আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ - ০৬:৪২ | প্রকাশিত: শনিবার ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | প্রিন্ট সংস্করণ

পদে বড় না হয়েও যেসব মনীষী এদেশের শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন তাঁদের মধ্যে অধ্যাপক আ.ত.ম. মুছলেহ উদ্দীন অন্যতম। তিনি ছিলেন একাধারে বিশিষ্ট আলিম, খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, বিদগ্ধ প-িত এবং প্রতিথযশা গবেষক। আ.ত.ম. মুছলেহ উদ্দীন ১৯২৯ সালে ১ ফেব্রুয়ারি ফেনী জেলার উত্তর চাড়িপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মমতাজ উদ্দীন আহমদ। মাতা আসিয়া খাতুন। দাদা রিয়াজুদ্দীন আহমদ। তিনি ১৯৪০ সালে ছোয়াম কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় আসাম বেঙ্গল মাদরাসা বোর্ডে ১ম বিভাগে ২০তম স্থান লাভ করেন। কলিকাতা আলীয়া মাদরাসা হতে ১৯৪৪ সালে ১ম বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার করে ফাযিল পাস করেন। ১৯৪৬ সালে আসাম বেঙ্গল বোর্ডে আই.এ.-তে ১ম বিভাগে ২য় স্থান অধিকার করেন। (উল্লেখ্য ড.এম.এ. বারী ১ম স্থান অধিকার করেন।)
১৯৪৬ সালে তিনি ১ম শ্রেণীতে ২য় স্থান সহ বি.এ. অনার্স এবং ১৯৪৯ সালে একই স্থানসহ এম.এ.(আরবী) ১৯৫৩ সালে এম.এ. (উর্দু) এবং ১৯৭৩ সালে ১ম শ্রেণীতে ২য় স্থানসহ এম.এ. (ফার্সী) ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে যোগদান করে ৮ বছর চাকরি করে জুন ১৯৭২ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবী বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৩ সাল হতে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে নিয়মিত চাকরি সমাপ্ত করে ১৯৯০ সাল হতে বলতে গেলে আমৃত্যু সুপারনিউমারারী শিক্ষক হিসাবে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
তিনি নিজে ডক্টরেট ডিগ্রী ধারী এবং প্রফেসর না হয়েও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন স্কলার তাঁর সুযোগ্য তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা করে ডিগ্রী অর্জন করেন। এমন ঘটনা যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরল। তিনি সরকারী প্রতিনিধি হিসেবে ৩টি আন্তর্জাতিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ওয়ার্কসপে অংশ গ্রহণের জন্য সৌদি আরব, মরক্কো এবং পাকিস্তান সফর করেন। তিনি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাংলা একাডেমি হতে প্রকাশিত প্রায় দু’শতাধিক গ্রন্থের রিভিউয়ার। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ হতে প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ, সিরাত বিশ্বকোষ, কুরআন বিশ্বকোষ, আরবী-বাংলা অভিধান এশিয়া সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাপিডিয়াসহ বৃহৎ এমন কোন কাজ ছিলনা যেখানে তিনি সভাপতি/ সদস্য/ লেখক/ অনুবাদক/ রিভিউয়ার হিসাবে জড়িত ছিলেন না। তাঁর চেয়ে এতো বেশি কাজে এবং এতো বেশি সময় ধরে জড়িত ছিলেন এমন দ্বিতীয় কাউকে খুজে পাওয়া দুষ্কর হবে। এই মহান ব্যক্তিত্ব আর কেউ নন; তিনি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ.ত.ম. মুছলেহ উদ্দীন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত চাকুরী করেন মাত্র ১৭ বছর আর সুপারনিউমারারী শিক্ষক হিসাবে চাকুরী করেন ২০ বছর। এটাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরল ঘটনা।
আরবী, উর্দু, ফার্সী এবং ইংরেজী এ চারটি ভাষায় তাঁর সমান দখল ছিল। তিনি বাংলাদেশের সকল সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী,ফার্সী, উর্দূ ও ইসলামিক স্টাডিজ এ চারটি বিভাগের প্রশ্ন প্রণেতা ও পরীক্ষক ছিলেন। ইসলামী বিশ্বকোষে তাঁর ৭০টি প্রবন্ধ/নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। আরবী সাহিত্যের ইতিহাস (ইসলামিক ফাউ-েশন হতে পাঁচটি সংস্করণ প্রকাশিত) আরবী ছোট গল্প (১৯৯৮) গ্রন্থ দুটো বাংলা ভাষায় অমর গ্রন্থ।
শিক্ষক হিসাবে তিনি ছিলেন আদর্শের মূর্ত প্রতীক। তিনি বিশ বছরাধিককাল অনিয়মিত শিক্ষক হয়েও একজন নিয়মিত শিক্ষকদের মতই কোন কোন ক্ষেত্রে তারচে’ বেশীই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস গ্রহণ করেছেন। তাঁর ক্লাস আছে অথচ তিনি নেন নি এমনটি কোন দিন দেখি নি। তিনি খাতা মূল্যায়ন করতেন যেন ডিজিটাল যুগের পরিমাপক দিয়ে ওজন করে। টিউটরিয়াল খাতাতে প্রতি লাইনে লাল কলমের দাগ থাকতো। এমন কি ‘য়’ ও ‘র’ এর বিন্দুটা সংশোধনে কখনোও ভুল করতেন না। রেফারেন্সে সন্দেহ হলে ঐ শিক্ষার্থীকে ডেকে জিজ্ঞেস করতেন এ বইটি তুমি কোথায় পেয়েছো। আর গবেষককে তো প্রকৃত গবেষকের মতোই খাটিয়ে নিতেন। থিসিসের একটি লাইন তিনি দেখেন নি এমনটি কল্পনাই করা যায় না। থিসিস দেখতে যে কয়দিন সময় লাগতো সে কয়দিন গবেষককে তাঁর পাশে বসে পড়ে শুনাতে হতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচে’ বয়োজেষ্ঠ্য শিক্ষক জ্ঞান তাপসের আমৃত্যু এ ধরনের দায়িত্ব পালনে এতটুকু কসূর হয়নি। আজ কাল বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন দায়িত্ববান শিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়ক আছেন কি না সন্দেহ। বৃদ্ধ বয়সেও দেশ জাতির জন্য যে অবদান রেখে গেছেন তা সত্যিই বিরল। তিনি ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী ইনতিকাল করেন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন।
-প্রফেসর ড. আ.ব.ম. সাইফুল ইসলাম সিদ্দীকী, আল-কুরআন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া, drsaif.siddiqi@gmail.com



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews