তখন ঘড়ির কাটায় সকাল সাড়ে ১০টা বাজে, আমার বাবাকে ভাত খাওনো শেষ করে  বাসার বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এমন সময় আমার বাসায় কাজ করে কুলসুম। আমাকে মামা বলে ডাকে।

ও আব্বার রুমে বসেই ডাক দিল মামা নানায় যেন কেমন করে। আমি আমার স্ত্রী এক রকম দৌঁড়ে  বাবার রুমে গিয়ের  খেলাম তার  শ্বাষ কষ্ট হচ্ছে। ডাক্তার বাসায় এলো অক্সিজেন  দিলাম। কিছুতেই কিছু হলো, সবাইকে কাঁদিয়ে পরোপারে চলে গেল আমার বাবা।  সেই থেকে আজ ৫ বছর ৪ মাস আমি বাবা ডাকা থেকে বঞ্ছিত।

আমার বাবার নাম মোঃ বজলুর রহমান। তিনি শান্ত মেজাজের মানুষ ছিলেন। কখনো তাকে উত্তেজিত হতে দেখিনি। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি)  উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ছিলেন। বাসা টু অফিস, এপর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিলেন তিনি। মাঝে মাঝে বাজারে যেতেন বাসার প্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য। তার বিশেষ কোন বন্ধু ছিলোনা। 


আমার বাবা চাকরী থেকে অবসরে যাওয়ার একবছর পর্যন্ত তিনি স্বাভাবিক ছিলেন। এরপর আস্তে আস্তে তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করলেন। সবার অজান্তে ঘর থেকে বেড় হয়ে যেতেন। তাকে খুঁজে আনতে হতো। একদিন সকালে ঘমি থেকে উঠে দেখি বাসার দরজা খোলা। কাছাকাছি কোথাও তাকে খুঁজে পেলাম না। আমার স্বজনরা মিলে ৮-১০টি বাইকনিয়ে  বাউফলে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে বেড় হলাম। আমি গেলাম ভাঙ্গরা হয়ে দশমিনা উপজেলা দিকে।  রনগোপালদি এলাকায় রাস্তার পাশে দেখা মিললো আমার বাবার । অনেক পরিশ্রান্ত ছিলেন তিনি। দেখামাত্র তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম। তারপর মটরসাইকেলের পিছনে বসিয়ে তার তারপিছনে আমার এক চাচাতো ভাই ছিল তাকে বাসায় নিয়ে এলাম।


এরপর  সিদ্ধান্ত নিলাম তাকে ঢাকা নিয়ে গেলাম, দেশের একজন বিশেষজ্ঞ নিওরো সার্জনকে দেখালাম। তিনি  পরীক্ষা নীরিক্ষার  রিপোর্ট দেখে বলেন, আমার বাবা ব্রেইন স্টোক করেছেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত ওষুধ সেবন করতে হবে। ডাক্তারের দেয়া নিয়মীত ওষুধ সেবনের পর আমার বাবা কিছুটা সুস্থ হলেন। ঘর থেকে কোথাও যেতেননা। সারা দিন রাত শুয়ে থাকতেন। 

একটা সময় এলো তাকে  লিকুইড (নরম খাবার) খাবার চামচ দিয়ে খাওয়াতে হতো। এরপর এমন  একটা সময় এলো তিনি বাথ রুম বিছানায় করতেন। আমার মা মারা গেছে বাবা মারা যাওয়ার দুই বছর আগে। সংসারে আমি ও আমার স্ত্রী। আমার স্ত্রী আমার বাবাকে নিজের বাবারমত করে ভালোবাসতেন। দাঁড়ি-গোফ বড় হলে তিনি কেটে দিতেন। খাবার খাওয়াতেন। এমনকি তার মলমূত্রও তিনি পরিস্কার করতেন। আমি আমার স্ত্রী দুজনে মিলে আমার বাবার সেবা করতাম। আমার বাসায় কাজ করতো কুলসুম, ও আমার বাবাকে নানা বলে ডাকতো ও আমার বাবার জন্য অনেক কিছু করেছে।  আমার বাবা অসুস্থ অবস্থায় কেটে যায় ১০-১১ বছর।  এই সময়ের  ঘরে বাইরে আলোর মুখ দেখেননি। 


রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোনে ৪ দফায় অ্যালারাম  বাজিয়ে রাখতাম। কারণ যদি ঘুমিয়ে পরি তা হলে আমার বাবা বিছানায় প্রশ্রাব বা মলত্যাগ করে শরীরের ঠান্ডা লেগে যেতে। এ কারণে অ্যালারাম বেজে উঠলেই ঘুম থেকে উঠে বাবার রুমে ছুটে যেতাম। পরনের ভেজা কাপড় পরিবর্তন করতাম। আবার কখনো গিয়ে দেখতাম আমার বাবা ঘুমাচ্ছে। তখন তার কপালে হাত বুলিয়ে দিতাম। মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।


আমার বাবার অসুস্থাকালীন সময়  আমি ও আমার স্ত্রী সন্তান কোথাও বেড়াতে যেতে পারতামনা। আমি বিশেষ প্রয়োজনে কোথাও গেলে আমার স্ত্রী আমার বাবার দেখভাল করতেন। আমার স্ত্রীও অসুস্থ ছিলেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তার হার্টে রিং বসানো হয়েছে। তার স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকার পরেও আমার বাবাকে কখনো অবহেলার চোখে দেখেননি। ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন আমার বাবা। সেই থেকে আমি আর বাবা বলে ডাকতে পারিনা তাই অনেক কষ্ট হয় আমার। আল্লাহ সব বাবাকে হেফাজত করুন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews