২০২৫ সালের ২৫ মে বাংলাদেশ সরকার ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে। এ অধ্যাদেশের মাধ্যমে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৩৭ ধারা সংশোধন করে নতুন ৩৭ক ধারা সংযোজন করা হয়। এতে সরকারি চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে চার ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা ছাড়াই সরাসরি শাস্তি দেওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটি নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। আইনটি জারির পর থেকেই তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয় প্রশাসনিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে। এই প্রবন্ধে আমরা অধ্যাদেশটির মূল বিধান, আইনি বিশ্লেষণ, আন্দোলনের ধারা, রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া, সুপারিশ ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষণ করব। অধ্যাদেশের মূল বিধান ৩৭ক ধারায় বলা হয়, যদি কোনো সরকারি কর্মচারী দায়িত্বে গাফিলতি, যুক্তিহীন অনুপস্থিতি, সহকর্মীর দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান বা তাকে অনুপস্থিত হতে প্ররোচিত করেন, তবে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ১৪ দিনের মধ্যে চাকরিচ্যুতিসহ শাস্তি দেওয়া যাবে। এ প্রক্রিয়ায় বিভাগীয় মামলা বা পূর্ণ শুনানির ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আপিলের সুযোগ সীমিত এবং রাষ্ট্রপতির আদেশ চূড়ান্ত বলে গণ্য করা হয়েছে। ফলে কোনো কর্মচারী যদি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তি করতে চান, তাহলেও তার আইনি পথ কার্যত বন্ধ। এই ধারা বাস্তবায়নের ফলে একজন সরকারি কর্মচারীর ওপর তাৎক্ষণিক শাস্তি আরোপ সম্ভব হবে, যা প্রশাসনিকভাবে দ্রুততা এনে দেবে এমনটি সরকারের ব্যাখ্যা। কিন্তু বাস্তবে এটি হয়তো প্রয়োগের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থার পথও খুলে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খারাপ হলে, এই ধারার অপপ্রয়োগে সহজেই তাকে চাকরিচ্যুত করা যেতে পারে। এতে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও চাকরি নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

অধ্যাদেশটি জারির পরপরই ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’ এবং অন্যান্য সংগঠন একত্র হয়ে প্রতিবাদে নামে। ২৪ মে সচিবালয়ে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের সূচনা হয়। এরপর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন, মিছিল, স্মারকলিপি প্রদান এবং কর্মবিরতি কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ২৬ মে তারা ৫ দফা দাবি উত্থাপন করে যার মধ্যে অন্যতম ছিল: অধ্যাদেশ বাতিল, নবম বেতন কমিশন গঠন, ৫০% মহার্ঘ ভাতা প্রদান, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং রেশন সুবিধা ও ইনক্রিমেন্ট বাস্তবায়ন। ২ জুন তারা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি জমা দেয় এবং ২২ জুন থেকে সারা দেশে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়। অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট হলো সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও অসন্তুষ্টি। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করে দেওয়া, নিয়মিত পদোন্নতি না পাওয়া, বেতন কাঠামোতে বৈষম্য, বিভাগীয় পদে বেসামরিক কর্মচারীদের অবমূল্যায়ন, আউটসোর্সিংয়ের নামে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বৃদ্ধিÑ এসব সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মূল্যস্ফীতির চাপে ৫০% মহার্ঘ ভাতা না পাওয়ার চাপ। এমন অবস্থায় নতুন অধ্যাদেশটি যেন এক তীব্র আঘাত হিসেবে এসেছে।

আন্দোলনের গতি ও পরিধি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এটি সচিবালয়কেন্দ্রিক হলেও দ্রুতই বিভাগ, অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছে। মাঠ প্রশাসনেও কর্মচারীরা একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ভিডিও, বক্তব্য ও ছবি ভাইরাল হয়েছে, যা জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। আন্দোলনকারীদের প্রতীকী মিছিল, কালো ব্যাজ ধারণ, কাগজে গামছা লিখে বুকে ঝুলিয়ে প্রতিবাদ, এসব সৃজনশীল উপায়ে আন্দোলন একটি সংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংশোধিত এই অধ্যাদেশ একতরফা, শাস্তিমূলক এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার পরিপন্থী। বিভাগীয় তদন্তের সুযোগ না থাকা এবং আপিল সীমাবদ্ধ হওয়ায় এটি সংবিধানের ২৬, ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে, যা প্রশাসনিক কাঠামোর স্থিতিশীলতা বিঘিœত করতে পারে। রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের পরিবর্তে দমনমূলক নীতি কার্যকর হতে পারে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি রাষ্ট্রে আইনের শাসন মানে শুধু অপরাধের শাস্তি নয়, বরং অপরাধ প্রমাণের ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়াও অপরিহার্য। অথচ, এই অধ্যাদেশে অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ সীমিত। আবার রাষ্ট্রপতির আদেশ চূড়ান্ত হওয়ায় উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপও অপ্রযোজ্য হয়ে পড়ে। এর ফলে কর্মচারীদের ন্যায্যতা পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়, যা মানবাধিকার পরিপন্থী। আইনজীবীরা বলছেন, এই ধারা সংবিধান পরিপন্থী হওয়ায় এটিকে চ্যালেঞ্জ করার মতো আইনগত সুযোগ থাকা উচিত।

সরকারি পর্যায়ে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে একটি পুনর্বিবেচনা কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা অধ্যাদেশের আইনি ও প্রশাসনিক দিক মূল্যায়ন করছে। সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান জানানো হলেও কর্মচারীরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, অধ্যাদেশ পুরোপুরি বাতিল না হলে তারা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবেন না। তারা বিশ্বাস করেন যে শুধুমাত্র আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের উচিত ছিল সংশ্লিষ্ট পক্ষদের সঙ্গে আগেই আলোচনা করা। হঠাৎ করে অধ্যাদেশ জারি করে তা চাপিয়ে দেওয়া সরকারের সঙ্গে কর্মচারীদের আস্থার সম্পর্ক নষ্ট করেছে। আন্দোলনের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও পরোক্ষভাবে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এটি একটি ‘রাষ্ট্রীয় জুলুমের নিদর্শন’। তবে সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, আইনের অপপ্রয়োগ যেন না হয় তা নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু কর্মচারীদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি রয়ে গেছে। এই আন্দোলন একটি নির্দিষ্ট অধ্যাদেশের বিরোধিতা ছাড়িয়ে বৃহত্তর চাকরি নিরাপত্তা, সাংবিধানিক অধিকার ও সম্মানের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। সারাদেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক ইউনিটে কর্মচারীদের একাত্মতা বেড়ে চলেছে। যদি সরকার এই দাবি উপেক্ষা করে, তাহলে প্রশাসনে হতাশা, অসন্তোষ এবং নিষ্ক্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে পারে। অপরদিকে, সম্মানজনক সমাধান খোঁজার মধ্য দিয়ে সরকার প্রশাসনের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে পারে।

সরকারের উচিত এই অধ্যাদেশ বাতিল করে একটি নতুন আলোচনাসভা আহ্বান করা, যেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী সংগঠন ও আইনি বিশেষজ্ঞরা অংশ নিতে পারবেন। বিভাগীয় তদন্ত বাধ্যতামূলক করে এবং অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ দিয়ে আইন পুনর্লিখন করা উচিত। রাষ্ট্রপতির আদেশকে চূড়ান্ত না করে আদালতে আপিলের পথ উন্মুক্ত রাখতে হবে। এতে আইনের ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে। দীর্ঘদিন ধরে বেতন কাঠামোর সংস্কার চাওয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে কর্মচারীদের অসন্তোষ অনেকটাই প্রশমিত হবে। সরকারি কর্মচারীদের সংগঠিত অধিকার আইনি স্বীকৃতি দেওয়া গেলে তারা নিজেদের অধিকার শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ্য ভাতা ও রেশন সুবিধা নামীয় এই সুবিধাগুলো চালু করা ন্যায়সংগত হবে। অধিকন্তু অধ্যাদেশের এমন ধারাগুলো সংশোধন করতে হবে, যা কর্মচারীদের ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত করে। বিভাগীয় তদন্ত ও শুনানির সুযোগ বাধ্যতামূলক করা উচিত। শাস্তিমূলক বিধান প্রয়োজন হলেও তা শৃঙ্খলা বজায় রাখার সাথে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার সমন্বয়ে হতে হবে। কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন বা সংগঠন করার অধিকার স্বীকৃতি দিতে হবে, যাতে তারা শান্তিপূর্ণ ও সংগঠিতভাবে তাদের দাবি উপস্থাপন করতে পারে। বেতন কাঠামো, পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ ও সামাজিক সুরক্ষা প্রণালীতে সুসংহত সংস্কার আনা উচিত। সরকার, কর্মচারী সংগঠন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপ অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে পারস্পরিক আস্থা গড়ে ওঠে।

উপসংহারে বলতে পারি যে, সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রবর্তনের পেছনে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা স্পষ্ট, তবে এর একতরফা ও দমনমূলক নীতির কারণে তা সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। কর্মচারীদের ন্যায্যতা ও মানবাধিকার নিশ্চিত না করেই আইন প্রয়োগ কার্যকর হলে প্রশাসনিক দুর্বলতা ও কর্মবিরোধী মনোভাব দীর্ঘমেয়াদে বাড়বে। এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ হলো সুষ্ঠু সংলাপ, আইনি সংস্কার এবং কর্মচারীদের সঙ্গে অংশীদারিত্বমূলক শাসন ব্যবস্থা গঠন। এটি দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রশাসনিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। সচিবালয়ে এই বিক্ষোভ কর্মসূচী শুধু তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি হলে তা রাষ্ট্রের জন্য বিশেষ কোন কল্যান বয়ে আনবে না। আর সে লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারী আইনে পূর্বের মতো কর্মকর্তাদেরকেও এই সংশোধিত অধ্যাদেশের আওতায় আনতে হবে। এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আমাদের পাঠকবৃন্দ বিশেষ কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সরকারি কর্মচারী আইন (সংশোধিত অধ্যাদেশ) জারি কি প্রশাসনিক সংষ্কারের অংশ? কর্মচারীদের এই আন্দোলনে সাবেক এবং বর্তমানে চাকরিরত অনেক কর্মকর্তাদেরই সংশ্লিষ্টতা বা ইন্ধন আছে বলে প্রতিয়মান হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও এরকমটাই মনে হয়েছে। সরকারি কর্মচারী আইন সংশোধন কার্যক্রমে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলাপ আলোচনা না করাটা এড়িয়ে যাওয়া বা পাশ কাটানো সংস্কৃতি বলে বিবেচ্য হতে পারে, যা কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারি কর্মচারী সংশোধিত আইনে বেতন কাঠামোতে পরিবর্তন আনা আজ সময়ের দাবি। কোন মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পদের কর্মকর্তার বেতন কাঠামো অনুযায়ী তার দাবিকৃত বেতন যদি ১ লক্ষ টাকা হয় আর নি¤œপদবীধারী একজন কর্মচারী বেতন কাঠামো অনুযায়ী দাবিকৃত বেতন যদি ২০ হাজার টাকা হয়, সেটা নৈতিকতা বা মানবিক বিবেচনায় মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনকাঠামো পার্থক্যটা যৌক্তিক পর্যায়ের মধ্যে থাকা বাঞ্চনীয়। এখানে আরও উল্লেখ্য যে, পদোন্নতির ক্ষেত্রে ক্যাডার নয় বরং মেধা ও পরীক্ষাই যৌক্তিক মাপকাঠি হওয়া উচিত। চাকরিকে সর্বাত্মক পেশদারিত্ব ও প্রাতিষ্ঠানিকতার মর্যাদায় আনতে হবে। এছাড়া কাজের মান ও গুণগত মানের দিক থেকে দায়িত্ব পালনের বিষয়গুলিকে চাকরিজীবীদের জন্য করণীয় হিসেবে দেখার মতো প্রশাসনিক সংস্কারমূলক কাজে হাত দিতে হবে।

লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews