কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের চিলমারীর সেই ১৯৭৪ সালের আলোচিত বাসন্তীসহ তার পরিবার এখন প্রাণনাশের হুমকিতে। জীবিত বাসন্তীকে মৃত বানিয়ে আদালতে মামলা করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় বাসন্তী ও তার পরিবারকে দেয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি।
নিরূপায় হয়ে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগে বাসন্তীর পরিবারের পক্ষ থেকেও পাল্টা মামলা করা হয়েছে আদালতে। পাল্টাপাল্টি মামলারে কারণে আবারো আলোচনার ঝড় তুলেছে সেই আলোচিত বাসন্তী। মামলা তুলে নেয়ার হুমকিতে আরো বেশি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছে তার পরিবারের লোকজন।
স্থানীয়রা জানায়, সম্প্রতি যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব বিভাগের ঊর্ধ্বতন কম্পিউটার অপারেটর কাম অফিস সহকারী ও সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াকুব চিলমারীতে বেড়াতে আসেন। তিনি চুয়াত্তরের সেই আলোচিত বাসন্তীর বাড়ি রমনা মডেল ইউনিয়নের জোড়গাছ এলাকায় যান। সেখানে বাসন্তীর সঙ্গে বেশ কিছু ছবি ক্যামেরাবন্দি করেন। পরে সেসব ছবি তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে দেন। তাতে বাসন্তীর জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এ ঘটনার কদিন পরে অজ্ঞাত কারণে ইফতেখার কামাল খান নামে এক ব্যক্তি বাসন্তীকে মৃত দাবি করে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম ফরিদ আলমের আদালতে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে মামলা করেন।
মামলাটি দায়ের করার পর পরই শুরু হয় হৈ চৈ। বাসন্তীর বাড়িতে ঢল নামে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের। ছুটে আসে দূর-দূরান্তের মানুষজন। পরিবার ও এলাকাবাসী ক্ষোভে দুঃখে ফেটে পড়ে। তারা বাসন্তীকে মৃত দাবি করা ব্যক্তির বিচার চান। ওই ব্যক্তির বিচারের দাবি উঠার পর থেকেই বাসন্তীসহ তার পরিবারের ওপর নেমে আসে দফায় দফায় হুমকি।
প্রাণনাশের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতেই বাসন্তীর ভাতিজা দিলীপ চন্দ্র দাস বাদী হয়ে বাসন্তী ও তার পরিবারের ক্ষতিসহ জীবন নাশের অভিযোগ উল্লেখ্য করে বনশ্রীর ইফতেখার কামাল খান ও চট্টগ্রামের রবিউলসহ তিনজনকে আসামি করে কুড়িগ্রাম ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
বাসন্তীর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, আসামিরা এর আগে তাদের বাড়িতে লোকজন নিয়ে এসে পিস্তল দেখিয়ে জীবননাশের হুমকি দেয়। তারা ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে যায়। এরপর থেকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে চলেছেন।
বাসন্তীর ভাই আশুরাম দাস অভিযোগ করেন, মামলা দায়েরের পর থেকেই তারা চরম নিরাপত্তহীনতায় ভুগছে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রমনা মডেল ইউপি চেয়ারম্যান নুর-ই-এলাহী তুহিন ১৯৭৪’র বাসন্তী এখনো জীবিত আছেন দাবি করে বলেন, যারা বাসন্তীকে মৃত বলছে তারা আসলে মিথ্যাচার করছে। হুমকির ব্যাপারে আমি শুনেছি।
চিলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজনুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় কুড়িগ্রামের চিলমারীর জেলেপাড়ার দুই বোন বাসন্তী ও দুর্গাতির জাল পরা একটি ছবি দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়। ছবিটি তুলেছিলেন আফতাব হোসেন। সেই ছবি নিয়ে দেশে বিদেশে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে।
বাংলামেইল২৪ডটকম/এমএন