হারিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। সবুজ শ্যামল ছায়া ঘেরা উপজেলা জামপুর ও সাদিপুর ইউনিয়নের রাস্তার দুপাশে একের পর এক দেখা যেত নজরকাড়া মাটির ঘর। শীত ও গরম উভয় মৌসুমে আরামদায়ক এই মাটির ঘর। তাই এই ঘরকে বলা হয় ‘গরিবের এসি ঘর’। ঘরগুলো দেখতে মনোরম। পরিবেশবান্ধব ঘর বলে অনেকে বিমুগ্ধও হন। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন মাটির ঘরের কদর এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। সচরাচর এখন আর মাটির ঘর চোখে পড়ে না। ঐতিহ্যের এই অংশটি এখনও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছু জায়গায়।

জানা গেছে, গত পাঁচ থেকে ছয় দশক আগেও দেশে মাটির ঘরের প্রচলন ছিল হরহামেশা। গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অধিকাংশ মানুষ নির্মাণ করতেন মাটির ঘর। সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সাদিপুর ও জামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বাড়িতে দেখা যেত এমন মাটির ঘর। বিশেষে করে উপজেলা, কাহেনা, বেলাবো, আমবাগ, শিংলাবো, সাদিপুরকোনাবাড়ী, পেরাবো, বস্তল, বাগুড়ী, নানাখী, সুখেরটেক, মহজুমপুর, পাকুন্দা, আলমপুরা, মালছ, গুলনগর, আমগাঁও, উঠমাসহ বিভিন্ন গ্রামে ছিল মাটির ঘর। ওইসব গ্রামের হাতেগোনা কিছু বাড়িতে এখন মাটির ঘর থাকলেও অধিকাংশ বাড়িতে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা ও সেমিপাকা ঘর। জনশ্রুতি আছে, ‘মাটির ঘর গরিবের বালাখানা’।

এলাকাবাসী জানান, উত্তর অঞ্চলের জামপুর ও সাদিপুর ইউনিয়নে লাল মাটি ও এঁটেল মাটি দিয়ে মাটির ঘর বানানো হতো। লাল ও এঁটেল মাটি ভিজিয়ে প্রথমে প্যাক করা হতো। সেই প্যাক দিয়ে তৈরি হতো ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল। প্রতিবার দুই-তিন ফুট উঁচু দেয়াল করে তা পাঁচ-ছয় দিন রোদে শুকানো হতো। এভাবে পর্যায়ক্রমে ১০-১২ ফুট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করা হতো। পরে দেয়ালের ওপর টিনের চালা বা ছন দিয়ে ছাউনি করা হতো। প্রতিটি ঘর নির্মাণে সময় লাগত দুই-তিন মাস। বিশেষ প্রক্রিয়ায় ঘরের ভিতরের দিকে ধানের তুষ দিয়ে দেয়ালের ওপর প্রলেপ দেওয়া হতো। বাইরের দিকে দেওয়া হতো চুনের প্রলেপ। বন্যা বা ভূমিকম্প না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকত। এই মাটির ঘর ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে এর স্থায়িত্ব শতবছরও হতে পারে বলে জানিয়েছেন মাটির ঘর ব্যবহারকারীরা।

স্থানীয় নানাখী গ্রামের মিয়াজ উদ্দিন বলেন, জন্মসূত্রে মাটির তৈরির ঘর পেয়েছি। বাপ-দাদা পূর্ব পুরুষও জীবন কাটিয়ে গেছেন। তাইতো এখনও পূর্ব পুরুষের রেওয়াজ অনুযায়ী ভাঙেনি মাটির ঘর। ভাঙতে চান না কেউ কেউ।

সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসন ভূইয়া বলেন, উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের প্রত্যেক গ্রামে মাটির ঘর ছিল। ইট-পাথরের তৈরি পাকা দালানের সংখ্যা ছিল গ্রামে হাতেগোনা। সেই দিন বদলে গেছে। এখন হাতেগোনা দু'একটি মাটির ঘর দেখা যায়। অধিকাংশ বাড়ি এখন ইট পাথরের তৈরি।



লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন,এক সময় মাটির ঘরের কথা ইতিহাস হয়ে থাকবে, স্মৃতি খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর হয়ে যাবে। বাংলাদেশ লোক-কারুশিল্প কারুপল্লীতে হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারক-বাহক মাটির ঘর এখনও টিকে আছে। তবে সাধারণভাবে গ্রাম-বাংলা থেকে মাটির ঘর প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews