় ভেঙ্গে যায়। তখন একে অপরের বিরুদ্ধে নিজেরাই মামলায় জড়িয়ে যায়। এসব মামলায় প্রায় সংশ্লিষ্ট কাজীকেও আসামী করা হয়। অর্থলোভে গোপনে উভয় পরিবারের সম্মতি ছাড়া নিরবে এসব বিবাহে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তাদের অনেক দালাল রয়েছে। যারা কাজীর দালাল হিসেবে বিবাহ নিবন্ধনের জন্য যুবক যুবতীদের খবর নিতে থাকে। কখন কার সন্তান আর মেয়ের বিবাহ রেজিস্ট্রার হবে সেদিকেই তাদের দৃষ্টি থাকে। নানাভাবে দেখা যায়, এসব কাজীরা ভিআইপি এলাকা, হোটেল রেস্তোঁরা, উকিল চেম্বার, পাড়া-মহল্লায় অনেক এজেন্ট বসিয়ে রেখেছে। তাদের মাধ্যমে বিবাহ রেজিস্ট্রারের জন্য খবর রাখে। আর তাদেরকে কাজী মোটা অঙ্কের কমিশন দেয়। বিভিন্ন এলাকার বিবাহ রেজিস্ট্রারের জন্য একাধিক রেজিস্ট্রার বালাম ব্যবহার হয়। অনেক সময় সঠিকভাবে রেজিস্ট্রার বালামে সঠিক তথ্য লিপিবদ্ধ হয় না।

বয়স, কাবিন, নাম নানাভাবে ঘষা মাজা ও কারচুপি করতেও দেখা যায়। কাজী অফিসের এসব বিবাহ সংক্রান্ত কার্যক্রমকে কোনোভাবে সঠিক ও স্বচ্ছ বলে মনে হয় না। কিছু কিছু কাজী ছাড়া দেখা যায়, অনেকেই নিয়ম বহির্ভূত পথে বিবাহের কাজ সম্পন্ন করে। বাংলাদেশ সরকার যতই যৌতুক ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের কার্যক্রম জোরদার করছে, তার মধ্যেও কোনোভাবেই বাল্যবিবাহ থেমে নেই। এর পেছনে সমাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজীদের ভূমিকা প্রথমে দেখা যায়। এরপর যৌতুক এটা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। মেয়ে সন্তানের পক্ষ থেকে যেভাবেই হোক যৌতুক ছেলে পক্ষকে দিতেই হবে। দেশে অনেকগুলো যৌতুকবিরোধী আইন ধারা থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ সমাজ দেখছে না। যৌতুক প্রথা বন্ধ করতে হলে পরিবার ও সমাজপতিদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। উভয় পরিবারের সম্মতি আর সামাজিক কথাবার্তা ছাড়া কখনো যৌতুকের লেনদেন হয় না।

সমাজে নিয়োগপ্রাপ্ত বিবাহ রেজিস্ট্রার কাজীদের কঠোরভাবে আইন প্রয়োগে বাধ্য করতে হবে। তাদের রেজিস্ট্রার বই পর্যবেক্ষণ অতীব জরুরী। এসব বিষয়ে দায়িত্বশীল অফিসকে কাজী ও কাজী অফিসকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব পালন করতে হবে। অন্যথায়, রাষ্ট্রের যে যৌতুক বাল্যবিবাহ নিয়ন্ত্রণের সুফল সমাজ সঠিকভাবে পাবে না। নিজের স্বার্থে দেশের জন্য আসুন বাল্যবিবাহ ও যৌতুককে না বলুন।

লেখক : গবেষক, প্রাবন্ধিক

Share this:

Like this:

Like

Loading...

The Post Viewed By: 16 People



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews