পার্বত্যাঞ্চলে জুম তোলার ধুম পড়েছে। ফলনও হয়েছে বাম্পার। পাহাড়ের উচু নিচু জমিতে থোকাই থোকাই ঝুলছে সোনালী রঙের ধান। দূর থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন সবুজের বুক জুড়ে সোনালী ধানের হাসি। আর সে হাসিতে হাসছে জুমিয়ারা অর্থাৎ কৃষাণ কৃষাণীরা।  

আনন্দের উচ্ছ্বাস এখন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঘরে ঘরে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে জুম কাটার উৎসব। গান গেয়ে ধান তোলেন পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র ন-গোষ্ঠীর নারীরা। ‘হিল্লো মিলেবো জুমত যায় দে, জুমত যায় দে, যাদে যাদে পধত্তুন পিছ্যা ফিরি রিনি চায়, শস্য ফুলুন দেঘিনে বুক্কো তার জুড়ায়।’ জুমের পাকা ধানের সোনালি ফসল তুলতে গিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা এ গান গেয়ে থাকে। গানের সুরে মাতিয়ে তুলে পাহাড়। আর ফসল তোলার কাজ শেষে জুম ঘরে মাচায় বসায় গানের আসর। ব্যস্ততার মধ্যেও উৎফুল্ল জুমিয়ারা। পাহাড়ি পল্লিগুলোতে দেখা মিলছে এখন এমন চিত্র।

জুমের ফসল দেখে উৎসব করা এটা পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্য। তবে গত বছর করোনার কারণে জুম উৎসব করতে না পারলেও এবছর উৎসবের পরিকল্পানা রয়েছে জুমিয়াদের বলে জানা গেছে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জীবিকার প্রধান উৎস জুম চাষ। বাংলাদেশের মধ্যে শুধু তিন পার্বত্য জেলা- রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা এ চাষাবাদ করে থাকে। পাহাড়ের ঢালে বিশেষ পদ্ধতি চাষ করা হয় বলে এর নাম ‘জুমচাষ’ হিসেবে পরিচিত। বরাবরের মতো এ বছরও পার্বত্যাঞ্চলে জুমের বাম্পার ফলন হয়েছে। সবে মাত্র শুরু হয়েছে জুম কাটার উৎসব। এবার জুম পাহাড়ে ধান ছাড়া উৎপাদন হয়েছে- মারফা, বেগুন, ধানি মরিচ, ঢেঁড়শ, কাকরোল, কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল।

স্থানীয় জুমচাষী অমর জ্যোতি চাকমা জানান, জুমে বীজ বপনের ৫ মাস পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের পর ফসল পাওয়া যায়। জুমে শুধু ধান নয়, চাষ হয় মিশ্র ফসলও। যেমন- মারফা, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, তুলা, তিল, আদা, হলুদ, মরিচ, বেগুন, জুরো আলু, সাবারাং, মারেশ দাদি (ডাটা), পোজি, আমিলে, ওলকচু, সাম্মো কচু, ঢেড়শ, কলা, পেঁপে ও যবসহ প্রায় ৩৩টি জাতের ফসল উৎপাদন করা হয়।

জুম কৃষাণী দিয়াপুদী চাকমা জানান, বছর শেষে অর্থাৎ পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে গাছ-পালা- বন-জঙ্গল কেটে আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। গাছ-গাছালি পরিষ্কার করার পর জুম চাষে উপযোগী করে তোলা হয় স্থানটি। এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়া জুমের মাটিতে গর্ত খুঁড়ে এক সঙ্গে বিভিন্ন রকম বীজ বপন করে থাকে। ধান পাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। সব শেষে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে তোলা হবে তুলা, তিল ও যব। তবে একটি স্থানে একবারই জুম চাষ করা হয়। পরের বছর জুমচাষ করার জন্য নতুন পাহাড় খুঁজে নেন জুম চাষীরা। 

অন্যদিকে, পার্বত্যাঞ্চলে প্রতি বছর কত একর জায়গায় জুম চাষ হয়- তার সঠিক পরিসংখ্যানের তথ্য আজও জানতে পারেনি কৃষি বিভাগ। 

তবে রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বলেন, চলতি বছর শুধু রাঙামাটি জেলায় জুম চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধারা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১.৩০ মেট্টিক টন। শুরু হয়েছে জুমের ফসল তোলার কাজও। তিনি আরও বলেন, রাঙামাটি প্রায় ১৮টা জাতের জুমে ধান চাষ হয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- হরিন বিনি, পাধাতটারা, আমেই, কালা কবরক, লঙ লঙ, মেলে (কুকী), কামারাঙ, তোর্গী, বাধেইয়া, কবরক, লেঙদাচিকন, গেলঙ, পাত্তেগী, গুরি, বিনি, কবাবিনি ও লোবাবিনি। পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা মধ্যে যারা জুম চাষ করে থাকে, তারা যাতে উচ্চ ফলনশীল ধান ও সবজির আবাদ করতে পারে, সে বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা। এ মৌসুমে উপযুক্ত জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতের কারণে আশানুরূপ ফলন হয়েছে। আশা করি এ বছর খাদ্য সংকট হবে না জুম চাষীদের।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews