অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ সম্প্রতি একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, যেখানে ইসরাইলের দখলদার ও গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগী হিসেবে ৪৮টি আন্তর্জাতিক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফ্ট, অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেড (গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান), অ্যামাজন, আইবিএম এবং প্যালান্টির টেকনোলজিস। পাশাপাশি রয়েছে সামরিক ও ভারী যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যেমন লকহিড মার্টিন, লিওনার্দো এস.পি.এ, ক্যাটারপিলার, ভলভো এবং এইচডি হুন্ডাই।

‘গণহত্যার অর্থনীতি’ ও প্রযুক্তির ভূমিকা

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে এসব কোম্পানি শুধু দখলদারিত্বে অংশ নিচ্ছে না। বরং ইসরাইলের ‘গণহত্যার অর্থনীতিতেও’ জড়িয়ে পড়ছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাইক্রোসফ্ট, অ্যামাজন ও অ্যালফাবেট ইসরাইল সরকারকে ক্লাউড ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সেবা দিয়ে কার্যত সার্বিক নজরদারির ক্ষমতা দিয়েছে। আইবিএম সরবরাহ করেছে সামরিক প্রশিক্ষণ ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণের প্রযুক্তি। প্যালান্টির যুদ্ধক্ষেত্রে ডেটা বিশ্লেষণ ও স্বয়ংক্রিয় লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে AI টুল যেমন ‘ল্যাভেন্ডার’, ‘গসপেল’ ব্যবহারের প্রযুক্তি সরবরাহ করেছে।

অস্ত্র ও নির্মাণ যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ

ইসরাইলের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান প্রকল্পে যুক্ত আছে বিশ্বের ১,৬০০টি কোম্পানি, যার মধ্যে মার্কিন লকহিড মার্টিন মূল ভূমিকা পালন করছে। লিওনার্দো (ইতালি) এবং FANUC (জাপান) এই প্রকল্পে যথাক্রমে সামরিক যন্ত্রাংশ ও রোবোটিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে।

নির্মাণ ও বসতি স্থাপনের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে ক্যাটারপিলার, ভলভো, রাদা ইলেকট্রনিক (লিওনার্দোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান) ও এইচডি হুন্ডাই। এসব কোম্পানির ভারী যন্ত্রপাতি পশ্চিমতীরে ঘরবাড়ি ভাঙা ও অবৈধ বসতি নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে।

পর্যটন, কৃষি ও খনিজ জোগানদাতা কোম্পানি

প্রতিবেদনে বুকিং ও এয়ারবিএনবিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কারণ তারা অধিকৃত জমিতে ইসরাইলি বসতিগুলোতে ভাড়া তালিকাভুক্ত করছে।

কয়লা সরবরাহকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ড্রামন্ড কোম্পানি (মার্কিন) ও গ্লেনকোর (সুইজারল্যান্ড)। ইসরাইলের বিদ্যুৎ সরবরাহে এগুলোর ভূমিকা রয়েছে। চাইনিজ প্রতিষ্ঠান ব্রাইট ডেইরি অ্যান্ড ফুড ইসরাইলের খাদ্য সংস্থা তনুভার মালিক, যা দখলকৃত জমি থেকে উপকৃত হয়। মেক্সিকোর অরবিয়া অ্যাডভান্স কর্পোরেশনের অধীনস্থ নেটাফিম নামের একটি কোম্পানি পশ্চিমতীরে পানি শোষণের প্রযুক্তি সরবরাহ করে।

বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ইসরাইলের দখল ও যুদ্ধের পেছনে মূল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাকরক ও ভ্যানগার্ড, যারা বিশ্বের দুই বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান।

ব্ল্যাকরক

প্যালান্টির (৮.৬%), মাইক্রোসফ্ট (৭.৮%), অ্যামাজন (৬.৬%), অ্যালফাবেট (৬.৬%), আইবিএম (৮.৬%), লকহিড মার্টিন (৭.২%) এবং ক্যাটারপিলার (৭.৫%)—এসব কোম্পানির অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগকারী।

ভ্যানগার্ড

ক্যাটারপিলার (৯.৮%), শেভরন (৮.৯%), প্যালান্টির (৯.১%), লকহিড মার্টিন (৯.২%) এবং ইসরাইলি অস্ত্র নির্মাতা এলবিট সিস্টেমস (২%)—এই কোম্পানিগুলোর অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী।

গণহত্যার মুনাফা ও আইনি দায়বদ্ধতা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি সামরিক বাজেট ৬৫ শতাংশ বেড়ে ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ মাথাপিছু সামরিক ব্যয়। ফলে প্রযুক্তি, অস্ত্র, ও নির্মাণ খাতে বহু কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে এবং তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জ ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

আলবানিজ উল্লেখ করেছেন, এসব কর্পোরেট সত্তা যদি আন্তর্জাতিক আইন মেনে না চলে, তবে ফৌজদারি দায়ের মুখোমুখি হতে পারে। ব্যক্তিগত নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার সম্ভব হতে পারে।

ডাকে জাতিসঙ্ঘ ও আইসিজে

২০২৪ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ) এক পরামর্শমূলক মতামতে জানায়, অধিকৃত পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলের উপস্থিতি ‘যত দ্রুত সম্ভব’ শেষ করতে হবে। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে দখলদারিত্বের অবসান দাবি করেছে।

আলবানিজের প্রতিবেদনে আহ্বান জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যেকোনো কোম্পানিকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের দখলের সাথে জড়িত কার্যকলাপ থেকে অবিলম্বে সরে দাঁড়াতে হবে।

সূত্র : আল জাজিরা



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews