ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি

ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ। কারো কারো মতে, এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। সংখ্যা নিয়া যত মতানৈক্যই থাকুক, একটি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলেই একমত যে, দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি এই মর্মে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করিয়াছে যে, শারীরিক পরিশ্রম এবং খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন না হইলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বড় দুর্যোগের কারণ হইয়া দাঁড়াইতে পারে ডায়াবেটিস। জাতি হিসাবে আমাদের মূল ব্যাধি যে অসচেতনতা এবং নিয়ম না মানিবার প্রবণতা— তাহা লইয়া তেমন দ্বিমত নাই। এই ক্ষেত্রেও চিত্রটি ভিন্ন নহে। বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির কারণ হিসাবে ডায়াবেটিক সমিতি যে দুইটি বিষয়কে দায়ী করিয়াছে তাহাতে ইহা স্পষ্ট যে, কেবল অসচেতনতাই নহে, নিজেদের স্বাস্থ্য তথা জীবনের প্রতি মমত্ববোধেরও মর্মান্তিক অভাব রহিয়াছে অনেকের মধ্যে। ফলে ডায়াবেটিস কেবল ব্যক্তি বা পরিবারের উপরই আর্থিক চাপ সৃষ্টি করিতেছে না, একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলিতেছে। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, ডায়াবেটিসের চিকিত্সায় একজন রোগীর পিছনে বছরে গড়ে প্রায় ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়—দরিদ্র বা স্বল্প আয়ের পরিবারগুলির পক্ষে যাহা দুর্বহই বলা চলে। বিশেষজ্ঞরা বলিতেছেন, সচেতনতার মাধ্যমে এখনই কার্যকরভাবে ডায়াবেটিসের লাগাম টানিয়া ধরা না গেলে আগামী ১৫-২০ বত্সরের মধ্যে এই ব্যয়ভার সবকিছুকে ছাপাইয়া উঠিবে। মনে রাখা আবশ্যক যে, ডায়াবেটিস একদিকে যেমন অন্য আরো নানা ধরনের রোগের কারণ হইয়া দাঁড়ায়, অন্যদিকে তেমনি কর্মক্ষমতা কমাইয়া দেয়—যাহার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পরিবারে এবং অনিবার্যভাবে জাতীয় অর্থনীতিতেও।

বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের মতে, আমাদের দেশে ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি রোগীর সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রায় ৪০ শতাংশই আক্রান্ত হইতেছেন কিডনি রোগে। আক্রান্তদের অনেকের কিডনি নষ্ট হইয়া যাওয়ার পথে। গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হইল, আমাদের দেশে ইহার চিকিত্সা ব্যয়বহুল, ঝামেলাপূর্ণ ও অপ্রতুল হওয়ার কারণে রোগীদের অনেকে বাঁচার আশাই ছাড়িয়া দেন। অথচ উন্নত বিশ্বে শুধু নহে, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশেও কিডনি রোগের উন্নতমানের চিকিত্সা ব্যবস্থা চালু রহিয়াছে দীর্ঘদিন যাবত্। এই ক্ষেত্রে আমরা যে অনেক পিছনে পড়িয়া আছি—তাহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই। দেশে কিডনি প্রতিস্থাপন বা স্থানান্তরে উন্নত চিকিত্সাসেবা এককথায় অপরিহার্য হইয়া পড়িয়াছে। যত দ্রুত সুলভে ও সমন্বিতভাবে এই সেবা নিশ্চিত করা যায় ততই মঙ্গল। অবশ্য ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ বাংলাদেশের একার সমস্যা নহে, বর্তমান ইহা বিশ্বজনীন জনস্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হইয়াছে। সচেতনতার অভাবই যে ইহার জন্য মূলত দায়ী তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপন ও ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষকে বাঁচাইয়া রাখা সম্ভব হইলেও বাংলাদেশের চিত্র এখনো আশাব্যঞ্জক নহে। ভিন্ন নহে প্রায় একশতটি দরিদ্র বা স্বল্পোন্নত দেশের চিত্রও। কিডনি প্রতিস্থাপনসহ উপযুক্ত চিকিত্সার অভাবে এইসকল দেশে মারা যাইতেছে বিপুলসংখ্যক মানুষ—যাহা অগ্রহণযোগ্য হইলেও এই বাস্তবতাকে এড়াইয়া যাওয়ার উপায় নাই। রাতারাতি এই অবস্থার পরিবর্তন যেহেতু সম্ভব নহে, অতএব সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপরই অধিক গুরুত্ব দিতে হইবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews