খোলাবাজারে অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রা লেনদেন করিবার কারণে বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক চার ব্যাংক ও দুই মানি এক্সচেঞ্জের ২১ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয় আশাব্যঞ্জক। আইনানুসারে বিদেশ হইতে আগত ব্যক্তি তাহার বৈদেশিক মুদ্রা টাকায় রূপান্তরকরণের সময় সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে ভাউচার দিতে হয় এবং সেই অর্থ যথাযথ নথিবদ্ধ করিতে হয়। কিন্তু বিমানবন্দরে কর্মরত অনেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও মানি এক্সচেঞ্জের মালিক জাল ভাউচার দিয়া বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ করেন। এই সকল মুদ্রা ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জের নথিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। ফলে এই সকল মুদ্রা দেশের কেন্দ্রীয় রিজার্ভে যুক্ত হয় না। ইহাতে একদিকে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি হয়, অপরদিকে সংশ্লিষ্টরা বিদেশ গমনকারী ব্যক্তির নিকট বেশি মূল্যে বিক্রয় করিয়া নিজের নিকট লাভ রাখিয়া দেয়। উক্ত বিষয় সংবাদমাধ্যমে আসিলেও কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। স্বভাবত গত কয়েক বৎসরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, অর্থমূল্য হ্রাস এবং আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ক্রমশ নিম্নমুখী হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে মন্দাভাব দৃশ্যমান। তদুপরি এই অবৈধ লেনদেন সংকট বৃদ্ধিকে আরও উস্কাইয়া দিতেছে। এখন দুদকের কার্যকর পদক্ষেপে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটিবে বলিয়া আমরা বিশ্বাস করি, যদিও কবি জীবনানন্দের ভাষায় বলিতে হয়– এতদিন তাহারা কোথায় ছিলেন?
বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় এবং অর্থ পাচারের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুদকের চার সদস্যের দল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিযান চালাইয়াছিল। উহাতে ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদিগের জালিয়াতির মাধ্যমে খোলাবাজারে ডলার ও অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়ায় এখন তাহারা ব্যবস্থা লইয়াছে।
দেশে সহস্রাধিক অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ বিদ্যমান, যাহারা প্রত্যহ ৭০০ হইতে ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন করিয়া থাকে। তন্মধ্যে অনেক অর্থই জাতীয় হিসাববহির্ভূত থাকিয়া যায়। এতদ্ব্যতীত আলোচ্য প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের ঘটনাও ঘটিয়া থাকে। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স। বৈধ পথে উহা আসিলে সরকার তথা দেশই লাভবান হইবে। তজ্জন্য দুদকে এই প্রকার তৎপরতা জারি থাকিলে অবৈধ লেনদেন প্রতিহত করা সম্ভব হইবে।