দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অযুত সম্ভাবনা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এখন ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলিতেছে। ক্রমশ বদলাইয়া যাইতেছে অত্র অঞ্চলের চিত্রপট। পদ্মা সেতু, পায়রা সমুদ্র বন্দর, তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সেতু, সড়ক, ক্যান্টনমেন্ট নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে আগাইয়া চলিতেছে। দিন বদলের স্বপ্ন হাতছানি দিয়া ডাকিতেছে এতদঞ্চলের মানুষকে। ইহার পাশাপাশি স্থাপিত হইতেছে কিছু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তবে প্রধানত বিভিন্ন বন্দর সুবিধার কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৃহত্ শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়িয়া উঠিতেছে। বাড়িতেছে দেশি-বিদেশি ও সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ। আর এই কর্মযজ্ঞের ফলে স্বভাবতই জমির মূল্যও ইতোমধ্যে বৃদ্ধি পাইতে শুরু করিয়াছে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বর্তমান অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ অব্যাহত থাকিলে ২০৫০ সাল নাগাদ এই অঞ্চল হইতে বত্সরে চার হইতে সাড়ে চার হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থনৈতিক উত্পাদন অর্জিত হইবে। পরিকল্পিত অর্থনৈতিক করিডোর গঠন করা সম্ভব হইলে সেই ক্ষেত্রে উত্পাদন বা অর্থনৈতিক আয় উন্নীত হইবে ১৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে। ইহাতে বাড়তি আড়াই কোটি লোকের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হইবে। সমন্বিতভাবে এই অঞ্চলের উন্নয়ন করা সম্ভব হইলে ২০৫০ সাল নাগাদ তাহা সাড়ে তিন কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের এলাকায় পরিণত হইবে। ইহা ছাড়াও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে, বিশেষ করিয়া পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হইলে এই অঞ্চলের গ্রাম ও শহরের ব্যবধান কমাইয়া আনা, অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থা উন্নত করা ও বৈশ্বিক ভ্যালু চেইন ব্যবস্থার সহিত যুক্ত করা সহজ হইবে। ইতোমধ্যে এই এলাকায় নূতন নূতন শিল্পকলকারখানা প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হইয়া উঠিয়াছেন অনেকে। বাড়িতেছে রাস্তাঘাটসহ নানা অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা। ২০১১ সালে সংশোধনপূর্বক পদ্মা সেতু প্রকল্পে রেললাইনযুক্ত হইবার পর মানুষের প্রত্যাশা হইয়াছে আকাশচুম্বী। ইহাতে যুক্ত করা হইয়াছে গ্যাস, বৈদ্যুতিক লাইন এবং ফাইবার অপটিক ক্যাবলও। এই সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা ও তাহার বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও কর্মউদ্যোগ অনুঘটকের কাজ করিয়াছে।

জানা মতে, ভাঙ্গা হইতে পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত চার লেনের সড়কের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন। রেললাইনের সমীক্ষাও শেষের পথে। ভাঙ্গা হইতে বরিশাল হইয়া পায়রা সমুদ্রবন্দর যাইতে গৌরনদীর সাউদের খাল, গায়নাঘাটা, আশোককাঠি, রহমতপুর ও বাকেরগঞ্জের বোয়ালিয়া ও বাকেরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে দেখা মিলিবে ৬টি সেতু নির্মাণের কাজ। রহমতপুরে নির্মিত হইতেছে বিমানবাহিনীর রাডার স্টেশন। লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত হইতেছে পর্যটনের সুবিধা সমৃদ্ধ চারলেনের পায়রা সেতু। সেতুটির পয়েন্টে প্রায় আড়াই হাজার একর জমির ওপর নির্মিত হইতেছে শেখ হাসিনা সেনানিবাস। এইজন্য এখানকার মহাসড়কের দুই পার্শ্বে বিভিন্ন কোম্পানি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, গার্মেন্ট ও হাউজিং কোম্পানির সাইনবোর্ড চোখে পড়িতেছে। পটুয়াখালী-কলাপাড়া মহাসড়কের রজপাড়া (বারকানী) হইতে পূর্ব বন্দরের দিকে ৩৩ ফুট প্রশস্ত ৫.২২ কিলোমিটার দীর্ঘ শেখ হাসিনা ফোর লেন সড়ক নির্মাণের কাজও দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হইতেছে। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার আগে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী খুলনা ছিল এই অঞ্চলের অর্থনীতির প্রাণভোমরা ও কেন্দ্রভূমি; কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবহেলিত ও উপেক্ষিত থাকিয়াছে। এক সময় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আগাইয়া থাকা পদ্মাপাড়ের এই অংশটি কালক্রমে পশ্চাত্পদ জনপদে পরিণত হইয়াছিল। তবে পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে বর্তমানে এখানকার উন্নয়নে গতি সঞ্চারিত হইয়াছে। আশা করা যায়, এই এলাকায় অর্থনৈতিক করিডোর গড়িয়া তোলা হইলে শুধু সংশ্লিষ্ট এলাকাই নহে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও তাহা বিরাট অবদান রাখিবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews