শরীর রক্তে শর্করার মাত্রা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হলে ডায়াবেটিস হয়। ডায়াবেটিস হলে চিনি খাওয়া যায় না এটা কমবেশি সবাই জানি আমরা। তবে কেউ কেউ মনে করেন চিনি খাওয়াই ডায়াবেটিস হওয়ার অন্যতম কারণ। এই ধারণার কি ভিত্তি আছে?
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, টাইপ ১ ডায়াবেটিস হলো একটি অটোইমিউন অবস্থা যেখানে ইমিউন সিস্টেম শরীরের ইনসুলিন-উৎপাদনকারী কোষকে আক্রমণ করে। এটি চিনি খাওয়ার কারণে হয় না। তবে টাইপ ২ ডায়াবেটিস ডায়েটসহ জীবনধারার অন্য কারণগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানজিনা হোসেন জানান, চিনি খেলে ডায়াবেটিস হয় কথাটির আসলে প্রত্যক্ষভাবে ঠিক নয়। তবে পরোক্ষভাবে কিন্তু এটা ঠিক। যেমন ওজন বেড়ে গেলে বা ওবেসিটি থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। আর অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, কোল্ড ড্রিংক, ডেসার্ট বা রিচ ফুড খেলে আমাদের ওজন বেড়ে যায়। সে হিসেবে চিনির সঙ্গে ডায়াবেটিসের ঝুঁকির একটি সম্পর্ক রয়েছে। তবে চিনি খেলেই যে ডায়াবেটিস হবে, এই কথাটির ভিত্তি নেই। তবে তাই বলে ইচ্ছে মতো চিনি খাওয়া যাবে এমন নয়। বাড়তি চিনি না খাওয়ার পরামর্শই দেন বিশেষজ্ঞরা।
চিনি এবং ডায়াবেটিসের মধ্যে সংযোগ সম্পর্কে ৫ তথ্য জেনে নিন।
১। অতিরিক্ত চিনি কীভাবে ওজন বাড়ায়?
যদি অত্যধিক চিনি গ্রহণ করেন, বিশেষ করে চিনিযুক্ত পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খান তবে তা ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। কারণ প্রয়োজনীয় পুষ্টি ছাড়াই উচ্চ ক্যালোরি প্রবেশ করে উচ্চমাত্রার চিনি থেকে। অতিরিক্ত ওজন, বিশেষ করে পেটের চারপাশে জমা মেদ টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
২। ইনসুলিন প্রতিরোধের বিকাশ
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনসহ অনেক স্বাস্থ্য সংস্থা এবং গবেষকরা বলছেন, চিনি খাওয়ার সঙ্গে ইনসুলিন প্রতিরোধের সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, স্থূলতা এবং ইনসুলিন প্রতিরোধের ঝুঁকি কমাতে অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ সীমিত করা উচিত।
৩। চিনিযুক্ত পানীয় ব্লাড সুগার বাড়াতে পারে?
সোডা এবং চিনিযুক্ত পানীয় রক্তে শর্করা এবং ইনসুলিনের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ঘন ঘন চিনিযুক্ত পানীয় গ্রহণ করেন তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
৪। প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকানো শর্করা কীভাবে ওজন বাড়াতে পারে?
অনেক প্যাকেটজাত খাবারে অতিরিক্ত শর্করা থাকে। এমনকি যেমন সস, রুটি এবং সিরিয়ালের মতো খাবারেও লুকানো শর্করা থাকতে পারে। প্রক্রিয়াজাত খাবারের শর্করা সময়ের সাথে সাথে ওজন বৃদ্ধি করে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
৫। কীভাবে সুষম খাবার ডায়াবেটিস কমাতে পারে?
ফাইবার, চর্বিহীন প্রোটিন, গোটা শস্য এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করতে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে ফাইবার রক্ত প্রবাহে চিনির শোষণকে ধীর করতে সাহায্য কর।