রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান ও ফুটপাতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়, যা ছিল সন্ধ্যার পরেও। দিনভর ক্রেতা চাপ সামলে ক্লান্ত হলেওবিক্রয়কর্মীরা শেষের বিক্রির আশায় সারা রাতই অধিকাংশ দোকান খোলা রাখবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিন বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, চাদনি চক, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুরের বিভিন্ন মার্কেট ও রাজধানী সুপার মার্কেটসহ পুরান ঢাকার কয়েকটি বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, জমজমাটা কেনাবেচা চলছে।

রাজধানীর অন্যান্য সড়কের তুলনায় মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপও বেশি দেখা গেছে।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্রেতাদের মধ্যে অধিকাংশই ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা। এর বাইরে পেশাগত বা অন্য কারণে যারা ঢাকায় ঈদ করছেন, তাদের অনেকেও শেষ বেলায় কেনাকাটা সেরেছেন।

জুয়েলারি, প্রসাধনী, জুতা, পাঞ্জাবি আর ওড়নার দোকানে ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি।

মার্কেটের তুলনায় ফুটপাতে ভিড় ছিল আরও বেশি।নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনি চক আর রাজধানী সুপার মার্কেট এলাকার ফুটপাতে দিনভরই রমরমা বিকিকিনি চলেছে। এসব এলাকায় ফুটপাতে কেনাবেচা নিষিদ্ধ থাকলেও বিক্রেতাদের বাধা দেননি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীল সদস্যরা।

ফুটপাতে হাকডাক দিয়ে ১০ থেকে ৫০ টাকায় লিপস্টিক, কাজল, লিপ লাইনার, আংটি, কানের দুল, ব্রোচ আর ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ, ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় মেয়েদের ওয়ান পিস ড্রেস, পাঞ্জাবি বিক্রি করতে দেখা গেছে।

গাউছিয়া মার্কেটের ফুটপাতের বিক্রেতা আনসার বলেন, “সারাদিনই বিক্রির উপর আছি। শেষ সময়ে দেখে চলে যায় না কেউ, দাম একটু কম পেলেই নিয়ে নেয়।”

চিশতিয়া মার্কেটের ‘তাইফা ওড়না হাউজ’-এ হিজাব কিনতে আসা সোনিয়া বলেন, “কিনবো কিনবো করে আর কেনা হয়নি। কিচ্ছু তো করার নাই ভিড়ের মধ্যেই কেনাকাটা করতে হচ্ছে।”

নিউ মার্কেটের সামনের বলাকা ভবনের ‘প্রগতি সু হাউজে’ দেখা গেল উপচেপড়া ভিড়। ওই দোকানের মালিক দিদার বলেন, “ফুটপাতটা ওপেন হওয়ার পর থেকে আমাদের ক্রেতা অনেক বেড়েছে। আজ বিক্রি হচ্ছে অনেক। গত এক সপ্তাহে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি। আজ সারা রাত দোকান খোলা রাখব।”

সায়েন্স ল্যাবরেটরি আর এলিফ্যান্ট রোডের জুতা ও পাঞ্জাবির দোকানেও ছিল বেশ ভিড়।

সেখানে পাঞ্জাবি কিনতে আসা শফিউল আলম বলেন, “বাবার পাঞ্জাবিটা কেনা হয়নি। আসলে বাসার কাছেই তো সব দোকান, তাই আসি আসি করেও আসা হয়নি। আজ তাই কেনাকাটা করতে আসলাম।”

এলিফ্যান্ট রোডে জুতার ব্র্যান্ড ‘লেদার এক্স’ এর শোর-রুমের ব্যবস্থাপক কুরবান বলেন, “অনেক ক্রেতা আসছে। তারা তো পারলে সেহেরির সময়ও চলে আসে। আজ বিক্রি অনেক বেশি হচ্ছে। রাত ২টা পর্যন্ত শো-রুম খোলা রাখব।”

ইস্টার্ন মল্লিকার ‘রুম্পা কসমেটিকস’র বিক্রয়কর্মী হাসিব বলেন, “জুয়েলারি আর কসমেটিকস, মেহেদীগুলো এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে। আজ বিক্রিটা ভালো।”

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ ও জুতার দোকানগুলোতে শেষ মুহূর্তে পছন্দের পণ্য কিনতে আসা ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে বেগ পেতে হয়েছে বিক্রয়কর্মীদেরও।

তবে শেষ দিকে ক্রেতা এলেও শুরুর ধাক্কা পুরো কাটিয়ে ওঠতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ‘রামিম ফ্যাশন’র কর্ণধার দেলোয়ার হোসেন রনি।

তিনি বলেন, “মার্কেট ভরা ক্রেতায়, কিন্তু ঘুরতে আসে তাদের অনেকেই।এখন ক্রেতা আসছে, বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এবার ৬০ শতাংশ বিক্রি হয়েছে গতবারের তুলনায়।”

বসুন্ধরায় কেনাকাটা করা মগবাজারের বাসিন্দা ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “এ সময়টায় রাস্তা-ঘাট ফাঁকা থাকে, তাই শপিং করতে ভালো লাগে। তবে ভিড়টা তো বেশি থাকে।”

লালবাগের বাসিন্দা রাশিদুল ইসলাম বলেন, “এতদিন তো রাস্তাঘাটে জ্যাম ছিল, আমরাও ব্যস্ত ছিলাম। এখন কেনাকাটা করতে আসছি।”

রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাতে মেয়েদের পোশাক বিক্রেতা সালমান বলেন, “এখন তো সব পুরান ঢাকার লোকজন আসতেছে। কম দামে ভালোই বিক্রি করতেছি।”

ওই মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা নাসরীন নাহার বলেন, “এবার ঢাকাতেই ঈদ করতে হবে। তাই একটু দেরিতেই কেনাকাটায় বের হলাম।”

এদিকে মিরপুর, গুলশান আর বনানীর বিপণিবিতানগুলোতে তুলনামূলক কম ভিড় দেখা যায়।

গুলশানের পিংক সিটিতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেলেও বিক্রিতে সন্তুষ্ট নয় দোকানিরা। তারা বলছেন, মাস শেষের হিসেবে গতবারের চেয়ে এবার কম বিক্রি হয়েছে।

মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরের রঙধনু শপিং কমপ্লেক্সের ‘নাবিলাস ওয়ার্ল্ড’ এর বিক্রয়কর্মী লিমা জানান, এক সপ্তাহের বিক্রি তাদের ভালো হলেও তা আশাব্যঞ্জক নয়।

“শেষের দিকে বিক্রি বেশি হলেও পুরো মাসের হিসাব করলে তা খুব বেশি না।”

বিপণিবিতানগুলোর পাশাপাশি দর্জি পাড়ায়ও ছিল ব্যস্ততা। রোজার প্রথম দিকে দর্জিরা তেমন সাড়া না পেলেও শেষের দিকে এসে অর্ডার পেয়েছেন বেশ।

ইস্টার্ন মল্লিকার তিনা লেডিজ টেইলার্সের কাটিং মাস্টার সেন্টু বলেন, সব কাজ এখনো শেষ হয়নি তার।

“কয়েকজন কাস্টমারের পোশাক এখনো বানানো শেষ হয়নি। তাই তাদেরটা বাসায় দিয়ে আসব সকালে গিয়ে।”

রঙধনু শপিং কমপ্লেক্সের ‘রবি ফ্যাশনের’ কাটিং মাস্টার বিল্লাল বলেন, “পোশাক বানানোর বেশ চাপ আজ, যদি রাতের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারি, তাহলে সকালে কাস্টমারের বাসায় পৌঁছে দেব।”



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews